আ.লীগ বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে : মির্জা ফখরুল

16

পূর্বদেশ ডেস্ক

নিজেদের অপকর্ম থেকে রেহাই পেতে সরকার বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগ এখন টিকে আছে শুধুমাত্র এসব অপকর্ম করে এবং বিদেশিদের কাছে গিয়ে বাঁচতে চায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। রাজধানীর হোটেল পূর্বানীতে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস’ উপলক্ষে ‘বাংলাদেশ বর্তমান প্রেক্ষাপট: কোনও প্রতিকার নেই, দূষণ বেড়েই চলেছে, দেশের মানুষ বেঁচে আছে অসহায় অবস্থায়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন দলের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম।
ফখরুল বলেন, একদিকে স্যাংকশন পড়েছে, অপরদিকে বিভিন্ন রকম যে অপকর্ম করেছে, সেগুলো প্রকাশ হয়ে পড়েছে বিশ্ববাসীর কাছে। সেই কারণে আজকে তারা এভাবে ধরনা দিচ্ছে বিদেশিদের কাছে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যখন নির্বাচন আসছে তখন আমেরিকার কাছে দৌড়াচ্ছে। আমেরিকায় গিয়ে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন যে, বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসার জন্য সাহায্য করেন আমাদেরকে। যখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিজ্ঞাসা করেছেন আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে, নির্বাচন কেমন করতে যাচ্ছেন আপনারা, সেখানে কী বিরোধী দল আসছে এবং স্পষ্ট করে বলেছেন যে, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য আপনারা কী ব্যবস্থা করছেন? তখন তিনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন যে, আপনি আমাদেরকে সাহায্য করেন বিএনপিকে আনার জন্য। আর এই লোকগুলো (সরকারি দলের নেতারা) সারাক্ষণ কথা বলতে থাকে যে, আমরা নাকি বিদেশিদের কাছে ধরনা দেই, আমরা নাকি বিদেশিদের সাহায্য নিয়ে কাজ করি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে গেছে, ভঙ্গুর হয়ে গেছে। আমরা সেটা লক্ষ্য করেছি, করোনা সংক্রমণ যখন আসলো, সেই সময়ে আমরা দেখলাম, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধবংস হওয়ার বিষয়টি।
এর কারণ কী? এই সরকারের একটা মাত্র লক্ষ্য থাকে দুর্নীতি, কীভাবে টাকা বানানো যায়। সেজন্য কী করেছে? করোনা টেস্টের নাম করে টাকা বানিয়েছে তারা, বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা কীভাবে দুর্নীতি করেছে। আমরা দেখলাম, তাদের সমর্থনপুষ্ট এক ব্যক্তিকে লাভবান করার জন্য ভারত থেকে যে ভ্যাকসিন আনা হলো, তার দাম তিন/চারগুণ বেশি। শুধুমাত্র সরকারের মদদপুষ্টদের লাভবান করতে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে ফেলা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে গেলে দেখবেন সেখানে অবস্থাটা কী? বিশেষ করে মফস্বলের হাসপাতালগুলোতে কোনও স্বাস্থ্যসেবা নেই। জেলাগুলো বাদ দেন, আপনি পিজি হাসপাতালে যান দেখবেন। আমি কয়েকদিন আগে একজন রোগীকে দেখতে গিয়েছিলাম পিজি হাসপাতালের কেবিনে। যে কেবিনে টাকা দিয়ে থাকতে হয়। সেই কেবিনে গিয়ে দেখলাম টাইলসগুলো ভেঙে গেছে। চেয়ার একটা আছে তার একটা পা নেই, তিনটা পা আছে এবং বাথরুমে যাওয়া যায় না। এই যে অবস্থা এটার কারণটা হচ্ছে যে, এই সরকারের এসব বিষয়ে কোনও খেয়ালই নেই। তাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে মেগা প্রজেক্ট। মেগা প্রজেক্টে মেগা দুর্নীতি হবে, লাখ লাখ টাকা আয় করে বিদেশে পাঠানো যাবে, সেই টাকা দিয়ে বেগমপাড়ায় (কানাডা) বাড়ি তৈরি করবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে আমাদের স্বাস্থ্য যেমন ভালো নয়, বাংলাদেশের সামাজিক স্বাস্থ্যও ভালো নয়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য ভালো নয়। বাংলাদেশের প্রশাসনিক স্বাস্থ্য ভালো নয়। রাজনৈতিক স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য ভালো নয়। বাংলাদেশ ভালো নেই, গণতন্ত্র নেই, মানুষের অধিকার নেই। বিচার বিভাগে আজকে দলীয়করণ। এদেশে সুশাসন নেই। নিরাপদ পানি পাওয়া যায় না। সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ভেজাল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এর কারণ হচ্ছে, এই সরকার জনগণের ভোটের সরকার নয়, গণতান্ত্রিক সরকার নয়। সেজন্য তাদের কাছে জনগণের স্বার্থ গুরত্বপূর্ণ নয়, তারা নিজেরা সিন্ডিকেট করে লুট করছে, মুনাফা নিচ্ছে।
বিএনপির মহাসচিবের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বক্তব্য রাখেন। জানা গেছে, অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইন্টারনেটের মাধ্যমে বক্তব্য রেখেছেন। বিএনপির অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, খায়রুল কবির খোকনসহ কেন্দ্রীয় অঙ্গ সংগঠনের নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।