গুপ্তধনের লোভ দেখিয়ে ২৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

3

রাঙামাটি প্রতিনিধি

কাপ্তাই উপজেলার প্রশান্তি সংলগ্ন এলাকার বালুছড়া এলাকার মো. সোহেল রানা ওরফে সোহেল গুপ্তধন স্বর্ণালংকারের লোভ দেখিয়ে ২৪ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা বলেন, এই প্রতারক সোহেল রানা প্রথমে কারও সাথে পরিচয় হলে যদি মুসলিম হয় তাহলে মুসলামনের ধর্মীয় বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে কথা আর হিন্দু হলে হিন্দু ধর্মের দোহাই দিয়ে কথা বলে মানুষকে কাবু করে ফাঁন্দে ফেলায়। ধীরে ধীরে তার প্রতারণার সীমায় ঢুকিয়ে পরে গুপ্ত সোনা গয়নার লোভে ফেলে হাতিয়ে নেয় লক্ষ লক্ষ টাকা। এমনই ঘটনা ঘটেছে কাপ্তাই নতুন বাজার এলাকার জাহানারা বেগমের সাথে।
ভুক্তভোগী জাহানারা বেগম বলেন, সোহেল রানা ও তার স্ত্রী সুফিয়া বেগমের সাথে ৮বছর পূর্বে পরিচয়ের সূত্র ধরে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় উপদেশমূলক কথাবার্তা বলে আমার সাথে মায়ের মত সম্পর্ক গড়ে তুলে। প্রায় সময় আমার বাড়িতে আসা যাওয়া করে আমরাও তার বাড়িতে যাই। এক পর্যায়ে ৭টি স্বর্ণের হাড়ি দেবে বলে বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে কয়েক ধাপে ৮লক্ষ টাকা গ্রহণ করে গুপ্তধন দিব দিচ্ছি কালক্ষেপণ করায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি কাপ্তাই থানায় অভিযোগ দাখিল করি। কিন্তু অভিযোগের ১৫-১৮ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও আইনী কোন সহযোগিতা পাচ্ছি না।
এভাবে প্রতারণা করে কাপ্তাই নতুন বাজার হতে জনৈক তরুণ কুমার দে হতে ৬ লক্ষ টাকা শয়ন দাশ থেকে ৫লক্ষ টাকা, জাহানারা বেগম হতে ৮লক্ষ টাকা, মো. রাজুমিয়া থেকে ৩ লক্ষ টাকা, কালাছোগা তঞ্চঙ্গা থেকে ২লক্ষ ২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কাপ্তাই নতুন বাজার এলাকা হতে সর্বমোট ২৪লক্ষ ২৫ হাজার হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক সোহেল রানা।
অভিযোগকারী তরুণ কুমার দে বলেন, আমার দোকান থেকে কিছু টাকা চুরি হয়ে গেছে তখন আমি সোহেলের কাছে যাই। সে আমার কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা নেন। টাকা নিয়ে বলে ৩-৫ দিনের মধ্যে আপনার টাকা আপনার ঘরে এসে দিয়ে যাবে। ৫দিন পরে সোহেলকে ফোন দিলে বলেন ঘরে আসেন। সোহেলের ঘরে গেলে সে বলে ভাই এই সামান্য টাকার জন্য এগুলো করে লাভ কি । আপনার ভাগ্যে অনেক কিছু আছে। আপনার ছোট মেয়ের নামে কোটি কোটি টাকা আছে আপনি ১০টা বস্তা নিয়ে আসবেন। পরে একদিন আমি কোটি টাকা আনার জন্য ১০টি বস্তাও নিয়ে যাই। পরে আমি জানতে পারি সোহেল রানা তন্দ্র মন্ত্র করে বহু মানুষকে ঠকিয়েছে।
মো. রাজু বলেন, বহুদিন ধরে গাড়ি চালাই। এই সূত্র ধরে সোহেল এর সাথে পরিচয়। এক দিন সোহেল আমাকে বলে ভাই আমি তো আল্লাহ দান স্বর্ণের কলসি পেয়েছি। তবে এই গায়েবি ধন স্বর্ণের কলসি খেতে হলে ২জন মুসলিম ও ২জন হিন্দু লোক মিলে টাকা পয়সা খরচ করে এ স্বর্ণের কলসি খেতে হবে। সে আমাকে দিয়ে ভুয়া ব্যাংক একাউন্ট ও ভুয়া ক্রেডিট কার্ড বানিয়েছে। ওই ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নাকি ওই স্বর্ণ বিক্রির টাকা তুলতে হবে। এছাড়া সে আমার কাছ থেকে ২লক্ষ টাকার চেক নিয়েছে। আমি এই প্রতারকের সুষ্ঠু বিচার চাই।
স্থানীয়রা বলেন, সোহেল রানা ও তার স্ত্রী সুফিয়া বেগম তেমন সুবিধাজনক লোক নহে। তারা সমাজের কারও সাথে কোন সম্পর্ক নাই। তারা মুক্তিযোদ্ধা বাবা ও এক সেনাবাহিনীর কর্মকর্তার প্রভাব দেখায়। কেউ কিছু বললে বিভিন্ন হুমকি ধমকি দেয়। তারা স্বামী ও স্ত্রী মিলে এলাকায় গুপ্তধন, স্বর্ণালংকার পাই দেবে বলে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেয়। এছাড়াও বনবিভাগের জায়গা দখলকরে দীর্ঘ দিন বসবাস করে আসছে। কেউ কিছু বললে সোহেলের স্ত্রী সুফিয়া বেগম মুক্তিযোদ্ধার পরিবার পরিচয় দিয়ে মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করে।
অভিযুক্ত সোহেল রানা ও তার স্ত্রী সুফিয়া বেগম বলেন, রাজু, শয়ন, জাহানারা ও তরুণ কুমার দে যে সকল কথাবার্তা বলছে তার কোন সত্যতা ও প্রমাণ নাই। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভুয়া। তারা আমার পরিবারের মানসম্মানহানি করতে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। যে খাস জমিতে থাকি এ জমি দখল করতে তারা এসব কর্মকান্ড করে যাচ্ছে।
কাপ্তাই থানার এসআই মো. হাবিবুর রহমান বলেন, জাহানারা বাদি হয়ে সোহেলের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দিয়েছে তা তদন্তাধীন রয়েছে। ইতিমধ্যে দু’পক্ষকে থানায় ডেকেছি। তারা আসবে বলছে কিন্তু হয়তো বা রোজার কারনে আসতে দেরি হচ্ছে। তবে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবো।