অবশেষে আলোর মুখ দেখছে ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্প

126

‘চট্টগ্রাম ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যুয়ারেজ অথরিটি’ বা চট্টগ্রাম ওয়াসা। নামের সাথে স্যুয়ারেজ শব্দটি যুক্ত থাকলেও এতোদিন স্যুয়ারেজ সুবিধা ছিলো না চট্টগ্রাম ওয়াসায়। ফলে পয়ঃবর্জ্য যত্রতত্র মিশে পরিবেশের ক্ষতি করে আসছিলো। অবশেষে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ হচ্ছে আগামী সপ্তাহে। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কাজে হাত দিচ্ছে ওয়াসা।
গত বছরের নভেম্বরে চট্টগ্রামের প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকার প্রকল্পটি নগরীর একটি অংশের (উত্তর-পশ্চিম অংশ) জন্য নেয়া হয়েছে। নগরীর ৬ ভাগের এক ভাগ লোকের জন্য নেয়া এই প্রকল্পে পয়ঃবর্জ্য অপসারণ করা হবে পাইপলাইন ও খালের মাধ্যমে। এসব বর্জ্য থেকে উৎপাদন করা হবে কম্পোস্ট সার। চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিষ্ঠার ৬৫ বছর পর নেয়া প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি প্রণয়নের আগে স্যুয়ারেজ মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়। মাস্টারপ্ল্যানের আলোকে হালিশহর ও আশপাশের এলাকা নিয়ে প্রকল্পটি তৈরি করা হয়।
একনেকে পাস হওয়া প্রকল্পটির পরামর্শক নিয়োগের জন্য ইতিমধ্যে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। গত ২৩ অক্টোবর পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনও মিলেছে। আগামী ২২ অথবা ২৩ নভেম্বর পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে ওয়াসার এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চুক্তি স্বাক্ষরের পর মাঠপর্যায়ে কাজ করবে। আগামী বছরের মার্চের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে আগামী সেপ্টেম্বরে প্রকল্পের মাঠপর্যায়ে কাজ শুরুর পরিকল্পনা করছে ওয়াসা।
ওয়াসার তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, চলতি মাসেই আমরা কারিগরি পরামর্শক নিয়োগের বিষয়ে চুক্তি সই করবো। মালয়েশিয়ান এরিন কো. নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে এই চুক্তি সই হবে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক কাজ করবে। এরপর ঠিকাদার নিয়োগ করে প্রকল্পের মূল কাজ শুরু করা হবে। আমরা আশা করছি, আগামী বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে ঠিকাদার কাজ শুরু করতে পারবেন।
১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হলেও এতোদিন শুধু নগরবাসীকে সুপেয় পানি সরবরাহ করে আসছিল সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘ সময় পর এসে স্যুয়ারেজ প্রকল্প হাতে নেয় ওয়াসা। ইতিমধ্যে স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার উপর একটি মাস্টারপ্ল্যানও তৈরি করেছে ওয়াসা। মাস্টারপ্ল্যানে পুরো নগরীকে ৬টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এতে প্রত্যেকটি জোনকে আলাদা আলাদাভাবে স্যুয়ারেজ প্রকল্পের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে একনেকে পাস হওয়া ডিপিপিতে স্যুয়ারেজ প্রকল্পের আওতায় আছে নগরীর হালিশহর, সাগরিকা, সল্টগোলা ক্রসিং, শেখ মুজিব রোড, কদমতলী, সদরঘাট, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, লালখান বাজার, নিউমার্কেট, কোতোয়ালী, জামালখান ও আন্দরকিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকা। পুরো এলাকার স্যুয়ারেজ বর্জ্য পাইপলাইন ও খাল-নালার মাধ্যমে সংগ্রহ করে তা হালিশহর কেন্দ্রীয় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে পরিশোধনের কথা বলা হয়েছে। হালিশহর এলাকায় ১৬৫ একর জায়গায় প্রকল্পটি স্থাপন করা হবে। প্রকল্পের অধীনে মোট ২০০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন, ১৫টি পাম্প স্টেশন, ১৪৪ কিলোমিটার সার্ভিসলাইন ও ৮০ হাজার ঘনমিটার ধারণক্ষমতার পয়ঃশোধনাগার স্থাপন করা হবে। বাসাবাড়ির পয়ঃবর্জ্য সংগ্রহ করে পরিশোধন করা হবে। প্রকল্পের সুবিধাভোগী হিসেবে ধরা হয়েছে প্রায় ২০ লাখ মানুষ। ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে।
ওয়াসা সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর ধাপে ধাপে পুরো নগরীতে স্যুয়ারেজ সিস্টেম চালু করা হবে। ছয়টি জোনের প্রতিটির জন্য পৃথক পৃথক স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থাকবে। আবার এ ছয়টি জোনের সেফটিক ট্যাংকের শক্ত বর্জ্য পরিশোধনের জন্য থাকবে দুইটি শোধনাগার। স্যুয়ারেজ লাইনে বৃষ্টি, গৃহস্থালি ও টয়লেটের পানি আসে। প্রকল্পের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি ছাড়া বাকি সব পানি পাইপের সাহায্যে প্রতি ঘর থেকে সংগ্রহ করা হবে। এসব বর্জ্য পাইপের মাধ্যমে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে চলে যাবে। সেখানে পরিশোধন হয়ে কম্পোস্ট তৈরি করা হবে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ধারণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চট্টগ্রাম বোট ক্লাবে অনুষ্ঠিত ওয়াসার একটি অনুষ্ঠানেই জরুরি ভিত্তিতে স্যুয়ারেজ প্রকল্প গ্রহণের জন্য ওয়াসাকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি। কর্ণফুলী নদীকে দূষণের হাত থেকে রক্ষায় স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ওপর জোর দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।