উচ্চমূল্যের কারসাজিতে না থাকলে তারা পালায় কেন

12

অভিযান পরিচালনার সময় দোকান বন্ধ করে ব্যবসায়ীদের চলে যাবার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও মহানগর কমিটি। বাজার তদারকিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের জন্য এসব ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানিয়েছেন তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু ও সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান এই দাবি জানান।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, করোনা পরবর্তী সময় থেকে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যের বাজারে কারসাজি করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এর ফলে দীর্ঘ দুই বছর ধরে চালের বাজার অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা একবার আলু, একবার পেঁয়াজ, একবার ডাল, আটা-ময়দা এভাবে প্রতিটি পণ্যের বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার লোকজন অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধের পরিবর্তে এসমস্ত অসাধু ব্যবসায়ীদের কর্মকান্ডকে বৈধতা প্রদানে সাধারণ মানুষের ওপর নানা অভিযোগ তুলছেন। অধিকন্তু অসাধু এসব ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণে তাদের মধ্যে থেকে মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক দলের নেতাসহ দুদকের দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য পদে অসীন হচ্ছেন। এমনকি তারা প্রধানমন্ত্রীর বৈদশিক সফরসঙ্গী করার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন। ফলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এ অবস্থায় পুরো দেশটি যেন দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতার হাটে পরিণত হয়েছে। রমজানকে সামনে রেখে দাম বাড়েনি এমন পণ্যের তালিকা খুঁজে পাওয়া কঠিন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বড় বড় আমদানিকারক ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিনিয়ত তাদের প্রতিষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার, জেলা প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনকে অভিযান পরিচালনা না করার জন্য পরোক্ষভাবে হুমকি প্রদান করে যাচ্ছেন। আবার কোন সময় অভিযান পরিচালনা করা হলে দোকান-পাট বন্ধ করে পালিয়ে যান। তারা যদি কোন অপরাধে বা কারসাজিতে জড়িত না হন তাহলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে পালানোর দরকার কী?
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, পবিত্র রমজানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে মূল্য ছাড় শুরু হয়। এমন কি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও পূজার সময় মূল্যহ্রাস করা হয় কিন্তু আমাদের দেশে উল্টো চিত্র। রমজান ও ঈদের সময় যেন ভোক্তার পকেট কাটার উৎসব শুরু হয়। ব্যবসায়ীরা ‘রমজানে একমাস ব্যবসা করবে ১১ মাস বসে থাকবে’ এই নীতি গ্রহণ করেছেন বলেই মনে হয়ে। অনেকে আবার কালো টাকা সাদা করার মতো, পুরো রমজানে মানুষের পকেট কেটে, গুনাহ মাফের জন্য রমজানে শেষ দশদিন মক্কায় এতেকাফের উদ্দেশ্যে ওমরা করতে চলে যান।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ভোক্তা সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুযায়ী সব দোকানে মূল্য তালিকা দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করার কথা থাকলেও অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে মূল্য তালিকা প্রদর্শন করছেন না। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাজার থেকে চলে গেলেই মূল্য তালিকা উধাও হচ্ছে। প্রতিবার বাজার অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের সময় এজন্য জরিমানা করা হলেও দৃশ্যত কোন উন্নয়ন হচ্ছে না। এ অবস্থায় গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বর্জনের আহবান জানান ক্যাব নেতৃবৃন্দ।