অগ্নিনাশকতায় ভর করেছে কারা?

45

নিজস্ব প্রতিবেদক

সীতাকুন্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুনের ঘটনাটি নাশকতা কিনা সেদিকটাই গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে গোয়েন্দা ও তদন্ত সংস্থাগুলো। ইতোমধ্যে গোয়েন্দা দপ্তরের কাছে নাশকতার তথ্য পৌঁছেছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। যে নাশকতার সূত্রপাত হয়েছিল সীতাকুন্ডের বিএম ডিপো থেকেই। অর্থাৎ সীতাকুন্ডের ডিপো থেকে শুরু হওয়া নাশকতার আগুন সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তা তদন্ত করছে গোয়েন্দাসংস্থাগুলো।
সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের ধারণা, আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বরাবরের মতো আগুন সন্ত্রাসকে বেছে নিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। সরকারের পক্ষ থেকে সারাদেশে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উৎসব পালনকে ভেস্তে দিতেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সারাদেশে আগুন ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আওয়ামী লীগের এক সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সীতাকুন্ডের বিএম কনটেইনার ডিপো, সিলেটে ট্রেনে আগুন ও পদ্মায় ফেরিতে অগ্নিকাÐের ঘটনার তদন্ত চলছে। নাশকতার কিছু কিছু তথ্যও গোয়েন্দাদের কাছে রয়েছে। আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, আগুন নিয়ে খেলবেন না। আগুন নিয়ে খেললে আগুনেই পুড়ে মরবেন। আপনাদের মিথ্যাচার, গণবিরোধী ও আগুন সন্ত্রাসীর রাজনীতি পুড়ে মরবে সেই আগুনে, যে আগুন আপনারা আমাদের বিরুদ্ধে জ্বালাতে চান।
জানা যায়, সীতাকুন্ডে বিএনপি-জামায়াতের দাপট পুরানো। ২০১৪ সালে জ্বালাও পোড়াও অগ্নিসন্ত্রাসের সময় উত্তপ্ত জনপদ ছিল সীতাকুন্ড। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঘিরে বিএনপি-জামায়াত চক্র সীতাকুন্ড থেকেই নাশকতার রূপরেখা বাস্তবায়ন করতো। উত্তর চট্টগ্রামের এই জনপদে যত নাশকতার পরিকল্পনা হয়েছে তার বেশিরভাগই সীতাকুন্ড থেকে সূত্রপাত হয়। বিএনপি-জামায়াতের কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে সীতাকুন্ড থেকে গ্রেপ্তারও করা হয়। এবারো সীতাকুÐের বিএম ডিপোতে অগ্নিকান্ডের পর সারাদেশে অগ্নিকান্ডের সংখ্যা বাড়তে থাকায় নাশকতার সন্দেহ বেড়েছে। বিএম ডিপোতে আগুন লাগার পর কয়েকটি আলামত সে সন্দেহ আরো বাড়িয়েছে।
বিএম ডিপোর পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এটি দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা খতিয়ে দেখতে হবে। অনেকগুলো হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের কন্টেইনার থাকলেও বিস্ফোরণ হয়েছে একটি। বাকিগুলো অক্ষত রয়েছে। আবার ডিপোজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্লাস্টিকের জারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়াটাও সন্দেহজনক। কেন এমন হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে হবে।’
এর আগে বিএম কন্টেইনার ডিপো পরিদর্শন করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও সীতাকুন্ডের আগুনে নাশকতা ছিল কিনা খতিয়ে দেখার আহব্বান জানান।
গত ৬ জুন সীতাকুন্ড সফর শেষে তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণার প্রেক্ষিতে সমগ্র দেশে সৃষ্ট আনন্দ উল্লাসকে অবদমিত করতেই সীতাকুন্ডে কন্টেইনার ডিপোতে নাশকতা করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি দেশের ভাবমূর্তি এবং রপ্তানি বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে করা, তাও দেখা হচ্ছে।
নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএম ডিপোতে কোনও বিস্ফোরক ছিল না। যেহেতু বিস্ফোরক নয়, এ কারণে সে ঘোষণা তারা দেয়নি। এটা দীর্ঘদিন ধরেই রপ্তানি হচ্ছে, বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রপ্তানি পণ্য হিসেবেই মজুদ ছিল। সব কোড মেনেই এখানে ডিপো করা হয়েছে। যতটুকু দেখলাম, কিছু কন্টেইনারে আগুন, মাঝে আবার কিছু হয়নি। আবার পরে হয়েছে। এটা সন্দেহজনক, অস্বাভাবিক আগুন।