আন্দরকিল্লা মসজিদে ইফতারে প্রতিদিন ২ হাজার রোজাদার

9

এম এ হোসাইন

ইফতারের আগে দোয়া কবুল হয়, আর বেশি মানুষ এক সাথে দোয়া করলে সেটা আল্লাহ দ্রুত কবুল করেন- মনের এ আকাক্সক্ষা থেকে ইফতারের আগে দোয়া কবুলের এই সময়ে নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে রোজাদারদের ভিড় পড়ে যায়। ধনী, গরীব সবাই বসেন একই কাতারে। তাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই রোজাদার, করবেন ইফতার। দুই হাজারের অধিক রোজাদার সারিবদ্ধ হয়ে শরিক হন ইফতার আয়োজনে। চট্টগ্রামে রোজাদারদের নিয়ে এটাই সবচেয়ে বড় আয়োজন বলে মনে করেন অনেকেই।
সম্পূর্ণ মক্কা-মদিনার আদলে ইফতার আয়োজন করা হয় নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে। মসজিদের খতিব সাইয়্যদ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবেরী আল-মাদানীর ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং মসজিদের মুসল্লি পরিষদের সার্বিক সহযোগিতায় ১৯৯৭ সাল থেকে এমন ইফতার আয়োজন শুরু করা হয়। যদিও এর ব্যাপকতা পায় ২০০৭ সাল থেকে। মনের তৃপ্তি আর সওয়াবের আশায় সবাই শরীক হন এ ইফতার আয়োজনে। আবার অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে আসেন এ ইফতার আয়োজনে যোগ দিতে। ফিরেন তারাবিহ সালাত আদায় করে।
আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের খতিব সাইয়্যদ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবেরী আল-মাদানী বলেন, রোজার মাস দোয়া কবুলের মাস। সবাই এক সাথে মিলে বেশি বেশি দোয়া করবো। আমাদের ইফতার আয়োজনে কোন ভেদাভেদ নেই, আমি নিজেও এখানে ইফতার করি। সওয়াবের আশায় অনেক লোক এখানে ইফতারে শরিক হন। মসজিদের পবিত্রতা মেনেই সবাই ইফতার করেন। কোন করণে যদি পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে মনে হয়, তাহলে আমরা মাঠে নিয়ে যাবো।
মনের তৃপ্তি আর হাজারো লোকের সাথে একসাথে ইফতার আর নামাজ আদায় করার ফজিলতের কারণেই মূলত দূরের ও কাছের মুসল্লিরা ছুটে আসেন আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে। আছরের নামাজের পর থেকে ইফতারের প্রস্তুতি শুরু হয়। সারিবদ্ধ হয়ে মসজিদের কাতারে বসে পড়েন সবাই। বাসন ও থালায় করে পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত করা হয় ইফতারি। আসরের নামাজের পর থেকে শুরু হয় ইফতারের ফজিলত নিয়ে আলোচনা। রোজাদাররা আলোচনা শুনতে সারিবদ্ধভাবে বসে পড়েন বারান্দায়। দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় আলোচনা।
ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসলে একে একে ইফতারির বাসনগুলো রোজদারদের সামনে দিয়ে আসেন স্বেচ্ছাসেবকরা। সবাই পাশাপাশি বসে ইফতারে শরিক হন। সম্পূর্ণ মক্কা-মদিনার আদলে এ ইফতার। ইফতার আইটেমের মধ্যে থাকে ছোলা, মুড়ি, খেজুর, পেঁয়াজু, জিলাপি, বেগুনী, সমুচা, আলুর চপ, শরবত ইত্যাদি।
শাহী জামে মসজিদের খতিবের সহকারী হাছান মুরাদ বলেন, খতিব হুজুরের তত্ত¡াবধানে ইফতারির আয়োজন করা হয়। সওয়াবের নিয়তে রোজাদারদের সাথে ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরাও ইফতারে শরিক হন। সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তৈরি করা হয় ইফতারি। টাটকা ও স্বাস্থ্য সম্মত ইফতারি যাতে সবাই খেতে পারেন সেই চেষ্টা করা হয়। এখানে কোন ভেদাভেট নেই, সবাই এক হয়ে ইফতার গ্রহণ করেন। কোন ধরনের বিশৃঙ্খলাও হয় না।
বৃহৎ ইফতার আয়োজনের চিত্রটা সন্ধ্যায় সময় দেখা গেলেও এর কার্যক্রম শুরু হয় সেহেরীর পর থেকেই। সেহেরী শেষ করে বাবুর্চিরা নেমে পড়েন মসলাপাতি নিয়ে। প্রস্তুত করা হয় আনুষাঙ্গিক অন্যান্য জিনিসও। সকাল হলেই চুলায় দেওয়া হয় আগুন। ছোলা, পিঁয়াজু, জিলাপি, বেগুনি, শরবতসহ বেশ কয়েকটি আইটেম বানানোর এ কাজ চলে বিকেল চারটা পর্যন্ত। এরপর থালা ও বাসনে করে সে ইফতারি পরিবেশন করা হয় রোজদারদের মাঝে। রোজাদারের এমন আয়োজন পুরোটা সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় করা হয়। টাটকা ও স্বাস্থ্য সম্মত ইফতারি নিশ্চিত করতে সচেষ্ট থাকেন বাবুর্চিরা। কয়েকজন বিত্তবান ব্যক্তি নিয়মিত ইফতার আয়োজনে সহযোগিতা দিয়ে আসলেও তারা কেউ-ই চাননা নিজেদের পরিচয় জানাতে। এছাড়া অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন এখানে। কিন্তু তাও পরিচয় গোপন রেখে। ইফতারের সময় সারিবদ্ধ হওয়া রোজাদাররা যেন একাকার হয়ে পড়েন। একসাথে এতো মানুষের ইফতার হলেও কোন ধরনের কোলাহল নেই। দোয়া-দরুদ আর মোনাজাতের পর নিরবতার মধ্যেই শেষ হয় ইফতার আয়োজন।
১৯৯৭ সালের দিকে প্রথম মক্কা-মদিনার আদলে এ ধরনের ইফতারের রেওয়াজ চালু করার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা এবং আলাপ-আলোচনা করতে থাকেন মসজিদের খতিব। ২০০৭ সাল থেকে চালু হয় ভিন্নধর্মী এ ইফতার। প্রতিবছর চার-পাঁচজন বিত্তবান নিয়মিত সহযোগিতা দিয়ে আসছেন বিশাল এ কর্মযজ্ঞে। তবে তারা কেউ-ই চান না নিজেদের পরিচয় জানাতে।
এছাড়া অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন এ ইফতার আয়োজনে। কিন্তু তাও পরিচয় গোপন রেখে। প্রতিদিন সকাল থেকেই চলে ইফতার তৈরির প্রস্তুতি। মসজিদের একপাশের রান্নাঘরে বড় বড় পাতিলে রান্না পাকানো হয়। ছোলা, পেঁয়াজু, জিলাপিসহ কয়েকটি আইটেম রান্না করা হয়। কয়েকটি আইটেম বাইর থেকে আনা হয়। মসজিদের নিজস্ব ডিপ টিউবঅয়েল থেকে পানি সরবরাহ করা হয়। ইফতার আয়োজনে অংশ নেওয়া রোজদাররা আসরের নামাজের পর থেকে মসজিদে অবস্থান শুরু করেন। আর মসজিদে প্রতিদিন আসরের নামাজের পর শুরু হয় রমজানের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা। চলে ইফতারের আগ পর্যন্ত। এরপর মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় আলোচনা।