ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধের তৎপরতা বাড়িয়েছে রাশিয়া

12

পূর্বদেশ ডেস্ক

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বিজয় অর্জনে তৎপরতা আরও বাড়িয়েছে রাশিয়া। এ লক্ষ্যে দনবাস অঞ্চলে নতুন করে শুরু করা অভিযানে প্রায় ২০ হাজার ভাড়াটে যোদ্ধা মোতায়েন করেছে ক্রেমলিন। সিরিয়া, লিবিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে তাদের সেখানে জড়ো করা হয়েছে। কোনো ধরনের ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও সাঁজোয়া যান ছাড়াই তাদের যুদ্ধে পাঠানো হয়েছে। ইউরোপীয় এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান এসব কথা জানিয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, পূর্ব ইউক্রেনে মোতায়েন করা ভাড়াটে যোদ্ধার সংখ্যা ১০ থেকে ২০ হাজার হতে পারে। তাদের মধ্যে কতজন সিরিয়া, লিবিয়া ও অন্যান্য দেশ থেকে এসেছেন, তা আলাদা করে বলা কঠিন। রাশিয়ার মার্চেনারি কোম্পানি ‘ওয়াগনার গ্রæপ’ তাদের নিয়োগ দিয়েছে। ইউক্রেনের সেনাদের প্রতিরোধের বিরুদ্ধে তাদের কাজে লাগানো হচ্ছে। তারা মূলত পদাতিক। তাদের তেমন কোনো সরঞ্জাম ও সাঁজোয়া যান নেই।

মারিওপোলে ইউক্রেনের সেনারা অবরুদ্ধ
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিওপোলের আজভস্তাল ইস্পাত কারখানায় অবরুদ্ধ ইউক্রেনীয় সেনাদের আত্মসমর্পণের জন্য স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার দুপুর দুইটা পর্যন্ত চূড়ান্ত সময় বেঁধে দেয় ক্রেমলিন। রাশিয়া সতর্ক করে বলেছে, এ সময়ের মধ্যে সামরিক কার্যক্রম বন্ধ না করলে পরিণতি ভোগ করতে হবে।
এর আগে গত রোববার মারিউপোলে অবরুদ্ধ ইউক্রেনীয় সেনাদের আত্মসমর্পণের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছিল রাশিয়া। তবে তাতে সাড়া দেয়নি ইউক্রেন। ইউক্রেনের পূর্ব দিকে রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের মধ্যে মারিওপোলের অবস্থান। এর দক্ষিণে ক্রিমিয়া। এই শহরটি কৌশলগতভাবে রাশিয়ার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে শহরটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করেছে রুশ বাহিনী।
বিবিসি জানিয়েছে, মারিওপোলে অবরুদ্ধ ইউক্রেনীয় মেজর শেরহি ভলিনা এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, তিনি ও তার সেনারা হয়তো জীবনের শেষ দিন কাটাচ্ছেন। তবে তারা আত্মসমর্পণ করবেন না। অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে তাদের উদ্ধারে সহায়তা চেয়েছেন এই সেনা কর্মকর্তা।

ইউক্রেন যুদ্ধবিমান পেয়েছে
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে স¤প্রতি নতুন করে যুদ্ধবিমান ও সামরিক সরঞ্জাম পেয়েছে ইউক্রেন। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন গত মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে। তবে কোন ধরনের ও কতটি যুদ্ধবিমান ইউক্রেনকে দেওয়া হয়েছে, তা জানায়নি ওয়াশিংটন। পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, এসব যুদ্ধবিমান ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে। এদিকে ইউক্রেনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা দেশটিকে আরও অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম দেবে বলে গত মঙ্গলবার জানিয়েছে। এর আগে যুদ্ধ শুরুর পরপর ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান এবং অস্ত্র দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পর কানাডাও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দুই মেয়ে মারিয়া ভরোন্তসোভা (৩৬) ও ক্যাতেরিনা তিখোনোভার (৩৫) ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞার আওতায় তারা ছাড়াও পুতিনের ১৪ ঘনিষ্ঠজন রয়েছেন। অন্যদিকে ইউরোপের ৩১ জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে মস্কো। রুশ ক‚টনীতিক বহিষ্কারের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে মস্কো এই পদক্ষেপ নিয়েছে।

‘যুদ্ধের’ কারণ জানালেন পুতিন
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে রাশিয়া তার সামরিক লক্ষ্য অর্জন করবে। এতে করে ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন পুনরায় শুরু করতে পারবেন। গতকাল বুধবার বিবিসির লাইভ প্রতিবেদন এই খবর জানিয়েছে। ক্রেমলিনে এক বৈঠকে পুতিন বলেছেন, ডনবাসে ‘ট্র্যাজেডির’ কারণে রাশিয়া ইউক্রেনে ‘সামরিক অভিযান’ শুরু করতে বাধ্য হয়েছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি শুরুতেই বলেছি- সামরিক অভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে ডনবাসে বসবাসরত আমাদের লোকদের সাহায্য করা।
ক্রিমিয়ার সেভাস্তোপোল থেকে বৈঠকে অংশ নেওয়া এক মেয়ের উদ্দেশে পুতিন বলেছেন, আমরা ধারাবাহিকভাবে কাজ যাবো এবং সেখানে জীবন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠবে তা নিশ্চিত করবো। উন্নতির জন্য পরিবর্তন আনা হবে- ঠিক যেমনটি সেভাস্তোপোলে আপনার জীবনে ঘটেছে। ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর গতকাল পর্যন্ত টানা ৫৬ দিনের মতো চলে দেশ দুইটির সংঘাত। এতে দুই পক্ষের বহু হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে যুদ্ধ বন্ধে এখন পর্যন্ত কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সূত্র : বিবিসি।