আমরা সংগ্রাম আরও বেগবান করব : ফখরুল

3

পূর্বদেশ ডেস্ক

বিএনপির আন্দোলন শেষ হয়ে যায়নি জানিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারা রাজপথের সংগ্রামকে আবার বেগবান করবেন। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে ইফতারপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘অনেকে ভাবতে পারে বিএনপির আন্দোলনে নস্যাৎ হয়ে গেছে, বিরোধী দলের আন্দোলন শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু কখনো মানুষের গণতান্ত্রিক আন্দোলন শেষ হয় না। বরং প্রতিটি আন্দোলনের পরে আরও শক্তিশালী হয়েছে। এটা আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন’।
বিএনপি তিন দফা আন্দোলনে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে এখন পর্যন্ত। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচন প্রতিহত, এক বছর পর সরকার পতন আন্দোলন এবং এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করতে পারেনি তারা। গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পর ক্ষমতা আবার সংহত করেছে আওয়ামী লীগ। আর টানা কর্মসূচি পালন শেষে বিএনপি রাজপথে সক্রিয় নয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে প্রতিটি ইটের ওপর ইট বিছিয়ে যেমন একটি স্তম্ভ গড়ে উঠে, সেভাবে আমরা অবশ্যই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ‘ফ্যাসিবাদকে’ পরাজিত করতে সক্ষম হব। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা সংগ্রাম আরও বেগবান করব। আমরা বিশ্বাস করি যে, আন্দোলন, আন্দোলন, আন্দোলনের মাধ্যমেই্ এই ‘ফ্যাসিবাদী’ সরকারের পরাজয় নিয়ে আসব’।
এজন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলসহ দলমত নির্বিশেষে সবাইকে জাতীয় ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করার আহ্বানও জানান তিনি। খবর বিডিনিউজের
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ যখন শক্তিশালী হয় তখন কেউই রেহাই পায় না। আপনাদের সকলের জানা আছে, জার্মানিতে হিটলার যখন একেক করে হত্যা করা শুরু করেছিল- আজকে বাংলাদেশের সেই অবস্থা চলছে। এটা আর রাষ্ট্র আছে বলে মনে হয় না, এটা মনে হয় না এটা একটা স্বাধীন রাষ্ট্র। আমার মনে হয় যে, একটা আধিপত্যবাদ, একটা নির্মম ফ্যাসিবাদ আমাদের ওপর চেপে বসেছে’।
‘ভয়াবহ দৈত্য সব তছনছ করে দিচ্ছে’- এই মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শুধু রাজনৈতিক দল নয় বা ব্যক্তি নয়, শুধুমাত্র পেশাজীবীরা নয়, সমস্ত জাতি একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। সাবেক একজন প্রধান বিচারপতি তার বইতে লিখেছিলেন, একটি রায়ের মধ্যে বলেছেন যে, ‘একজন মনস্টার (দৈত্য) সব কিছু দখল করে নিচ্ছে- সব কিছু তছনছ করে দিচ্ছে’। আসলে আজকে ব্যাপারটা সেটাই হয়েছে। একজন ভয়াবহ দৈত্য সমস্ত আক্রোশ নিয়ে পুরো বাংলাদেশটাকে তছনছ করে ফেলছে। আমরা এই ১৫ বছরের মধ্যে গণতন্ত্রকে হারিয়েছি, রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে’।
প্যালেস্টাইনের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান
প্যালেস্টাইনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা নিয়েও কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এই রমজান মাসে তারা ইসরাইলের নারকীয় হত্যা, গণহত্যার শিকার হয়েছে। তারা খোলা আকাশে ইফতার করছে, কাঁদছে, খাদ্য পাচ্ছে না, সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। কত নৃশংস হতে পারে! একটা জনপদকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার পর তারা যাতে বেঁচে থাকতে না পারে সেজন্য সেখানে খাদ্য সরবারহ বন্ধ করে দিয়েছে। আমার মনে হয়, বিশ্বজনমত যেভাবে গড়ে উঠা উচিত ছিল সেভাবে হয়নি। আরও দুঃখের কথা মুসলিম বিশ্ব তারা সেভাবে প্রতিবাদ করেনি। আজকে মানবতার দাবি যে, প্যালেস্টাইনের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সংগ্রামের পাশে দাঁড়ানো’।
বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, সংবাদ সংস্থা এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণ, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক-চিকিৎসক-প্রকৌশলী-আইনজীবীসহ পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ এই ইফতারে অংশ নেন।
ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় ইফতারপূর্ব আলোচনায় জামায়াতের ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জহির উদ্দিন স্বপন, রফিকুল আলম মজনু, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জামায়াতের রফিকুল ইসলাম খান, আবদুল হালিম, মতিউর রহমান আখন্দ, খেলাফত মজলিসের আহমেদ আবদুল কাদেরসহ পেশাজীবী নেতাদের নিয়ে নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ইফতার করেন বিএনপি মহাসচিব।