আমাদের যাপিত জীবন

4

অঞ্জনা চৌধুরী

মুখে মুখে আমরা যতোই মহানুভবতার বুলি আওড়ায় না কেনো গল্পের হিরো বা হিরোইন যখন আমরা নিজে হই তখন সত্যিকার অর্থে আমরা আবিষ্কার করতে পারি আমরা ঠিক কতটা মহানুভব। ধরুন আপনার একটা বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে আপনি পাত্র বা পাত্রী যেই হোন কেনো আপনার প্রথম চয়েস হবে মেয়ে বা ছেলেটি আপনার যোগ্যতার কিনা। যোগ্যতার পাশাপাশি আমাদের সুক্ষ মস্তিষ্ক যে বিষয়টিকে অত্যাধিক গুরুত্ব দেয় সেটি হলো- মেয়ে হলে মেয়েটি রূপবতী কিনা। আর ছেলে হলে সেদিক থেকে একটু ছাড় পাওয়া যায় বটে….. ।
সেক্ষেত্রে ছেলে মাস শেষে মোটা টাকা ইনকাম করলেই হলো, কালা,মোডা যাই হোক না কোনো ছেলে হলেই চলবে। এরেঞ্জ ম্যারেজের ক্ষেত্রে একটা ব্যাপার আমার ভীষণ বাজে লাগে আর সেটা হলো পাত্রী দেখে এসে রিজেক্ট করে দেওয়া। মেয়েটা যখন শুনতে পায় পাত্র পক্ষের কনেকে পছন্দ হয়নি তখন তার মনের অবস্থাটা চিন্তা করলেই কেমন বুক চিনচিন করে। ক্ষণিকের জন্য হলেও মেয়েটার নিজেকে নিজের কাছে অযোগ্য মনে হতে থাকে। বাবা মার চুপসে যাওয়া মুখগুলো ভাবলেই কেমন মন কেমন করে।
সমযোগ্যতায় গায়ের রং কালো, মোটা, বাপের তেমন টাকা নেই এমন মেয়েকে রিজেক্ট হতে দেখেছি। এই যে কালো হওয়া, বাপের টাকা না থাকা এসব কোনটাই মেয়েটার অযোগ্যতা ছিলো না কিন্তু।অযোগ্যতাটা আপনার চাহিদার। সবকিছুর পেছনে একটাই কারণ আমরা সবসময় আমাদের ভালো থাকাটাকেই বেশি গুরুত্ব দেই। আমরা একটু সহানুভূতি দেখালেই অন্যের জীবনেও আশার আলো ফুটতে পারে এই ব্যাপারটা আমরা একদমই ইগনোর করি। কিছু মানুষ আছে শুধু অন্যের দিকে আঙুল তুলে, অন্যের ভুলগুলো বারবার তার চোখে পড়ে। খুব একটা ঠেকায় না পড়লে নিজের চেয়ে অযোগ্য কাউকে কেউ জীবনসঙ্গী করতে চায় না।
আপনার শারীরিক, মানসিক, আর্থিক সমস্ত রকম যোগ্যতা থাকার পরেও আপনি একজন প্রতিবন্ধী, কালো, মোটা, গরিব কিংবা আপনার চেয়ে অযোগ্য কাউকে জীবনসঙ্গী করে দেখান তাহলে ধরে নেবো আপনি কতোটা মহানুভব। জানি দিনশেষে আপনাকে দিয়ে এসব কিচ্ছু হবে না। কেননা আপনাকেও সমাজের আর দশজনের সাথে তাল মিলিয়েই চলতে হবে। তো ভাই যেটা নিজের বেলায় তিতাকরলা সেটা অন্যের বেলায় রসগোল্লা হবে কেনো ভেবে নিচ্ছেন?
পেট যখন ক্ষুধায় চোঁ-চোঁ করে বাসি ভাত আর নুনকেও ফাইভ স্টার হোটেলের বিরিয়ানি মনে হবে। আপনার আশেপাশে ঘটে যাওয়া, মানতে না পারা বিষয়গুলোকে আগে নিজের জায়গা থেকে বিচার করবেন। আশা করি আত্মতৃপ্তি আসবে, মেনে নিতে সহজ হবে।