কোরবানির পশু গত বছরের দামেই বিক্রি হবে চামড়া

53

গতবছরের দামেই বিক্রি হবে কোরবানির পশুর চামড়া। ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪৫-৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫-৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া খাসির চামড়া ১৮-২০ টাকা ও বকরির ১৩-১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে চামড়া ব্যবসায়ীদের বৈঠকে এ দাম নির্ধারণ করা হয়।
দিন দিন আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়াজাত পণ্যের দাম বাড়লেও দেশীয় বাজারে কমছে চামড়ার মূল্য। তাছাড়া চামড়ার বাজারও সংকুচিত হচ্ছে। অথচ এখনো কাঁচা চামড়াকে রপ্তানিপণ্যের মধ্যে তৃতীয় হিসেবে ধরা হয়। চামড়ার দাম ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়াতে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে চামড়ার দাম কমার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অসহায় ও গরীবরা। কারণ চামড়ার টাকা হতদরিদ্রদের হাতেই যায়।
চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সাবেক সভাপতি ও উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান মুসলিম উদ্দিন বলেন, কেমিক্যাল ও লবণের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে চামড়ার দাম কমছে। দাম কমাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গরীবরা। আগে মাদরাসা ও এতিমখানাগুলো কিছু টাকা পেত, সেটা এখন তেমনটা নেই।
তিনি বলেন, গতবারের মতো এবারও সরকার লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। লবণ ছাড়া সেটা ২২ থেকে ২৫ টাকার বেশি হবে না। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা না বুঝে চামড়া কেনেন। অনেকে লবণযুক্ত চামড়ার দাম হিসেব করে লবণছাড়া চামড়া কিনেন। এতে করে তারা ঠকেন।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৩ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে কমছে চামড়ার দাম। ২০১৮ সালে সেটা অর্ধেকে নেমে আসে। চলতিবছরই আগের জায়গাতেই স্থির আছে চামড়ার দাম। ২০১৩ সালে সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ছিলো ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। আর ঢাকার বাইরে তা ছিলো ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। সারাদেশে প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। ২০১৪ ঢাকায় প্রতি ফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ৭০ তেকে ৭৫ টাকা দাম নির্ধারিত হয়। ঢাকার বাইরে এ দর ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত মহিষের চামড়ার দাম ছিল ৩৫-৪০ ও খাসির ৩০-৩৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ছিল ২৫-৩০ টাকা। ২০১৫ সালে চামড়ার দাম আরও কমে যায়। ২০১৫ সালে ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ ও ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া প্রতি বর্গফুট মহিষের লবণযুক্ত চামড়ার দর ৩৫-৪০ টাকা, খাসির চামড়া ২০ থেকে ২২ টাকা ও বকরির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা। ২০১৬ সালে গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার প্রতি বর্গফুটের সর্বনিম্ন দাম ছিল ৫০ টাকা। খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২০ ও বকরির চামড়া ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ২০১৭ সালে গরুর চামড়া ঢাকায় প্রতি বর্গফুট দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫০ থেকে ৫৫ ও ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। খাসির চামড়ার মূল্য সারাদেশে প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২২ ও বকরির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে এর দাম ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ইসলামিক রীতি অনুযায়ী কোরবানি দেয়া ব্যক্তি বা পরিবার পশুর চামড়ার টাকা ভোগ করতে পারে না। পশুর চামড়ার হকদার গরীব ও অসহায়রা। ফলে পক্ষান্তরে চামড়ার দাম কমায় ক্ষতিগ্রস্ত হন অসহায়রা।