আন্দোলনের পাশাপাশি দলে নিষ্ক্রীয়দের সক্রিয় করার উদ্যোগ

23

এম এ হোসাইন

সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলন আরও জোরদারে নানামুখী কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। এজন্য বর্তমান ও অতীতে দলের সমর্থন পাওয়া জনপ্রতিনিধিদের খোঁজ করছে দলটি। যারা নিষ্ক্রিয় বা দল থেকে বহিষ্কৃত, তাদের দলে ফেরানোর উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে। দলীয় শৃঙ্খলা ধরে রেখে চ‚ড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসাবে সবাইকে নিয়ে এগোনোর কথা জানিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। আর এ কার্যক্রম সরাসরি মনিটরিং করছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বিএনপি নিষ্ক্রিয় নেতাদের সক্রিয় করার মাধ্যমে দলকে আরো শক্তিশালী করতে চায়। অতীতে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে যারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হয়েছিলেন, কিন্তু চলমান আন্দোলনে অনেকটা নিষ্ক্রিয় এবং মান-অভিমানসহ নানা কারণে দলীয় কার্যক্রমে নিরব রয়েছেন তাদের তালিকা করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে এই তালিকায় প্রায় ৪ হাজার জনের নাম এসেছে। যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত তালিকা তৈরির পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মতবিনিময় করবেন বলে দলটির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানিয়েছে। বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ১০ দফা দাবিতে আমাদের যুগপৎ আন্দোলন চলছে। দলীয় নেতাকর্মীসহ সারা দেশের মানুষ এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। সামনে আরো বড় আন্দোলন আসবে। চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে এখন বিএনপির যাত্রা। তাই সবাইকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি সরকার পরিচালনাকারী দল। এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সব জায়গাতে আমাদের লোকজন ছিল, আছে। স্থানীয় সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের একটা তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এসব জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৈঠক করবেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেই চ‚ড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এক সময়ে বিএনপির তুখোড় নেতা হলেও অনেকে এখন রাজনীতি থেকে দূরে সরে রয়েছেন। ১৯৯১ এবং ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির সমর্থনে জনপ্রতিনিধি হওয়া অসংখ্য স্থানীয় নেতা রাজনীতি থেকে দূরে আছেন। শুধু তাই নয়, ২০০৯ সাল থেকে অনেকে বিএনপির সমর্থনে নির্বাচিত হলেও নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। আবার কেউ কেউ অভিমানে নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন। অনেকে আবার পদবঞ্চিত হয়ে গুটিয়ে রেখেছেন নিজেকে। চট্টগ্রামে অন্তত ডজনখানেক সাবেক এমপিও রাজনীতি থেকে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন। যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এই কর্মসূচিতে উপজেলাগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ বিএনপি সমর্থিত এমপি প্রার্থীদের উপস্থিতি ছিল না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বলেন, বিএনপির সমর্থন নিয়ে এমপি হওয়া এমনকি মন্ত্রীত্ব পাওয়া ব্যক্তিও রাজনীতি থেকে দূরে চলে গেছেন। মান, অভিমান নানান বঞ্চনা তো আছেই। দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় নেই, মামলা-হামলা, এ অবস্থায় কিছু নেতা সুবিধাবাদী আচরণ করছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বারবার সবাইকে এলাকায় অবস্থান করার কথা বলেছেন। কিন্তু তেমনভাবে কেউ এগিয়ে আসেনি। এখন তাদের কিভাবে আবার সক্রিয় করা যায় সেই চিন্তা করা হচ্ছে। সবাইকে যুক্ত করে জোরালো আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে নামতে চায় বিএনপি। নানা কারণে বিএনপির এক সময়ের জনপ্রতিনিধিরা দল থেকে দূরে অবস্থান করছেন। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে এসব জনপ্রতিনিধিত্বকারী নেতাকর্মীদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তালিকায় আছেন সাবেক ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর। গত ২৯ জানুয়ারি থেকে সাবেক ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে পৃথক টিম গঠন করে এ তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৪ হাজার বিএনপি সমর্থিত জনপ্রতিনিধির খোঁজ পেয়েছে টিম। টিমের তালিকা চূড়ান্ত হলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্কাইপিতে বিভাগ কিংবা জেলা অনুযায়ী জনপ্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করবেন। সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে আরো জোরালো আন্দোলন করা যায় সেই চেষ্টায় আছে দলটি।
বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, বিএনপি হচ্ছে গণমানুষের দল। এই দলের হয়ে অনেকেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হয়ে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান তৈরি করেছেন। তৃণমূল থেকে দলকে সংগঠিত করতে অনেকের অবদান রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে বর্তমানে অনেকেই নিষ্ক্রিয় আছেন। এখন তাদের দলের সাংগঠনিক কাজে সম্পৃক্ত করতে একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।