আ.লীগের চমক রেজাউল

291

টানটান উত্তেজনা, ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস, কুৎসা রটানো সপ্তাহজুড়ে এসবেই ব্যস্ত ছিলেন দলীয় নেতাকর্মীরা। বর্তমান মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীনের মনোনয়ন পাওয়ার পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরেন তাঁর অনুসারীরা। পাল্টা যুক্তি দিয়ে নাছিরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় অপর পক্ষটি। অল্পক্ষণ পরপর আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর নাম লোকেমুখে পরিবর্তন হলেও প্রকৃতপক্ষে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন তার জন্য শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন নগরবাসী। শেষ পর্যন্ত গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কাক্সিক্ষত প্রার্থীর নাম প্রকাশ্যে আসে। চমক দিয়েই নৌকার মাঝির নাম ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রতিই আস্থা রাখেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
আর চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ঘোষণার মধ্যদিয়ে মনোনয়ন নিয়ে সপ্তাহজুড়ে চলা নগরবাসীর উৎকণ্ঠার অবসান হলো। এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় ১৯ জন মেয়র ও ৪০৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থীকে গণভবনে ডেকে পাঠানো হয়। সে বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে বক্তব্য রাখেন।
শুরুতেই মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে সাক্ষাৎ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী মেয়র প্রার্থীদের জানান, ‘যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে তার পক্ষে কাজ করতে হবে। মনোনয়ন সবাইকে দেয়া যাবে না। একজনকেই দিতে হবে।’
রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা ১৯ জন মেয়র ও ৪০৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্যকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘চট্টগ্রামে উন্নয়নের কোনো সীমানা নেই। চট্টগ্রামে এত বেশি উন্নয়ন করেছি আমাদের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী বেঁচে থাকলে খুশি হতেন। আমাদের দুর্ভাগ্য উনি এখন বেঁচে নেই। এত উন্নয়ন দেখে যেতে পারেন নি।’
তফসিল ঘোষণা হয়নি ভোট চাইতে বাধা নেই উল্লেখ করে চট্টগ্রামের প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা আমাদের উন্নয়নের কথা জনগণের কাছে পৌঁছালে মানুষ আমাদের ভোট দিবে। নিস্বার্থভাবে সব চাওয়া-পাওয়ার উর্ধ্বে উঠে জনগণের জন্য কাজ করতে হবে। জাতির পিতার আদর্শে কাজ করতে হবে। ’
দলীয় সূত্র জানায়, গত ১০ ফেব্রূয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রূয়ারি পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। পাঁচদিনে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির পুত্র মুজিবুর রহমান, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমদ চৌধুরী সন্তান হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, প্রয়াত সাংসদ মঈনুদ্দীন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান, সাবেক প্যানেল মেয়র রেখা আলম চৌধুরী, সাবেক সেনা কর্মকর্তা মো. এমদাদুল ইসলাম, মো. ইনসান আলী, বিজয় মেলা উদযাপন পরিষদের মহাসচিব মোহাম্মদ ইউনুছ, সাবেক সিটি মেয়র মনজুর আলম, চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, নগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা একেএম বেলায়েত হোসেন, মো. এরশাদুল আমীন, মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন ও দীপক কুমার পালিত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এই ১৯ জন প্রার্থী ছাড়াও কাউন্সিলর পদের প্রার্থীরাও প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনতে গণভবনে যান।
গণভবনে যাওয়া মনোনয়ন প্রত্যাশী কয়েকজন জানান, সন্ধ্যার আগেই প্রার্থীরা গণভবনে উপস্থিত হন। সেখানে প্রবেশ মাত্রই প্রার্থীরা যাতে দলীয় মনোনয়ন না পেলে নির্বাচন করতে না পারেন সেজন্য প্রত্যাহার পত্রে স্বাক্ষর নেয়া হয়। এরপরেও একে অপরের সাথে কুশল বিনিময় করেন প্রার্থীরা। মনোনয়ন যুদ্ধে একে অপরের প্রতিপক্ষ হলেও গণভবনে যেন একই কাতারে মিশে ছিলেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। সবার মুখে মুখে ছিল একই বক্তব্য, নেত্রী যাকে মনোনয়ন দিবেন, তার পক্ষেই সবাই কাজ করবেন।
নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, ‘১৯৬৬ সাল থেকে রাজনীতির মাঠে ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ, ছয়দফা আন্দোলন, এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জনগণের কাছাকাছি ছিলাম। এখন নেত্রী আমার উপর আস্থা রেখেছেন। নির্বাচনে জয়ী হলে নগরবাসীর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবো।’