গণপরিবহণে ভাড়া নৈরাজ্যের শেষ কোথায়?

31

করোকালে ১ জুন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও অর্ধেক যাত্রী পরিবহন সহ ১১ টি শর্তে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে গণপরিবহন চালুর অনুমতি দেয় সরকার। শুরুতে কিছুটা নিয়ম মানলেও কিছুদিনপর গণপরিবহন সেই বিশৃঙ্খল ও হ-য-ব-র-ল অবস্থায় ফিরে আসে। যত দোষ নন্দ ঘোষের মত বরাবরই যাত্রীরা হয়রাণী ও আর্থিক ক্ষতির শিকার। ৬০ শতাংশের কথা বলে দ্বিগুণ ভাড়ায় দ্বিগুণ যাত্রী পরিবহণ করেও কোন স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানেনি। এমনিতে গণপরিবহন সরকার নির্দেশিত ভাড়ার চেয়ে বেশী ভাড়া আদায় করে। সেখানে করোনাকালে বাড়তি ভাড়া মানুষের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়ায়। গণপরিবহন শ্রমিক,মালিকের কাছে জিম্মি সাধারণ মানুষ। আর মালিক শ্রমিকেরা জিম্মি কথিত মালিক শ্রমিক নেতাদের কাছে। যানবাহন সড়কে নামলেই পাঁচ থেকে পনেরশ টাকা চাঁদা গুণতে হয়। ফলে করোনাকালেও বেপরোয়া গণপরিবহণ শ্রমিক বেশী ভাড়া আদায় করেছে।
সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠনের দাবির মুখে ১ সেপ্টেম্বর থেকে গণপরিবহন ফিরেছে আগের ভাড়ায়। তবে শংকার কথা হল পরিবহন শ্রমিকেরা কি বেশী ভাড়া আদায় বন্ধ করবে? নাকি ভাড়া নিয়ে তর্কের জেরে আবারো যাত্রীকে বাস থেকে ছুঁড়ে মেরে চাকায় পিষে মারবে?।গণপরিবহণে বেশী ভাড়া আদায় নিয়ে পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রী তর্ক, হাতাহাতি লেগে থাকে।এমনকি যাত্রীকে গাড়ি থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে পিষে মারার ঘটনাও ঘটেছে । এদেশের গণপরিবহনের ভাড়া মূলত আগের জামানার রাজা বাদশার মুখের আইনের মত। চালক হেলপারের মূখের কথায় ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় হয়। তারা যাত্রীদের নানাভাবে জিম্মি করে বেশী ভাড়া আদায় করেন। বেশী ভাড়া নিয়ে তর্ক করলে যাত্রীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়।নানা ধরনের নাজেহাল অথবা দলবেঁধে মারধর করেন। গণপরিবহণ ভাড়া শেয়ার বাজারের মত দিনে কয়েকবার উঠানামা করে। সকাল ও সন্ধ্যা অফিস খোলা ও ছুটির সময় হুট করে ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হয়। সন্ধ্যার পর থেকে ভাড়ার হার কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বৃহস্পতিবার গ্রামমুখী ও শুক্রবার শহরমুখী মানুষকে জিম্মি করে কয়েকগুণ বেশী ভাড়া আদায় করেন।
উত্তর চট্টগ্রাম ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ কয়েকগুণ ভাড়া বেশী দিয়েও রীতিমত যুদ্ধ করে গ্রাম ও শহরে যাতায়াত করেন। মাঝেমধ্যে মধ্যে বিআরটিএ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ অভিযান চালালেও তা অপ্রতুল। মূলত গণপরিবহনখাতে পরিবর্তন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে কখনো সঠিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। বরাবরই পেশীশক্তি নির্ভর গণপরিবহনের নাগাম টেনে ধরা যায়নি।
ডিজিটাল বাংলাদেশে এখন রিকশাওয়ালা বিকাশে পরিবারের সদস্যদের কাছে টাকা পাঠায়, ভিডিও কলে কথা বলে। দিন দিন বাড়ছে ই-কমার্স,অনলাইন শপিং, তবে আমাদের গণপরিবহন রয়ে গেছে সেই আদি যুগে। কোন সড়কে কয়টি গাড়ি কখন চলে, কত টাকা ভাড়া আদায় হয় তা মনিটরিংয়ে নেই কোন সংস্থা। এই খাতে লাগেনি কোন ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া। অথচ ভাড়ার টিকেট থেকে শুরু করে পুরো খাতকে ডিজিটাল করে সহজে নিয়ন্ত্রণ করে যাত্রী হয়রানী রোধ করা সম্ভব। কিন্তু সেটাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কথিত চাঁদাবাজ মালিক, শ্রমিক নেতা ।গণপরিবহণে ভাড়া নৈরাজ্য সহ বিশৃঙ্খলা দূর করতে হলে এখাতকে সংস্কার করে সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।সব বাধা দূর করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে? তবেই দূর হবে ভাড়া নৈরাজ্য।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী