কর্ণফুলী টানেল : আরো ৬ মাস সময় চেয়েছে কর্তৃপক্ষ

67

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের প্রথম ‘ডুয়েল টু লেন’ টাইপের টানেল হচ্ছে কর্ণফুলী টানেল বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। ‘শিল্ড ড্রাইভেন মেথড’ পদ্ধতিতে নির্মিত হতে যাওয়া টানেলটির নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ হওয়ার কথা বলে আসছিলো সেতু কর্তৃপক্ষ। তবে এবার টানেল নির্মাণে অতিরিক্ত ৬ মাস সময় চাওয়া হয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত প্রথম টানেলের বাস্তবায়ন সময় পেছাচ্ছে।
বর্তমান লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বহুল আলোচিত ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। অতিরিক্ত ৬ মাস সময় দির্ঘায়িত হলে এটি বাস্তবায়নের সময় হবে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। দেরিতে কাজ শুরু হওয়া এবং করোনাসহ নিয়মতান্ত্রিক বিলম্বের জন্য অতিরিক্ত এই সময় দাবি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে টানেল প্রকল্পের পরিচালক বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে অতিরিক্ত সময় চেয়েছেন। তবে মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য প্রকল্পের খরচের যোগানদাতা চীনের এক্সিম ব্যাংকের অনুমোদনের প্রয়োজন পড়বে।
কর্ণফুলীর তলদেশে বহু লেন টানেল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, মহামারির কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নির্মাণ কাজ বিঘিœত হয়েছে। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। প্রকল্পের বাকি কাজ সময় মতো শেষ করতে পারবো কিনা সেটা এ মুহূর্তে বলা কঠিন। যদি কাজ শেষ করা সম্ভবও হয় তাহলেও ঠিকাদারের টাকা দেওয়াসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার জন্য অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হবে। তাই নিয়মতান্ত্রিক বিলম্বের জন্য অতিরিক্ত ৬ মাস সময় চাওয়া হয়েছে।
চীনের সাংহাই সিটির আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ কর্ণফুলী টানেল বা বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্প নেয়া হয়। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলেই চট্টগ্রাম মহানগরীর পাশাপাশি নদীর অপর তীরে আনোয়ারা-কর্ণফুলী এলাকায় গড়ে উঠবে আরও একটি নতুন শহর। টানেলকে ঘিরে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। পাশাপাশি এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হবে। ৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মূল টানেলের সঙ্গে পতেঙ্গা এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মিত হচ্ছে। সংযোগ সড়ক ও টানেলের ভেতরের সড়ক হবে সর্বমোট ৪ লেনের। এর মধ্যে ওয়ান ওয়ে একটি টানেলে সড়ক থাকবে দুই লেনের। টানেলের নির্মাণ কাজের দায়িত্বে আছে চায়না কমিউনিকেশন কন্সট্রাকশন কোম্পানি। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র মতে, যেভাবে কাজ এগুচ্ছে তাতে নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ হতে পারে। আবার কিছু কাজের জন্য সময় বেশিও লাগতে পারে। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য চীনের এক্সিম ব্যাংকের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। কারণ এক্সিম ব্যাংক প্রকল্পের সিংহভাগ টাকার যোগান দিচ্ছে। তাই আগে থেকে মেয়াদ বাড়ানোর কথা এসেছে। এখন কর্তৃপক্ষ সময় বৃদ্ধি করতে পারে আবার কিছু রেখে প্রকল্প উদ্বোধনও করে দিতে পারে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মহাসড়ক নেটওয়ার্কের উন্নয়নের উদ্দেশ্যে কর্ণফুলী টানেলের সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা শেষ হয় ২০১৩ সালে। ২০১৪ সালের ১০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বেইজিংয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। পরে ২০১৪ সালের ২২ ডিসেম্বর সিসিসিসির সঙ্গে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের চুক্তি হয়। ২০১৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সিসিসিসি বাণিজ্যিক প্রস্তাব দাখিল করে। বাণিজ্যিক প্রস্তাবের পর কারিগরি দিক পরীক্ষায় দুজন বিদেশি ও একজন দেশি পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)। ২০১৫ সালের ৩০ জুন সিসিসিসির সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে নগরীর কর্ণফুলী নদীর পতেঙ্গা এলাকায়। টানেলের অ্যালাইনমেন্ট ধরা হয়েছে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট থেকে কর্ণফুলী নদীর ২ কিলোমিটার ভাটির দিকে। টানেলের প্রবেশপথ নেভি কলেজের কাছে, বহির্গমন পথ কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ের সিইউএফএল সার কারখানা সংলগ্ন ঘাট। মোট ৯ হাজার ২৬৫ দশমিক ৯৭১ মিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট এ প্রকল্পের মধ্যে টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ৫ মিটার (উভয় পাশের ৪৭৭ মিটার ওপেন কাট ছাড়া)। টানেলে থাকবে ৯২০ মিটার দৈর্ঘ্যরে দুটি ফ্লাইওভার। এর মধ্যে শহর প্রান্তের ‘অ্যাট গ্রেডেড সেকশন’ হবে ৪৬০ মিটারের আর দক্ষিণ প্রান্তের ‘অ্যাট গ্রেড সেকশন’ হবে ৪ হাজার ৪০৩ দশমিক ৯৭১ মিটারের।