আল্লামা ছালেহ জহুর ওয়াজেদী (রহ.)

211

অলিয়ে কামেল সুলতানুল ওয়ায়েজিন শাহসূফি আল্লামা ছালেহ জহুর ওয়াজেদী (রহ.) সারা জীবন মানবসেবা, জনকল্যাণ ও হাজীদের খেদমতে নিজের জীবনকে উৎসর্গীত করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। রাহমাতুল্লিল আলামিন প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অমোঘ বাণীর বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায় আল্লামা ওয়াজেদীর (রহ.) জীবনে। প্রিয় নবী (দ) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই সর্বোত্তম, যে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত থাকে।’ মহানবীর (দ) শাশ্বত এ নির্দেশনা মেনে আজীবন মানুষের সেবা করে গেছেন আল্লামা ওয়াজেদী (রহ.)। মহান আল্লাহ পাকের মেহমান হাজী সাহেবানদের খেদমত ও সেবা করতে পারা নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যের ব্যাপার। জীবনে ৪০/৪২ বার পবিত্র হজ্ব-ওমরাহ পালন করেছেন। শুধু তাই নয়; হাজীদের সেবায় পুরো জীবন কেটে দিলেন তিনি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত শাহ আমানত হজ্ব কাফেলা আজ দেশের সর্ববৃহৎ কাফেলার কাতারে উঠে এসেছে। সততা, উদারতা, সবার প্রতি সদাচরণ, মহানুভবতা, জনকল্যাণ ও সমাজসেবাই তাঁর জীবনের বড় বৈশিষ্ট্য। মানুষের মৃত্যু দুনিয়ার শাশ্বত অমোঘ বিধান। মৃত্যুকে উপেক্ষা করার সুযোগ কারো নেই। আজ হোক, কাল হোক একদিন সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। তেমনি ১৪ জানুয়ারি (২০১৭) আল্লামা ছালেহ জহুর ওয়াজেদী দুনিয়া থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়েছেন সত্য, কিন্তু তাঁর বহুমুখী কর্মই তাকে বাঁচিয়ে রাখবে যুগ যুগ ধরে। ১৯৭৮-১৯৭৯ সনে বাংলাদেশ সরকারের ব্যবস্থাপনায় শহীদ সালাহউদ্দিন নামক পানির জাহাজে করে হজ্ব পালনকারীদের মুয়াল্লিমের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী ওয়াজেদিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় তিনি শিক্ষক ছিলেন। ইলমে দ্বীন প্রসারেও তিনি অবদান রাখেন। অক্সিজেন হাসনি বনস্পতি অয়েল মিল মসজিদের দীর্ঘদিন খতিব ছিলেন। একজন ভালো বক্তা হিসেবেও তাঁর সুখ্যাতি রয়েছে। সদা হাস্যোজ্জ্বল, বিনয়ী, উদার, সহনশীল ও মানবিক গুণাবলিতে পরিপূর্ণ একজন সফল মানুষ আল্লামা ছালেহ জহুর ওয়াজেদী (রহ.)।
সর্বমহলে আল্লামা ছালেহ জহুর ওয়াজেদীর (রহ.) ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা ছিল। একজন মানুষের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা অনুধাবন করা যায় তাঁর ইন্তেকালের পর নামাজে জানাজার দৃশ্য দেখে। অক্সিজেন ওয়াজেদিয়া চত্বরের বিশাল মাঠ উপচে পাশের সড়কও ছিল লোকে লোকারণ্য। হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছিল ১৫ জানুয়ারি (২০১৭) রোববার আল্লামা ছালেহ জহুর ওয়াজেদীর (রহ.) নামাজে জানাজায়। সাধারণ দ্বীনদার সুন্নি জনতার পাশাপাশি বিভিন্ন মাদ্রাসা, মসজিদ, খানকাহর উলামা, পীর মাশায়েখ ও ছাত্র-জনতার মিলনস্থল ছিল এ নামাজে জানাজা। আল্লামা ওয়াজেদী (রহ.) এর বড় ছেলে শাহ্ আমানত হজ্ব কাফেলার চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াছিন নামাজে জানাজায় ইমামতি করার প্রাক্কালে উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। সংক্ষিপ্ত অথচ তাৎপর্যপূর্ণ ও হৃদয়গ্রাহী তাঁর বক্তব্যে সমবেত জনতা চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। তাঁদের শ্রদ্ধেয় পিতা খুবই বিনয়ী ও পরোপকারী ছিলেন উল্লেখ করে আলহাজ্ব মাওলানা ইয়াছিন বলেন, আমাদের মুহতরম পিতার ইন্তেকালে আমরা হারিয়েছি একজন আদর্শনিষ্ঠ অভিভাবককে, এলাকাবাসী হারিয়েছেন একজন দরদী ব্যক্তিত্বকে, সুন্নি জনতা হারিয়েছেন একজন সুন্নিয়তের সিপাহসালারকে এবং হাজী সাহেবানরা হারিয়েছেন তাঁদের একজন নিবেদিতপ্রাণ খেদমতগারকে। তিনি আরো বলেন, আব্বাজান খুবই ওলীভক্ত ছিলেন। গাউসুল আজম হযরত সৈয়দ আবদুল কাদের জিলানীর (রহ.) কথা স্মরণ হতেই তিনি তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও মুহাব্বতে আবেগপ্রবণ হয়ে যেতেন। রবিউস সানি তথা গাউসে পাকের ওফাতের স্মৃতি বিজড়িত এ মাসে আব্বার এ ইন্তেকাল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর আব্বার মেহমানদারি ও গরিব মানুষের প্রতি সহানুভূতির কথাও মুহাম্মদ ইয়াছিন তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
আল্লামা ওয়াজেদীর (রহ.) নামাজে জানাজার আগে দেওয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার শায়খুল হাদিস শেরে মিল্লাত আল্লামা মুফতি ওবাইদুল হক নঈমী বলেন, গাউসে জমান মুরশেদে বরহক আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়ব শাহ্ (রহ.) এর একনিষ্ঠ মুরিদ ছিলেন আল্লামা ওয়াজেদী (রহ.)। তিনি বলুয়ার দিঘি খানকায় সব সময় পড়ে থাকতেন। এ মহান আলেমের ইন্তেকাল অপূরণীয় ক্ষতি মাজহাব ও মিল্লাতের জন্য।
অভাবী দরিদ্র অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো অতীব পুণ্যময় আমল। গরিব মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া আরো অশেষ পুণ্যময়। গরিব দুখী অভাবী মানুষকে আহার করিয়ে অপার আনন্দ পেতেন আল্লামা ছালেহ জহুর ওয়াজেদী (রহ.)। প্রতি বছর ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.), ফাতেহায়ে ইয়াজদাহুম ও খাজা গরিবে নেওয়াজ (রহ.) স্মরণে ফাতেহা-ওরশ মাহফিল করতেন আল্লামা ছালেহ জহুর ওয়াজেদী (রহ.)। গরু-মহিষ-ছাগল জবেহ করে ওয়াজেদিয়া এলাকার সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষকে খাওয়াতেন তিনি। তাঁর সাখাওয়াত তথা দানশীলতা আর্থিক অঢেল দানে মানুষ উপকৃত হতেন। মানুষের সেবা ও কল্যাণে নিজের জীবনকে উৎসর্গীত রেখেছিলেন বলেই তাঁর আলাদা ইমেজ গড়ে ওঠে। এলাকাবাসীর চোখে তিনি ছিলেন গরিব দরদী ও গণমানুষের উপকারী মহান ব্যক্তিত্ব।
বায়েজিদ থানাধীন নিজ বাড়ি ওয়াজেদিয়া এলাকায় একটি দৃষ্টিনন্দন বড় মসজিদ ও কবরস্থান প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন এলাকার বুজুর্গ ব্যক্তিত্ব আমিরুল হুজ্জাজ আল্লামা ছালেহ জহুর ওয়াজেদী (রহ.)। জীবন সায়াহ্নে এসে জীবদ্দশায় এ মসজিদ এবং কবরস্থান দেখে যেতে পেরেছেন তিনি। হুজুর কেবলার আগ্রহে এবং তাঁর বড় ছেলে আলহাজ্ব মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াছিনের সদিচ্ছা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ওয়াজেদিয়া এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় শাহ আমানত (রহ.) জামে মসজিদ ও একটি কবরস্থান। অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী নিজ প্রতিষ্ঠিত মসজিদ কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। কোটি টাকা ব্যয়ে মসজিদের পাশেই তাঁর সুরম্য মাজার শরিফ নির্মাণের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। ওয়াজেদী হুজুর কেবলার (রহ.) মাজার শরিফে এসে প্রতিদিন শত শত দ্বীনদার উলামা-ছাত্র-জনতা জিয়ারত-ফাতেহা-মিলাদ-মুনাজাতে শামিল হচ্ছেন। অজানা-অচেনা মানুষের আনাগোনা ও জিয়ারত-মিলাদে মুখরিত থাকছে তাঁর মাজার শরিফ প্রাঙ্গণ। আল্লামা ওয়াজেদী (রহ.) যে একজন কামেল বুজুর্গ ব্যক্তিত্ব তা তাঁর ওফাতের পর যেমন নামাজে জানাজায় দেখা গেছে, তেমনি বর্তমানে প্রতিদিন শত শত লোকের জিয়ারতের উদ্দেশ্যে মাজার শরিফে নিত্য আগমন দেখে আমরা তাঁর শান মর্যাদা অনুভব করতে পারছি। দিন দিন তাঁর মাজার শরিফে ভক্ত জনতার ভিড় বাড়ছে। এতেই বোঝা যায় তিনি কতো বড় মহান অলিয়ে কামেল।
সফলতা-ব্যর্থতা নিয়েই মানুষের জীবন। প্রতিটি মানুষের জীবনে যেমন থাকে সফলতা, তেমনি ব্যর্থতাও কিছু থাকে। কিন্তু আল্লামা ছালেহ জহুর ওয়াজেদীর (রহ.) জীবনে সফলতার পাল্লা এতোই ভারী যে, কোনো ব্যর্থতা খুঁজে পাওয়া যায় না। নিজে একজন ভালো সুবক্তা ছিলেন। টানা ৩০ বছর ধরে বায়েজিদ অক্সিজেন হাসনি বনস্পতি অয়েল ফ্যাক্টরি মসজিদে ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। সচ্ছল জীবন যাপন করেছেন জীবনভর। ওয়াজেদিয়া আলিয়া মাদ্রাসা হতে কামিল পাস করার পর ওই মাদ্রাসায় কয়েক বছর শিক্ষকতা করেছেন। কোনো সময় পেরেশানি বা দুঃখ দুর্দশা তাঁর জীবনকে স্পর্শ করতে পারেনি। ৫ ছেলে ও ৬ মেয়ে সবাইকে পড়ালেখা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলেছেন। ছেলেদের উচ্চ শিক্ষিত করে নিজ প্রতিষ্ঠিত শাহ আমানত হজ্ব কাফেলার সাথে যুক্ত করে হাজীদের খেদমতে নিয়োজিত করে গেছেন আল্লামা ওয়াজেদী হুজুর (রহ.)।
আল্লামা ওয়াজেদীর (রহ.) কাছে যেমন টাকা পয়সা ছিল, তেমনি অকাতরে দুই হাতে দান ও দয়ার হাত প্রসারিত করেছিলেন তিনি। গরিবের বন্ধু ও পরোপকারী হিসেবে তাঁর বাড়ির ওয়াজেদিয়া এলাকায় তাঁর বিশেষ সুখ্যাতি রয়েছে। টাকার অভাবে কোনো গরিব মেয়ের বিবাহ হচ্ছে না, তিনি তা জানা মাত্রই গরিব পরিবারের পাশে দাঁড়াতেন। অনেক গরিব দুখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন তিনি। টাকার অভাবে পড়ালেখা চালাতে অপারগ অনেক শিক্ষার্থীকে নিজ টাকায় পড়ালেখা করিয়েছেন। তিনি ছিলেন মেহমাননওয়াজ। নিজ ঘরে ডেকে নিয়ে মানুষকে আহার করিয়ে তিনি তৃপ্তি পেতেন। চেনা জানা সমকালীন শীর্ষস্থানীয় সুন্নি আলেমদের অনেকেই তাঁর বাড়িতে গিয়ে তাঁর আতিথ্য গ্রহণ করেছেন। বায়েজিদ থানাধীন ওয়াজেদীয়া এলাকাটি এক সময় চট্টগ্রাম নগরীর সবচেয়ে অনুন্নত, উন্নয়নবঞ্চিত ও অবহেলিত এলাকা ছিল। কিন্তু ওয়াজেদীয়া এলাকা এখন আর আগের অনুন্নত-অখ্যাত অবস্থায় নেই। ওয়াজেদিয়া আলিয়া মাদ্রাসা, ওয়াজেদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও ওয়াজেদিয়া মাদ্রাসা ডাকঘরÑএই তিনটি প্রতিষ্ঠানের কারণে ওয়াজেদিয়া এলাকার মোটামুটি পরিচিতি থাকলেও এখন আল্লামা ছালেহ জহুর ওয়াজেদীর (রহ.) মাজার শরিফ ও শাহ আমানত (রহ.) মসজিদের মতো সুরম্য স্থাপনার কারণে এই এলাকা আজ সবচেয়ে দামি উন্নত এলাকার কাতারে উঠে এসেছে। একসময়ের সবচেয়ে অনুন্নত পিছিয়ে থাকা ওয়াজেদিয়া এলাকা আজ সবচেয়ে দামি ও বিখ্যাত হয়ে উঠেছে আল্লামা ওয়াজেদী (রহ.) সাহেবের মতো বুজুর্গ কীর্তিমান ব্যক্তিত্বের মাজার শরিফ ও শাহ আমানত (রহ) মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হবার কারণে। প্রায় তিন কানি জায়গায় সুরম্য বিশাল দিঘিসহ মসজিদ ও মাজারটি পুরো ওয়াজেদীয়া এলাকাকে নবরূপ দান করেছে। আল্লামা ওয়াজেদী হুজুর কেবলার (রহ.) মাজার ও মসজিদের বড় বৈশিষ্ট্য হলো এখানে কোনো দানবাক্স নেই। ভক্ত-জনতা থেকে কোনো চাঁদা-দান-অনুদান গ্রহণ করা হয়না। ওয়াজেদী (রহ.) সাহেবের সচ্ছল পরিবার ও তাঁর উপযুক্ত সন্তানরাই মসজিদ-মাজার শরিফ, হেফজখানা ও এতিমখানার যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করে আসছে। এখানে শরিয়তের বরখেলাপ কোনো কর্মকাÐ চলেনা।
শরীয়তের রীতি-নীতি মেনেই ওরশ-ফাতেহার আয়োজন করা হয়।থআল্লামা ছালেহ জহুর ওয়াজেদীর (রহ.) জ্যেষ্ঠ সন্তান শাহ আমানত হজ্ব কাফেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াছিন জানান, তাঁর বুজুর্গ পিতা ওয়াজেদী (রহ.) সাহেবের মাজার শরিফ ও শাহ আমানত (রহ.) মসজিদকে ঘিরে পূর্ণাঙ্গ একটি ইসলামী কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে হেফজখানা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। হেফজ বিভাগে বর্তমানে বহু শিশু শিক্ষার্থী রয়েছে। দ্বীন ও সুন্নিয়ত প্রচারে ত্রৈমাসিক গবেষণামূলক পত্রিকা ‘আজ জহুর’ প্রকাশ, আল্লামা ওয়াজেদীর (রহ.) নামে প্রতি বছর স্মৃতি বৃত্তি পরীক্ষা আয়োজন, সমৃদ্ধ ইসলামী পাঠাগার প্রতিষ্ঠা, রচনা ও ইসলামী জ্ঞান প্রতিযোগিতা, গুণী সংবর্ধনা, আল্লামা ওয়াজেদী (রহ.) এর নামে শিক্ষাবৃত্তি চালু করে অসহায় দরিদ্র শিক্ষার্থীদেরকে আর্থিক সহায়তা প্রদান, কন্যাদায়গ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক অনুদান প্রদান এবং একটি মেডিকেল সেন্টার প্রতিষ্ঠাসহ দ্বীনি ও সেবামূলক পদক্ষেপ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান আলহাজ্ব মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াছিন। এজন্যে যতো টাকা প্রয়োজন সবই ওয়াজেদী (রহ.) এর পরিবার বহন করতে প্রস্তুত বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে পরিবারের পক্ষ হতে। আল্লামা ওয়াজেদীর (রহ.) জীবন-কর্ম-দর্শন নিয়ে এবারসহ পরপর তিনটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করা হয়েছে।
আল্লামা ওয়াজেদী (রহ.) অসাধারণ আধ্যাত্মিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। আড়াই বছর আগে চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুরস্থ শাহ আমানত হজ্ব কাফেলার প্রধান কার্যালয়কে নবসজ্জিত করার পর মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। মুনাজাত শেষে পীরে তরিকত অধ্যক্ষ আল্লামা সৈয়দ নূরুল মুনাওয়ার (গত বছর ইন্তেকাল করেছেন) এবং মাওলানা সৈয়দ মফজল আহমদ এই দুই জন আলেমের উপস্থিতিতে আল্লামা ওয়াজেদী (রহ.) হঠাৎ নিজ থেকে বললেন, আজই এই অফিসে আমার শেষ আসা। আর আসতে পারবো না। তখন সেখানে উপস্থিত হুজুরের বড় ছেলে আলহাজ্ব মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াছিন নিজ পিতাকে বললেন, কেন আর আসবেন না? আব্বা! আপনি কী আমাদের ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন? হুজুর বললেন, না-আমি অসন্তুষ্ট হই নি। আমি তোমাদের ওপর সন্তুষ্ট। এর ১০ দিন পরই (১৪ জানুয়ারি ২০১৭ সন) আল্লামা ওয়াজেদী হুজুর (রহ.) দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নেন। নিজের ওফাতের সংবাদ এভাবেই নিজের মুখে বলে গেলেন এই মহান আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। এ মহান বুজুর্গ সাধকের তৃতীয় ওফাতবার্ষিকী উপলক্ষে দ্বীনি ও সেবামূলক নানান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি ২০২০ দুই দিনব্যাপী ওরশ শরিফে গরিবদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, ফ্রি খতনা ক্যাম্প আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। আল্লাহ পাক আল্লামা ছালেহ জহুর ওয়াজেদীর (রহ.) উসিলায় আমাদের গøানিময় জীবনকে ধন্য ও সমৃদ্ধ করুন।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট