গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার স্থাপনে গড়িমসি

2

মুশফিক হোসাইন

বাংলাদেশে গ্যাসের চাহিদা প্রতিদিন বাড়ার পরও সুষ্ঠুগ্যাস ব্যবস্থাপনা ও উন্নত প্রযুক্তির প্রি-পেইড মিটার স্থাপনে গড়িমসির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গ্যাসের অপচয় রোধে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার। সরকার ২০১৬ সালে এ জন্য একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করে। যার আওতায় চট্টগ্রাম মহানগরীতে মাত্র ৬০ হাজার গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনা হয়। এই প্রি-পেইড মিটার সংযোগের ফলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকেরা দারুণভাবে উপকৃত হয়। যে কারণে নগরের হাজার হাজার গ্যাস গ্রাহক কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানিতে প্রি-পেইড মিটারের জন্য ধর্না দিতে থাকেন। প্রসঙ্গ উল্লেখ্য যে, আমাদের দেশের অধিকাংশ গ্রাহক একটি দিয়াশলাই কাঠি বাঁচানো বা ভেজা কাপড় শুকানোর অজুহাতে সারা দিনমান গ্যাসের চুলা জ¦ালানোর প্রবণতা লক্ষণীয়। এভাবে আমাদের জাতীয় সম্পদ ও আমদানিকৃত গ্যাস অপচয় করা মানে রীতিমতো পাপ কাজ। এ বোধটুকু আমাদের নাগরিকদের মনে ও মাথায় কবে আসবে আল্লাহ জানেন। আরও দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সমুদ্র জয়ের ঘটনা প্রায় আট থেকে নয় বছর হয়ে গেল আমাদের সমুদ্র সীমা প্রায় দুইশত মাইল বৃদ্ধি পেল। এরি মধ্যে প্রতিবেশি মায়ানমার আমাদের সমুদ্রসীমার কাছ থেকে গত কয়বছরে কূপ খনন করে গ্যাস ও তেল উত্তোলন করছে। অথচ বাংলাদেশ পারেনি। কোন কায়েমি স্বার্থবাদীদের স্বার্থ রক্ষায় একটি স্বাধীন দেশ, যার সরকার বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বে তারা কেন গ্যাস কূপ খননে ব্যর্থ।
বিষ্ময়ের প্রশ্ন হলো তারা কেন কূপ খনন করতে পারলো না। কল্পনা করলে আশ্চর্য হয়ে যাই। এমন তরো ব্যর্থতা কিভাবে সম্ভব। সমুদ্র জয় করে আমরা খুব নাচানাচি করলাম। কিন্তু আসল কাজ কেন করতে পারলাম না তার হিসাব আমি কোনমতে মেলাতে পারছি না। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় গ্যাস উত্তোলনের জন্য উত্তর কোরিয়ার একটি দল বঙ্গোপসাগরে গেলে তাদের নাকি মায়ানমার নৌবাহিনীর হুমকির মুখে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। জানি না ঘটনার সত্য মিথ্যা কতদূর। তবে যদি বাস্তবে তা হয়ে থাকে তবে আমাদের দেশের সেনা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেন আপত্তি জানালো না ? বোধগম্য হচ্ছে না। আমাদের সার্বভৌমত্ব কতটুকু নিরাপদ। অতএব নিরাপত্তার বিষয়ে ভাবতে হবে।
গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ অবশেষে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি চট্টগ্রাম নগর ও শহরতলীতে একলাখ প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের অনুমোদন নিয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে প্রায় ২৪২ কোটি টাকার এই প্রকল্পের টেন্ডার আহŸান করা হবে। গ্যাস কর্তৃপক্ষ আশা করছে আগামী কয়েকমাসের মধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রি-পেইড মিটার কাজ সম্পন্ন হবে। জানা যায় গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নিজস্ব তহবিল থেকে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। বর্তমানে কেজিডিসিএল এর আবাসিক গ্রাহক ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৫ জন। তার মধ্যে মাত্র ৬০ হাজার জন প্রি-পেইড মিটার ব্যবস্থায় যুক্ত। এই সুযোগে এক ধরনের গ্যাস ব্যবহারকারীরা কোটি কোটি টাকার গ্যাস অপচয় করছে। সরকার আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে চলছেন। যে কারণে সচেতন ও নিরীহ গ্যাস ব্যবহারকারীরা অহেতুক কোটি কোটি টাকা গুনতে বাধ্য হচ্ছেন।
গ্যাস অপচয় রোধ করার জন্য ২০১৬ সালে পাইলট প্রকল্প হিসাবে মহানগরীতে ৬০ হাজার প্রি-পেইড মিটার সংযুক্ত করা হয়। যার সুফল গ্যাস ব্যবহারকারী এবং সরকার ভোগ করছেন। ফলে গ্রাহকের মধ্যে প্রি-পেইড মিটারের কদর বেড়ে যায়। নগরের গ্যাস ব্যবহারকারীরগণ প্রি-পেইড মিটারের জন্য গ্যাস অফিসে প্রতিদিন ধর্না দিতে দেখা যায়।
দুঃখের বিষয় দেশ ও জাতির জন্য লাভ জনক এই প্রি-পেইড মিটার প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমোদন নিতে গ্যাস কোম্পানির দীর্ঘ পাঁচ বছর সময় লেগে যায়। জনহিতকর প্রকল্প বাস্তবায়নে গ্যাস কোম্পানি ও সরকারের নীতি নির্ধারকদের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে এতো দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন কেন হলো ? এভাবে যদি জনহিতকর প্রকল্পসমূহ লাল ফিতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ঘুরপ্যাঁচ খেতে থাকে তা হলে দেশের উন্নয়নের বারোটা তো বাজবেই। তাই সরকার ও নীতিনির্ধারকদের অনুধাবন করতে হবে কোনটি জনহিতকর প্রকল্প। জনগণের কল্যাণের বিষয়টিগুরুত্ব সহকারে সকল পক্ষের বিবেচনা করতে হবে। আধুনিক রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য হল জনকল্যাণ। অন্যথায় সরকার সমস্যায় পড়বে অবশাম্ভাবী।
তাই নগরবাসীর জোরদাবি আর কালবিলম্ব না করে অনতিবিলম্বে চট্টগ্রামের প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হোক। চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ প্রি-পেইড মিটার স্থাপনে গড়িমসি বরদাস্ত করবে না। ইতিমধ্যে পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে।

লেখক : কবি, নিসর্গী ও ব্যাংক নির্বাহী (অব)