করোনা : শনাক্তের হার এক লাফে সাড়ে ৩ শতাংশ ছাড়াল

5

পূর্বদেশ ডেস্ক

দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ফের লাফিয়ে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কারো মৃত্যু না হলেও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। এ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সংক্রমণের হার যদি এভাবে বাড়তে থাকে, তাহলে আবারও হাস পাতালগুলো রোগীতে পূর্ণ হয় আসবে, জায়গা হবে না।
জানা গেছে, সারাদেশে করোনায় আরও ১৬২ জন শনাক্ত হয়েছেন, যা গত সোমবার ছিল ১২৮ জনে। গত ২ জুন দেশে ২২ জন করোনা শনাক্ত হয়েছিল, এরপর টানা ১২ দিন ধরে এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গতকাল ছিল ১ দশমিক ৯১ শতাংশ। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় কারো মৃত্যু হয়নি। ফলে মোট মারা যাওয়ার সংখ্যা ২৯ হাজার ১৩১ জন অপরিবর্তিত থাকল। আর এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৪০৫ জনে। গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনা বিষয়ক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ হাজার ৫৬০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ৪ হাজার ৫৫২টি নমুনা। পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৭৯ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৫ হাজার ৪১৬ জন।
দেশে করোনার প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের ৮ মার্চ। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেই বছর সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছিল ৬৪ জনের।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় গত বছর জুন থেকে রোগীর সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকে। ২৮ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
২০২১ সালের ৭ জুলাই প্রথমবারের মতো দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৫ ও ১০ আগস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যু হয়, যা মহামারির মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এরপর বেশকিছু দিন ২ শতাধিক মৃত্যু হয়।
এরপর গত ১৩ আগস্ট মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ এর নিচে নামা শুরু করে। দীর্ঘদিন শতাধিক থাকার পর গত ২৮ আগস্ট মৃত্যু ১০০ এর নিচে নেমে আসে।
গত ২০ এপ্রিল করোনায় মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর টানা ৩০ দিন করোনায় মৃত্যুশূন্য দিন পার করে বাংলাদেশ। স¤প্রতি করোনায় মৃত্যু না হলেও আক্রান্তের সংখ্যা আগের চেয়ে বাড়ছে।
এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনার সংক্রমণের হার গত মাসেও যেখানে এক শতাংশের নিচে ছিল, সেটি বর্তমানে দুই শতাংশে উঠে গেছে। সংক্রমণ যদি এভাবে বাড়তে থাকে, তাহলে আবারও হাসপাতালগুলো রোগীতে পূর্ণ হয়ে যাবে। জায়গা হবে না। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর মহাখালীর আইসিডিডিআর,বি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশে করোনা বেড়েছে, সেখান থেকে সংক্রমিত হয়ে রোগীরা বাংলাদেশেও ঢুকে পড়ছে। আগে আর্টিফিশিয়াল টেস্টের যে বিষয় ছিল, দেশে আসার ৪৮ ঘণ্টা আগে টেস্ট করে সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে হবে। সেটি তো আমরা এখন করছি না। শুধু ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট দেখছি। যদি অন্যান্য দেশে খুব বেশি সংক্রমণ বেড়ে যায় এবং দেশেও বাড়ে, তাহলে আবার আর্টিফিশিয়াল টেস্ট শুরু করবো।
জাহিদ মালেক বলেন, সংক্রমণ আমরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু দেশে এখন আবার করোনা বাড়ছে। প্রতিদিন যেখানে দৈনিক ৩০-৩৫ জন রোগী শনাক্ত হচ্ছিলেন, এখন সেটি বেড়ে ১৩০-১৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। আশঙ্কা করছি, যদি এ মুহূর্তে পরীক্ষা বাড়ানো হয়, তাহলে সংক্রমণের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, আমাদের জন্য একটি ভালো খবর হলো- প্রায় সব হাসপাতালে এখন ২০ জনের বেশি রোগী নেই। কিন্তু আমরা যেভাবে অসতর্ক হয়ে চলাচল করছি, হাসপাতালে রোগী বাড়তেও সময় লাগবে না। আমাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। আপনারা সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সব কাজকর্ম করবেন, এটি আমরা আশা করবো।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সংক্রমণ প্রতিরোধে আমরা বুস্টার ডোজের ক্যাম্পেইন করেছি। আমরা এখন পর্যন্ত আড়াই কোটি মানুষকে বুস্টার ডোজ দিয়েছি। এখনো অনেক মানুষ বাকি আছেন। যারা দুটি ডোজ নিয়েছেন কিন্তু বুস্টার ডোজ বাকি আছে, তারা দ্রæতই বুস্টার ডোজ নিয়ে নেবেন। তাহলে সুরক্ষিত থাকবেন।