এখন থেকে ২৪ ঘণ্টা সম্প্রচারে

23

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ২৪ ঘণ্টা সম্প্রচারের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় প্রধানমন্ত্রী মানুষের মন ও মননের ইতিবাচক পরিবর্তনে বাংলাদেশ টেলিভিশনের চট্টগ্রাম কেন্দ্র বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
গতকাল বিকেলে নগরীর পাহাড়তলীতে বাংলাদেশ টেলিভিশনের চট্টগ্রাম কেন্দ্রে আয়োজিত রজতজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী ২৪ ঘণ্টার অনুষ্ঠান সম্প্রচারের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ভাষা, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য-কৃষ্টি বিকাশের লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের চট্টগ্রাম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০২০ সালের ২৪ জানুয়ারি এই কেন্দ্রের সম্প্রচার ১২ ঘণ্টা এবং এ বছরের ১০ জানুয়ারি ১৮ ঘণ্টায় উন্নীত করা হয়। রজতজয়ন্তী উপলক্ষে এবার ২৪ ঘণ্টার সম্প্রচার শুরু হলো। সমাজ সংস্কারে টেলিভিশনসহ গণমাধ্যম বিশেষ ভ‚মিকা পালন করে। আমি আশা করব, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও অনুষ্ঠান প্রচারের মধ্য দিয়ে টেলিভিশনের চট্টগ্রাম কেন্দ্র মানুষের মন ও মননের ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে।’ বর্তমান সরকার অবাধ তথ্যপ্রবাহে বিশ্বাস করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনের পাশাপাশি দেশে এখন ৪৫টি বেসরকারি টেলিভিশন, ২৮টি এফএম ও ৩২টি কমিউনিটি রেডিওর সম্প্রচার চলমান আছে। এর বেশিরভাগই আমাদের সরকার অনুমোদন দিয়েছে। আমরা সম্প্রচার নীতিমালা ও অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা করেছি। বর্তমানে দেশের সব টেলিভিশন চ্যানেল বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
তিনি বলেন, উন্নত দেশ গড়ার চলমান প্রয়াসে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রও আমাদের সঙ্গী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’
চট্টগ্রাম কেন্দ্রের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও স¤প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক সোহরাব হাসান এবং চট্টগ্রাম কেন্দ্রের মহাব্যবস্থাপক নিতাই কুমার ভট্টাচার্য।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র কোনো আঞ্চলিক কেন্দ্র নয়। এটা নিয়ে অনেকেই ভুল করেন। জাতীয় টেলিভিশনের দ্বিতীয় টেরিস্ট্রিয়াল চ্যানেল। যার মাধ্যমে কেবল নেটওয়ার্ক ছাড়া সারাদেশের ৭৫ ভাগ অংশে দেখা যায়। আর ক্যাবল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সারাদেশেই সম্প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের কার্যক্রম দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘শিগগিরই আরও ছয়টি বিভাগে বিটিভির চ্যানেল হবে। এ হিসাবে বিটিভির ১০টি চ্যানেল হবে। এরই মধ্যে একনেকে এর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, আগামী এক মাসের মধ্যে এ কাজ শুরু হবে। আমি আশা করব, ২৪ ঘণ্টা সম্প্রচারের উদ্বোধনের মাধ্যমে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র গণমানুষের দর্পণ হিসেবে কাজ করবে। তিনি বলেন, আমার স্বাধীনতা যেন অপরের স্বাধীনতা হরণ না করে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, সংবাদ ভিত্তিক বিটিভির নতুনমাত্রা সুস্থ বিনোদনের পরিবেশ তৈরি করেছে। নীতিমালা হয়েছে, প্রয়োগও হয়েছে। সাংস্কৃতিক কর্মী, শিল্পীদের আয়-উপার্জনের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। যে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে মুখ-থুবড়ে পড়েছিল, সে কেন্দ্র আজ জ্যোতি ছড়াচ্ছে। সংবাদে তেমন বিনিয়োগ করতে হয় না, কিন্তু বিনোদন খাত তৈরিতে বিনিয়োগ করতে হয়। এখন তথ্য মন্ত্রণালয়ের শক্ত হস্তক্ষেপে যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। নওফেল আরও বলেন, বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্র উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীদের বহুমুখি প্রতিভার বিকাশ এবং উপার্জনের পথটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে যাচ্ছে। আমাদের তথ্যমন্ত্রী অবশ্যই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সাহসিকতার সঙ্গে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। আমরা এই টেলিভিশনে চট্টগ্রামের বৈচিত্র, কক্সবাজারের বৈচিত্র ও তিন পার্বত্য জেলার বৈচিত্র দেখতে চাই। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আমাদের নিজস্ব কৃষ্টি-সংস্কৃতি, বৈচিত্রের কথা আমরা গৌরবের সঙ্গে তুলে ধরতে চাই।
সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, একদিন এ টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধুর নাম নেওয়া যেত না। নিষিদ্ধ ছিল জাতির জনকের নাম উচ্চারণ। ইতিহাস থেকে মুছে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। চাইলেই সত্যকে আড়াল করা যায় না। বিপ্লবী সূর্যসেনের লাশ পাওয়া যায়নি কিন্তু ইতিহাসের পাতায় শ্রদ্ধায় স্মরণে বিরাজমান। বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের সেরা বাঙালি। রাজনীতি যার যার বঙ্গবন্ধু সবার। এটাই আমাদের দীক্ষা হওয়া উচিত। হাঁটি হাঁটি পা পা করে চট্টগ্রাম বিটিভি এ পর্যায়ে এসেছে বঙ্গবন্ধুর কন্যার হাতের ছোঁয়ায়। চট্টগ্রামের সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা থাকবেই। আমার আহব্বান থাকবে, আমাদের চট্টগ্রামের ভাষা অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে ভিন্ন, কিন্তু বেশি সমৃদ্ধ। তাই চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্র এই ভাষা সংরক্ষণ ও প্রসারের কেন্দ্র হয়ে উঠুক।