আট বছরেও চালু হয়নি চসিকের খাদ্য পরীক্ষাগার

29

 

ওয়াসিম আহমেদ

অবকাঠামোগত সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত হওয়ার আট বছর পরও চালু হয়নি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন খাদ্য পরীক্ষাগার। জনবল নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতাতে আটকে আছে সম্ভাবনাময়ী ল্যাবটি। তবে মন্ত্রণালয়ের দিকে চেয়ে না থেকে অস্থায়ী নিয়োগ বা অভিজ্ঞ প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির মাধ্যমে ল্যাবটি পরিচালনার চিন্তা করেছেন সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। এমন তথ্য দিয়ে পূর্বদেশকে তিনি জানান, ‘নগরীতে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে পড়ে থাকা ল্যাবটিকে কাজে লাগানোর চিন্তা করছি। আগামী মাসেই একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে এবং ইউপিইএইচএসডিপির আওতায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি খাদ্য পরীক্ষাগার নির্মাণকাজ শুরু হয়। চট্টগ্রামে নগরীর ৭নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়সংলগ্ন স্থানে নির্মাণ করা হয় তিন তলাবিশিষ্ট আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগার।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয় এর নির্মাণকাজ। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে পরীক্ষামূলকভাবে কার্যক্রম শুরু হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির অর্গানোগ্রামের অনুমোদন চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়েও পাঠিয়েছে চসিক। এরই মধ্যে ২০২১ সালের জুন মাসে প্রতিষ্ঠানের বকেয়া বিলের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ৬ লাখ ৮২ হাজার ২২২ টাকা বকেয়া পরিশোধ নিয়ে চলে টানাপোড়েন। এরপর বিল পরিশোধ করে বর্তমানে বিদ্যুৎ সংযোগ সচল রয়েছে বলে জানায় সূত্র।
চসিক সূত্র জানায়, ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এ খাদ্য পরীক্ষাগারটি নির্মাণ করা হয়। জনবল কাঠামো অনুমোদন না পাওয়ায় পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এই পরীক্ষাগারটি। ২০২১ সালের ৭ মার্চ ১৬টি পদের জনবল কাঠামো অনুমোদন দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবুও কাক্সিক্ষত জনবল ও প্রবিধান মালা অনুমোদন না হওয়ায় আবারও জটিলতা শুরু হয়।
জানা গেছে, পরীক্ষামূলক চালু হওয়ার পরই ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল ল্যাবটিতে খাদ্যের নমুনা পরীক্ষার অনুমতি চেয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর ‘মান রক্ষা করা, প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ জনবল নিয়োগ এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন ও তার রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা’- এই তিন শর্তে পরীক্ষার অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর থেকেই ল্যাবে সিটি করপোরেশনের খাদ্য পরিদর্শকদের মাধ্যমে সংগৃহীত খাদ্যপণ্য ও খাবার পানিসহ বিভিন্ন পানীয় পরীক্ষামূলক টেস্ট করা হচ্ছে। তবে কোনো সাইনিং অথরিটি না থাকায় টেস্টের পরবর্তী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে পুরোপুরি চালু হলে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ভ‚মিকা রাখার পাশাপাশি রাজস্ব আদায়েও অবদান রাখতে পারবে পরীক্ষাগারটি। চট্টগ্রাম নগরীতে যতগুলো হোটেল-রেস্টুরেন্ট বা খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোকে সিটি করপোরেশন থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। কিন্তু কোনো ল্যাব না থাকায় তাদের খাদ্যের মান যাচাই করার সুযোগ সিটি করপোরেশনের নেই। ল্যাবটি কাজ শুরু করতে পারলে এবং সিটি করপোরেশন চাইলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের খাদ্য নমুনা ও মান পরীক্ষাপ‚র্বক লাইসেন্স দিতে পারবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে অনেক খাদ্য রপ্তানি ও চট্টগ্রামে অনেক খাদ্য আমদানি হয়। সেগুলোর মানও যাচাই করতে পারবে চসিকের বহুলপ্রতীক্ষিত আধুনিক এই খাদ্য পরীক্ষাগার বা ‘ফুড সেফটি ল্যাবটি’।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অর্গানোগ্রাম (জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষক পদে নিয়োগসহ) অনুমোদন দিতে এবং দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করায় আমরা এখনও ল্যাবরেটরটি চালু করতে পারিনি। তবে এখন আমরা পরিকল্পনা করছি কিভাবে সেটিকে কাজে লাগানো যায়।’