লাইসেন্সধারী ‘দশ হাজার’ ট্যাক্সিচালক বেকার

69

চট্টগ্রাম মহানগরীতে থ্রি-হুইলার লাইসেন্সপ্রাপ্ত ১০ হাজারেরও বেশি চালক বেকার জীবনযাপন করছেন। নগরীর রেজিস্ট্রেশনকৃত ১৩ হাজার ট্যাক্সি বদলী চালিয়ে কিছু চালক কোন রকমে চলতে পারলেও বাকিগুলো একেবারেই অসহায়। লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও চালকদের বাধ্য হয়ে বাসের হেলপারি বা কন্ট্রাক্টরি হিসেবে কাজ করতে হচ্ছে।
লাইসেন্সধারী চালকরা বলছেন, পরিপক্ক চালক হওয়ার পরও নগরীতে পর্যাপ্ত ট্যাক্সির অনুমোদন না থাকায় আজকে আমাদের বেকার থাকতে হচ্ছে। কেউ কেউ রাতের বেলা বদলী চালাতে পারলেও বেশিরভাগ সিএনজি ট্যাক্সি চালকই এখন বেকার জীবনযাপন করছেন। তাই আমাদের দিকে সরকারের সুনজর কামনা করছি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগরীতে সিএনজি চালিত অটোরিকশা বা ট্যাক্সি রয়েছে ৩০ হাজারেরও বেশি। যার মধ্যে সিলিং অর্থাৎ মহানগরীতে চলাচলের উপযোগী রয়েছে মাত্র ১৩ হাজার। বাকিগুলো পুলিশ-প্রশাসনের ভয়ে সড়কে চলাচল না করলেও অলি-গলিতে ঠিকই চলছে। কিন্তু পরিপক্ক লাইসেন্সধারী চালকদের একটি সুনির্দিষ্ট পরিচয় থাকার ফলে তারা অবৈধ গাড়ি চালাতে চান না। তারা চান, সরকার মহানগরীর জন্য নতুন করে সিলিং বৃদ্ধি করোক।২০১৩ সালের ১৩ মার্চ সড়ক বিভাগের সম্মেলন কক্ষে বিআরটিএ চেয়ারম্যান যোগাযোগ মন্ত্রীকে অবহিত করেন যে, সিএনজি/পেট্রোলচালিত ৪ স্ট্রোক থ্রি-হুইলার সার্ভিস নীতিমালা ২০০৭ এ চট্টগ্রাম শহরের জন্যে সিএনজি অটোরিকশার সিলিং ১৩ হাজার নির্ধারিত আছে। চট্টগ্রাম শহরের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদার তুলনায় সিএনজি অটোরিকশার সিলিং সংখ্যা কম। জনসাধারণের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় এনে চট্টগ্রামে নির্ধারিত সিলিং সংখ্যা ১৩ হাজারের অতিরিক্ত আরও ৫ হাজার বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
এতে মন্ত্রীর পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত আসে- বিআরটিএ’র প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে একটি বরাদ্দ নীতিমালা তৈরি করে চট্টগ্রাম শহরের জন্য অতিরিক্ত ৪ হাজার সিএনজি অটোরিকশা বরাদ্দ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এতে চট্টগ্রাম শহরের সিএনজি ট্যাক্সির সংখ্যা দাঁড়াবে ১৭ হাজার। তবে শর্ত থাকবে যে, এ সমস্ত সিএনজি অটোরিকশা চট্টগ্রাম মহানগরের বাইরে যেতে পারবে না এবং শহরের বাইরের সিএনজিও শহরে প্রবেশ করতে পারবে না। এছাড়াও চট্টগ্রাম শহরে যে সমস্ত যানবাহন অবৈধভাবে চলাচল করছে তা আইনানুগভাবে জরুরি ভিত্তিতে অপসারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে একইভাবে ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সম্মেলন কক্ষে মহানগরীতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সভায় একই সিদ্ধান্ত দেন তৎকালীন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন, পুলিশ কমিশনার মো. ইকবাল বাহার ও জেলা প্রশাসক মো. শামসুল আরেফিন।
কিন্তু ২০১৮ সালের ১৫ মার্চ হাইকোর্টের রায়ে নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে চট্টগ্রাম মহানগরীতে অতিরিক্ত নতুন সিএনজি অটোরিকশা/ট্যাক্সি অনুমোদন দেয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেন বিআরটিএ উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম শহরের জন্য সিএনজি/পেট্রোলচালিত ৪ স্ট্রোক থ্রি-হুইলার সার্ভিস নীতিমালা ২০০৭ এ চট্টগ্রাম শহরের জন্যে সিএনজি অটোরিকশার সিলিং ১৩ হাজার নির্ধারিত রয়েছে। নির্ধারিত সংখ্যক থ্রি-হুইলার অটোরিকশার সিলিং চট্টগ্রাম বিআরটিএ, রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ থেকে ইতোপূর্বে রেজিস্ট্রেশন প্রদানের মাধ্যমে পূরণ করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জারিকৃত নীতিমালায় উল্লিখিত চট্টগ্রাম শহরের জন্য নির্ধারিত সংখ্যা ১৩ হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার সংশ্লিষ্ট অংশটুকু সরকার কর্তৃক পরবর্তী সময়ে সংশোধনপূর্বক বৃদ্ধি না করা পর্যন্ত নতুন করে চট্টগ্রাম শহরের জন্য আর কোন আনরেজিস্টার্ড সিএনজি ট্যাক্সি/পেট্রোল চালিত ৪-স্ট্রোক থ্রি-হুইলারকে রেজিস্ট্রেশন প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আদালত পরবর্তী নির্দেশনা প্রদান করলে চট্টগ্রাম অটোরিকশা-অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের আবেদনটি বিবেচনা করা হবে।
এদিকে মানবেতর জীবনযাপন করা ট্যাক্সিচালক মো. ইসমাঈল আলী বলেন, লাইসেন্স থাকা সত্তে¡ও আমরা আজ বেকার। একটা সিএনজি ট্যাক্সির বিপরীতে ২ থেকে ৩টা ড্রাইভারের চাহিদা থাকে। ফলে মালিকরাও যে ইনকাম বেশি দিতে পারবে তাকেই সিএনজি ট্যাক্সি ভাড়া দেন।
আরেক সিএনজি ট্যাক্সি চালক মো. মিরাজ বলেন, আমাদের গ্যারেজে সিএনজি ট্যাক্সি আছে ৪৫টি কিন্তু গাড়ির চালক আছে ১০০ জনেরও বেশি। কেউ দিনে গাড়ি চালালে আর কেউ রাতে চালায়। অর্থাৎ, শিফট করে আমাদের সংসার টানতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম অটোরিকশা-অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশিদ জানান, করোনা মহামারির সময় আমার সংগঠনের সাধ্যমত সকলের পাশে থাকার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে আমাদেরকে নতুন গাড়ি রেজিস্ট্রেশন প্রদান করা হচ্ছে না। যদি নতুন করে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন প্রদান করতো তবে চালকদের এমন ভয়াবহ অবস্থায় পড়তে হতো না। সরকার ও হাইকোর্ট যদি এ বিষয়ে একটু সু-নজর দেন, তবে চালকরা আর বেকার থাকবেন না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ পূর্বদেশকে বলেন, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে নতুন কোন রেজিস্ট্রেশন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে আদালত যদি পজিটিভ কোন সিদ্ধান্ত দেন, তবে আমাদের রেজিস্ট্রেশন দিতে বাঁধা থাকবে না।