ইলিশ মৌসুম যেভাবে এলো আর গেলো

18

এম এ হোসাইন

সাগরে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার আগ মুহুর্তে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। রূপালী ইলিশের দেখা পেয়ে জেলেদের মুখে ফুটেছে হাসি। উপকূলীয় এলাকায় বিরাজ করছে উৎসব মুখর পরিবেশ। ছোট আকারের ইলিশে ভরে গেছে বাজার। দেড়-দুইশ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে ছোট আকারের ইলিশ। যদিও বড় সাইজের ইলিশের দামের তেমন পরিবর্তন নেই। বাজারে বড় আকারের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে স্বল্প, দামও হাজারের উপর।
বঙ্গোপসাগর উপকূলে ৫০ হাজার মৎস্যজীবী এখন দিনরাত নির্ঘুম সময় পার করছেন। পুর্ণিমার জো’তে এসে ট্রলার ভর্তি ইলিশ নিয়ে পাড়ে ভিড়ছেন মাঝি-মাল্লারা। সেখানে ভিড় করেছেন ক্রেতারাও। বিভিন্ন জায়গা থেকে জড়ো হয়েছেন ইলিশ নিতে। দম ফেলার সময় নেই জেলে ও মাছ বিক্রেতাদের। সরকারিভাবে ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২৪ জুলাই থেকে সাগরে মাছ ধরতে নামেন উপকূলীয় এলাকার জেলেরা। কিন্তু বুকভরা আশা নিয়ে সাগরে পাড়ি দেওয়া জেলেরা তখন ফিরেন নিরাশ হয়ে। এমনকি অমাবস্যার জো’তেও অনেক জেলে ফিরেন খালি হাতে।
তবে শেষ সময়ে এসে পূর্ণিমার জো’তে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে জেলেদের জালে। আকারে ছোট হলেও ভরা নৌকায় ইলিশ নিয়ে তীরে ফিরেন জেলেরা। প্রত্যাশার ইলিশের দেখা মেলায় জেলেদের মুখে হাসি ফুটে। সাগর তীরবর্তী এলাকায় প্রতিমণ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে (লট আকারে) ৪ থেকে ১০ হাজার টাকায়। গত বছরের চেয়েও কম দামে ইলিশ বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান জেলেরা।
রাসমণি ঘাট এলাকার জেলে হারাধন জলদাশ বলেন, কয়েকদিন পর থেকে আবার ইলিশ ধরা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শেষ সময়ে এসে প্রচুর মাছ পড়ছে। মাছের সাইজ ছোট, দামও অনেক কম। বড় মাছ পড়ছে অল্প-অল্প। বড় মাছের দাম একটু বাড়তি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।
সাগর তীরে প্রচুর মাছ নিয়ে জেলেরা ফিরলেও বাজারে দেখা নেই বড় সাইজের ইলিশের। অল্প পরিমাণে বড় সাইজের ইলিশের দেখা মিললেও দাম বেশ চড়া। ৫শ থেকে ৭শ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকার মধ্যে। এক কেজি সাইজের ইলিশের দাম পড়ছে কেজিপ্রতি ৯০০ থেকে ১১০০ টাকা। দেড় কেজি বা তার চেয়ে বড় সাইজের ইলিশের কেজিপ্রতি দাম ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা।
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ইলিশ রপ্তানির ঘোষণা আসার পর থেকে ইলিশের এমন দামের ঊর্ধ্বগতি। যদিও কয়েকদিন আগে বড় সাইজের ইলিশ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৮শ টাকার মধ্যেই। অবশ্য বাজারে প্রচুর ছোট আকারের ইলিশের দেখা মিলছে। শুধু বাজারে নয়, অলিগলিতেও ছোট আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ভ্যানে করে। দামও অনেক সস্তা। ৪ থেকে ৬ পিসে এক কেজি হয়- এমন ইলিশ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে।
পতেঙ্গার মাছ ব্যবসায়ী নুরুল আবছার বলেন, সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। যদিও ইলিশের সাইজ ছোট। বড় আকারের ইলিশ তেমন পড়ছে না। ৪ থেকে ৭ ইঞ্জির মাছ সবগুলো। আগে এক বস্তা মাছ ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হতো, এখন সে মাছ বিক্রি হয়েছে দুই-আড়াই হাজার টাকায়।
তিনি বলেন, এখন বড় সাইজের ইলিশ পাবেন না। ভারতে ইলিশ রপ্তানি শুরু হওয়ার পর থেকে সব পাইকারি আড়তে চলে যাচ্ছে। বড় সাইজের দাম আগের চেয়ে এখন অনেক বেড়ে গেছে।
গত বুধবার থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়েছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ৫২ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ৪০ টন করে ইলিশ রপ্তানির সুযোগ পাবেন এবার। ২০১২ সাল থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ থাকলেও ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পশ্চিমবঙ্গে ৫০০ টন ইলিশ রপ্তানি করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ২০২০ সালে এক হাজার ৪৫০ টন রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। চলতি বছর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে দুই হাজার ৮০ টন। গত বৃহস্পতিবার থেকে কলকাতার বাজারে উঠছে বাংলাদেশের ইলিশ। তার আগে বুধবার রাতে বেনাপোল দিয়ে ইলিশের চালান যায় ভারতে। দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে ভারতের বাজারে ইলিশের আকাল থাকায় বাংলাদেশের সুস্বাদু ইলিশের চাহিদা এখন আকাশ ছোঁয়া। তাছাড়া এ বছর ভারতের গঙ্গা কিংবা তার শাখা-প্রশাখার মোহনামুখ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ইলিশ। গঙ্গায় দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশের গন্তব্য এখন বাংলাদেশের পদ্মা।
এদিকে প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ মাছ সংরক্ষণে আগামী ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত এ মাছ ধরা, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে সরকার। চন্দ্রমাসের ভিত্তিতে প্রধান প্রজনন মৌসুম ধরে এ বছর আশ্বিন মাসের প্রথম পূর্ণিমার দিন এবং এর আগে চার ও পরের ১৭ দিনসহ মোট ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। আগে প্রজনন মৌসুমে ১৫ দিন ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ রাখা হলেও গত চার বছর ধরে এ সময় সাত দিন বাড়িয়ে ২২ দিন করা হয়। সরকারের এ আদেশ অমান্য করে ইলিশ মাছ আহরণ ও বিক্রি করলে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দÐের বিধান রয়েছে।