‘অনিয়ম, অবহেলা ও গাফিলতিতেই দুর্ঘটনা’

15

নিজস্ব প্রতিবেদক

সীতাকুন্ডের কদমরসুল এলাকায় সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও গাফিলতি চিহ্নিত করে আট পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) সুদীপ্ত সরকার ও ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা আবদুল হালিম উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান রাকিব হাসান বলেন, ‘সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের ঘটনা গত এক দশকে বাংলাদেশে প্রথম। গত ১০ বছরে বিশ্বে চার থেকে পাঁচটি বিস্ফোরণের ঘটনা ছিল। ফলে এ ঘটনা ছিল অস্বাভাবিক ও বিরল। এজন্য আমরা অভিজ্ঞ অনেকের মতামত নিয়েছি। মূলকথা হলো- এতবড় একটি ঘটনায় কর্তৃপক্ষের কিছু গাফিলতি ছিল, কিছু অনিয়মও হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তদন্ত প্রতিবেদনে ৯টি সুপারিশ পেশ করেছি। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়। তবে প্রতিবেদনে উঠে আসা সব বিষয় আমরা এখন জানাতে পারছি না। সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানাবো।’
প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর ডিসি আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, তদন্ত কমিটি সিলগালা প্যাকেটে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনটি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদন দেখবেন এবং তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী দু-একদিন পর তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে গণমাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, সীতাকুন্ডে অপরিকল্পিতভাবে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে। এখনে স্থাপিত শিল্প কারখানাগুলোতে কোনো পানির রিজার্ভার নেই। সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের বিস্ফোরণের দুদিনের মাথায় ইউনিটেক্স গ্রুপের ভাড়া করা তুলার গুদামেও আগুন লাগে। আগুন নেভাতে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীও কাজ করেছে। পানির জন্য আগুন নেভাতে হিমশিম খেতে হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের ঘটনার পর আমরা ভারী ও মাঝারি শিল্পের জন্য মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি। চট্টগ্রামে যেসব অক্সিজেন প্ল্যান্ট আছে সেগুলোর জন্য একটি ম্যানুয়েল তৈরি করতে চাই। একটি বড় প্রতিষ্ঠান, যাদের কমপ্লায়েন্স ভালো তারা এগিয়ে এসেছে। ঝুঁকিপূর্ণ যেসব কারখানার আছে, সেগুলোতে ২-৩ দিনের মধ্যে পরিদর্শন শুরু হবে। কয়েকটি টিমে ভাগ করে সরকারি সব স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে পরিদর্শন হবে। বাকি সুপারিশগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো উদ্যোগ নেবে বলে আশা করি।
ডিসি বলেন, চট্টগ্রামের অক্সিজেন প্ল্যান্টের মালিক-কর্মকর্তাদের নিয়ে ওয়ার্কশপের আয়োজন করেছি। আগামী ২০ মার্চ সার্কিট হাউজে এ ওয়ার্কশপ হবে। কীভাবে একটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট চালাতে হয়, আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কী কী লাগে, কোন কোন নিয়ম মানতে হয়, সে বিষয়গুলো ওয়ার্কশপে তুলে ধরা হবে।
এর আগে গত ৪ মার্চ বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে কদমরসুলের কেশবপুর এলাকায় সীমা স্টিল অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ এ বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে কয়েক কিলোমিটার এলাকা। ঘটনাস্থলের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছিটকে পড়ে বিস্ফোরিত ইস্পাতের টুকরো। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে এক ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত সাতজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। ঘটনার পরপরই প্রশাসনের পক্ষ থেকে কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশনা দিলেও তদন্ত কমিটি সময় বাড়িয়ে গতকাল প্রতিবেদন জমা দেয়।