কুতুপালং ক্যাম্পে ম্যানেজমেন্ট কমিটির নির্বাচন দাবি

52

উখিয়ার কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড রোহিঙ্গাদের সংগঠন ক্যাম্প ম্যানেজমেন্ট কমিটির (সিএমসি) মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার ১ বছর পার হয়ে গেলেও এখনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় সাধারণ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে চাপা ক্ষোভের পাশাপাশি মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, বিগত ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে তৎকালীন ক্যাম্প ইনচার্জ মো. মাহমুদুল হক সাধারণ শরণার্থীদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়েই ব্যালট পেপারের মাধ্যমে সরাসরি ভোটের আয়োজন সম্পন্ন করেন। আসন্ন সিএমসির নির্বাচনটি যাতে এ ধরনের ব্যালটের মাধ্যমে সরাসরি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় এমনটাই প্রত্যাশা করছেন শরণার্থীদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শরণার্থী জানান, সরাসরি ব্যালট পেপারের মাধ্যমে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চান। এতে কোন কারচুপির আশংকা বা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখার সুযোগ থাকবে না। কারণ মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সদস্যরা নিজেদের ক্যাম্পের নেতা পরিচয় দিয়ে বেপরোয়াভাবে সাধারণ রোহিঙ্গাদের নিকট থেকে চাঁদা দাবিসহ নানা হয়রানি করে আসছে।
ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ক্যাম্প প্রশাসন ও ইউএনএইচসিআর সহযোগিতায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে ক্যাম্প ম্যানেজমেন্ট কমিটি (সিএমসি) নামের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া, অভাব-অভিযোগসহ নানা সমস্যা দেখভাল করতেই সিএমসি নামের এ ক্যাম্প কমিটির আত্নপ্রকাশ হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ক্যাম্প ম্যানেজমেন্ট কমিটির নির্বাচন প্রতি দু’বছর পর পর হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমান সিএমসি কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে ১ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো ক্যাম্প প্রশাসন কর্তৃক নুতন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন না করায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়াও বর্তমান সিএমসি মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নেতৃবৃন্দ ও সদস্যদের বিরুদ্ধে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখাসহ ইলেকশন না দিয়ে সিলেকশনের মাধ্যমে আবারো ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার চক্রান্তে লিপ্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মেয়াদ শেষ হয়ে এক বছর পার হয়ে গেলেও বর্তমান কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অপরাপর সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে রোহিঙ্গাদের স্বার্থপরিপন্থি কার্যকলাপে জড়িত থাকার অনেক অভিযোগ উঠেছে।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে সিএমসির এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ অপরাপর সদস্যরা যোগসাজশ করে নানা অজুহাতে নির্বাচন বানচাল করতে তৎপর থাকে। এমনকি ক্ষমতাকে একতরফাভাবে কুক্ষিগত করে রাখার চেষ্টা চালিয়ে আসছে বলে সাধারণ রেজিস্ট্রার শরণার্থীদের অভিযোগে জানা গেছে। তাছাড়াও সাধারণ শরণার্থীদের মতামত উপেক্ষা করে সিলেকশনের মাধ্যমে গোপনে পকেট কমিটি গঠন করার একটা হীনচক্রান্ত চালাচ্ছে বলে বর্তমান কমিটির সদস্য নুর কামাল, হোছন আহমদ, সাইফুল, ছৈদুল আমিন, ছকিনা, আব্দুল কাদের লিয়াকত আলী, নচু বেগম, ফাতেমা বেগম, তৈয়বা খাতুন, ই বøকের হাসিনা বেগমসহ প্রায় শতাধিক রোহিঙ্গা অভিযোগ করে জানান।
বর্তমান কমিটির সভাপতি আব্দুর রহিম ও সাধারণ সম্পাদক কেফায়াত উল্লাহ রোহিঙ্গাদের স্বার্থবিরোধী নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে হাসিনা, লিয়াকত আলী অভিযোগ করে জানিয়েছেন। এছাড়াও আগামী নির্বাচনটি যাতে করে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু, সুন্দর পরিবেশে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটের আয়োজন করার জন্য ইউএনএইচসিআর সহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা ও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শরণার্থীগণ।
এ প্রসঙ্গে ক্যাম্প ম্যানজমেন্ট কমিটির সভাপতি আব্দুর রহিম ও সাধারণ সম্পাদক কেফায়াত উল্লাহর সাথে অভিযোগের সত্যতার বিষয়ে জানার জন্য একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ মো. রেজাউল করিমের নিকট জানতে চাওয়া হলে ইউএনএইচসিআরের সহযোগিতায় ক্যাম্প ম্যানেজমেন্ট কমিটির বা (সিএমসি) এর নির্বাচনটি দ্রুত সরাসরি ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সম্পন্ন করার ক্যাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।