অবশেষে খুলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান! বদ্ধ দুয়ারে আলোর ঝিলিক

33

 

অবশেষে আলোর দেখা মিলবে তো! শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাকদের এমন সন্দেহজনক প্রশ্নের মধ্যেই আমাদের বিশ্বাস আগামী নভেম্বর থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে আর ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা হবে। সেইসাথে দীর্ঘ ২০ মাস বন্ধের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দুয়ার খুলবে। কোলাহলে মেতে উঠবে শিক্ষাঙ্গণ। আবারও স্বাভাবিক হবে শিক্ষা কার্যক্রম। আলোয় আলোয় ভরে যাবে শ্রেণি কক্ষ। আমরা জানি, বৈশ্বিক করোনা মহামারির সংক্রমণ দেশে দেখা দিলে গত বছরের মার্চ মাস থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে থাকায় নানা বিধিনিষেধের মধ্যে আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হয়নি। ফলে ২০২০ সালে এইচএসসি পরীক্ষা নিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলো। জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে এইচএসসির ফল দেওয়া হয়। এবারও কয়েক দফায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার চেষ্টা চালিয়েও শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। ফলে পাঠদান কর্মসূচিতেও ব্যাঘাত ঘটেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করে পরবর্তী দুই সপ্তাহ পর এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এসএসসি ও সমমানের জন্য ৬০ দিন এবং এইচএসসি ও সমমানের জন্য ৮৪ দিনে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করার পর দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে দুই পাবলিক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে তা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত সরকারও পরীক্ষা নিতে চায় না। তবে আশার কথা হচ্ছে, করোনা সংক্রমণের নিম্নমুখী অবস্থা অব্যাহত থাকলে দেরিতে হলেও এবারের দুই পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়। গত বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি স্বয়ং গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আগামী নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এসএসসি ও ডিসেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য সরকার সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দিন দিন করোনা সংক্রমণের হার কমছে। কিছুদিন আগেও এই সংক্রমণের হার ছিল ৩০-৩২ শতাংশ। এখন সেটা কমে ২২-২৩ শতাংশে নেমে এসেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে এই হার কমছে। আমরা আশা করছি, পরিস্থিতি অনুকূলে চলে আসবে। দীপু মনি বলেন, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরীক্ষা নিতে প্রস্তুত। ইতোমধ্যে ফরম পূরণও শুরু হয়েছে। এসএসসির ফরম পূরণ আগেই শুরু হয়েছে। ১২ আগস্ট বৃহস্পতিবার থেকে এইচএসসির ফরমও পূরণ শুরু হয়েছে। তিনিন আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের সিলেবাসও অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের যে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যদি তারা করে এবং বইটা পড়ে তাহলে তাদের প্রস্তুতিটা হয়ে যাবে। তারা পরীক্ষা দিতে পারবে।
দীপু মনি শিক্ষার্থীদের জন্য টিকার প্রয়োজনীয়তার কখা উল্লেখ করে আশা করেছেন, শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা হবে । আমরা দেখেছি, এর আগে গত বছরের ২৫ নভেম্বর এক ভার্চুয়াল ব্রিফিং-এ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছিলেন, ২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য তিন মাসে শেষ করা যায় এমন একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে। তিনি তখন বলেছিলেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে আমরা শিক্ষার্থীদের তিন মাস ক্লাস করাতে চাই। সে কারণে হয়তো এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দুই-এক মাস পিছিয়ে যাবে। কিন্তু করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্টের কারণে এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই খোলা সম্ভব হয়নি। সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
দেশে মহামারি করোনার দ্বিতীয় আঘাতের কারণে চলতি বছরের জুনে এসএসসি ও সমমান এবং জুলাই-আগস্টে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেওয়ার কথা থাকলেও নেওয়া সম্ভব হয়নি। করোনা নতুন ধরণ ডেল্টা আঘাত হেনেছে দেশে। যদিও সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে, এবার উভয় পরীক্ষায় গ্রুপভিত্তিক নৈর্বাচনিক তিন বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হবে। আর পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলে, অ্যাসাইনমেন্ট ও সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফলাফল প্রণয়ন করা হবে। সরকার এবার কঠোর লকডাউন তুলে নিয়ে শর্তসাপেক্ষে সবকিছুই মুক্ত করে দিয়েছে। আমরা আশা করছি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহও খুলে দেয়ার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে-তা অব্যাহত থাকবে। করোনায় দেশের সামগ্রিক ক্ষতির তালিকায় শীর্ষে থাকবে শিক্ষা। কারণ শিক্ষার দীর্ঘ বন্ধের সাথে দেশ ও জাতির অনেক অগ্রগতিও বন্ধ হয়ে গেছে-এটি আমাদের মানতেই হবে। আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কক্ষগুলো অন্ধকারে থাক সেটা আর চাই না। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কলরব আর আলোয় উদ্ভাসিত হোক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-এটিই আমাদের প্রত্যাশা।