ইন্টারনেটের গতির হিসাব-নিকাশ

1366

ইন্টারনেট ব্যবহারের তৃপ্তি নির্ভর করে গতি অর্থাৎ স্পিডের ওপর। গতি ভালো না হলে ইন্টারনেট ব্যবহার বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন: আপনি ইউটিউবে কোনো ভিডিও দেখতে চাইছেন কিন্তু এটি যদি বাফার করে মানে লোড হতে সময় লাগে বা থেমে থেমে চলে তাহলে কী রকম লাগে? হয়ত ইচ্ছা করবে ডিভাইসটি ছুঁড়ে ফেলে দিতে কিংবা রাগে নিজের মাথার চুল নিজেই ছিঁড়তে। বর্তমানে সরকার যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছে তার সুবাদে আমরা অন্যান্য দেশের মতো উচ্চ গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছি কিস্তু ব্যাপারটি কয়েক বছর আগেও এমনটি ছিল না।
আমি ২০০০ সালের দিকে প্রথম যখন ডায়াল-আপ মডেম দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করতাম তখন বাসায় টিএন্ডটির টেলিফোন লাইন ব্যবহার করে প্রতি মিনিট হিসাব করে ইন্টারনেটের বিল দিতে হতো। আর গতি বা স্পিডের হিসাব তখন এতটা গুরুত্বপূর্ণই ছিল না। এখন তো বিভিন্ন ইন্টারনেট সার্ভিস কোম্পানির স্পিডের অফারের ছড়াছড়ি। এই যুগে আমরা অন্য কিছু না বুঝলেও এমবি, জিবি এই শব্দগুলোর সাথে বেশ ভালোই পরিচিত কিস্তু অনেকেই এই হিসাব হয়ত ঠিকমতো জানি না। যার ফলে ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অফারের সাথে আমাদের হিসাব মিলে না।
আজকে আমি আপনাদের সেই হিসাব-নিকাশের ব্যাপারটি সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব। ইন্টারনেট শব্দের সাথে ব্যান্ডউইথ শব্দটি জড়িত। ব্যান্ডউইথ মানে হলো ইন্টারনেটে প্রবাহিত ডাটার গতি। ব্যাপারটিকে একটু উদাহরণের মাধ্যমে পরিষ্কার করা যাক। আমরা আমাদের বাসার ছাদে পানির ট্যাংক স্খাপন করে সেই ট্যাংক থেকে আলাদা আলাদা লাইন দিয়ে অন্যান্য ফ্ল্যাটে পানি সরবরাহ করি। এ সরবরাহকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রতিটি ফ্ল্যাটের লাইনে গেট বাল্ব স্খাপন করা হয় কিন্তু কেন? লাইন তো সবারই জন্য তাহলে সরাসরি লাইন দিলে সমস্যা কী? এটি করা হয় যেন সবাই সঠিক পরিমাণে পানি পায় এবং পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ইন্টারনেটেও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে ডাটার গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই গতির বিভিন্ন রূপই কেবিপিএস (কিলোবাইট পার সেকেন্ড), এমবিপিএস (মেগাবাইট পার সেকেন্ড), জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ইত্যাদি অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে ডাটা প্রবাহের পরিমাণ।
ডাটার ক্ষুদ্র একক হলো বিট। ৮ বিটে ১ বাইট। ১০২৪ বাইটে ১ কিলোবাইট। ১০২৪ কিলোবাইটে ১ মেগাবাইট। ১০২৪ মেগাবাইটে ১ গিগাবাইট। এই বিট আর বাইটের মধ্যেই আছে হিসাব-নিকাশ। হিসাব মতে বিট হচ্ছে বাইটের ১/৮-এর অংশ বা ১ বাইট ১ বিট থেকে ৮ গুণ বড়। বর্তমানে আমরা ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে যে অফার পেয়ে থাকি সেটি দেয়া হয় বিট টার্মে অর্থাৎ আপনি যদি ১০ এমবিপিএস (গনঢ়ং)-এর একটি সংযোগ ব্যবহার করেন তাহলে আপনার ডাউনলোড বা আপলোড স্পিড হবে ১০/৮ সমান ১.২৫ এমবিপিএস (গইঢ়ং)। এখানে এমবিপিএস (গনঢ়ং) মেগাবিট পার সেকেন্ড বুঝানো হয়েছে যদি গইঢ়ং মানে বড় হতের বি থাকতো তাহলে মেগাবাইট পার সেকেন্ড বুঝাতো এবং আপনি ১০ মেগাবাইট স্পিডে ডাউনলোড বা আপলোড করতে পারতেন। এখন সবার মতো আমারও একই প্রশ্ন, ব্যাপারটি এতো ঘুরানো প্যাঁচানো কেন? ঠিকভাবে বললেইতো হয়। ব্যাপারটি আসলে মার্কেটিংয়ের কৌশল কারণ ১.২৫ গইঢ়ং-এর জায়গায় ১০ গনঢ়ং গ্রাহককে বেশি আকৃষ্ট করবে।
এটি যে শুধু একতরফা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের জন্য তা কিন্তু নয় কম্পিউটার আর নেটওয়ার্কিং সিস্টেম চালুর প্রথম থেকেই বিট পার সেকেন্ড হিসেবে ইন্টারনেট স্পিড পরিমাপ করা হচ্ছে এবং কমম্পিউটারে ডাউনলোডের ক্ষেত্রেও ডাটার গতি বিট হিসাবে প্রদর্শিত হয়।
ইন্টারনেটে অনেক সাইট আছে যেখানে আপনি আপনার ইন্টারনেটের স্পিডের তথ্য জানতে পারবেন। এই সাইটে আপনি আপনি আপনার ইন্টারনেটের স্পিড পরিমাপ করতে পারবেন। এছাড়া আপনার কোন ফাইল ডাউনলোড হতে কত সময় লাগতে পারে তারও একটা হিসাব এই সাইটে করতে পারেন। আর এই সাইটে আপনার বাসায় কতজন ব্যবহারকারী ও কী কী কাজের জন্য কতটুকু ইন্টারনেট প্রয়োজন তার সম্পর্কে একটা ধারণা পাবেন।
সবকিছুর শেষে আপনাদের আরেকটি বিষয় জানিয়ে রাখতে চাই। আমরা মোবাইল ফোনে যে ইন্টারনেট ব্যবহার করি সেটি কিন্তু আনলিমিটেড নয়। মোবাইলে ইন্টাররেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে দু’টি ব্যাপার থাকে। ১. ইন্টারনেট স্পিড ২. ডাটার লিমিট অর্থাৎ আপনি যদি ১ জিবি ইন্টারনেট কিনেন তাহলে আপনি ১ জিবি পরিমাণ ডাটা ডাউনলোড বা আপলোডের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।
সেটি ১ ঘণ্টায়ও শেষ হতে পারে বা শেষ হতে পারে মোবাইল কোম্পানি থেকে নির্দিষ্ট করে দেয়া সময়ে। এটির গতি মোবাইল সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছা অনুযায়ী হয়ে থাকে।