প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হলো দুর্গোৎসব

124

বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রতিমা বিসর্জন করা হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে একে একে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
বির্সজন ও দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে সমুদ্র সৈকতে হাজার হাজার ভক্ত ও অনুরাগী ভিড় করেন। সকাল ১১টা থেকে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন পূজা মন্ডপ থেকে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য ট্রাকবাহী প্রতিমা নিয়ে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে পূজারি ও ভক্তরা ছুটে যান সৈকতে। শংখ, উলুধ্বনি ও বাদ্যের ঘণ্টা বাজিয়ে জয়, দুর্গা মায়ের জয়’ বলে একের পর এক প্রতিমা ভাসিয়ে দেওয়া হয় সাগরে। তবে অন্যান্যবারের মতো ছিলনা শোভাযাত্রা ও আনন্দ আয়োজন।
এদিকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় নগরীর ২৭৩টি পূজামন্ডপে পূজা-অর্চণা, শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে দেবী দুর্গার ভক্তরা সময় কাটান। গতকাল সোমবার দেবী দুর্গার বিসর্জন দিতে নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, নেভাল ২, কালুরঘাট ও অভয়মিত্র ঘাট এলাকায় ভিড় জমান ভক্তরা।
হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, এ বছর দেবী দুর্গা মর্তে এসেছেন দোলায় চড়ে। কৈলাসে ফিরে যাচ্ছেন গজে (হাতি) চেপে। ‘দোলায়াং-মড়কং-ভবেৎ’- অর্থাৎ মা দোলায় চড়ে এলে দেখা দেয় মড়ক।আবার ‘গজে চলে জলদা দেবী শস্যপ‚র্ণা বসুন্ধরা’? অর্থাৎ মা গজে গমন করলে পৃথিবীতে জলের সমতা বজায় থাকে এবং শস্য ফলন ভালো হয়? সুখ সমৃদ্ধিতে পরিপ‚র্ণ থাকে মর্তভ‚মি?
সার্বজনীন এই উৎসবের প্রথম দুইদিন বৃষ্টি থাকায় ভক্তদের উপস্থিতি ছিল কম। তবে বৃষ্টি কমার সাথে সাথে মন্ডপে মÐপে সনাতন সম্প্রদায়ের সকল বয়সের নারী-পুরুষ আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেন। পাশাপাশি দুর্গতিনাশিনী দেবীদুর্গার কৃপা লাভের আশায় তারা আরাধনায় মত্ত থাকেন।
প্রতিবারের ন্যায় এ বছরও দুর্গাপূজা উপলক্ষে নগরজুড়ে পূজা মন্ডপগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। প্রতিটি পূজামন্ডপে বিপুলসংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। প্রতিমা বিসর্জনের দিনও পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিন গতকাল সোমবার ছিল বিজয়া দশমী। উমার (দেবীদুর্গা) ফিরে যাওয়ার দিন। ‘অকাল বোধনে’ কৈলাস থেকে শরতের পঞ্চম তিথিতে দোলায় চড়ে উমা আসেন পিতৃগৃহে। পাঁচ দিন পর দশমী তিথিতে আবার ফিরে যান কৈলাসে। দিন শেষে দেবী দুর্গার বিদায় বেলায় আনন্দ-বেদনার মিশ্রণ অনুভূতিতে ‘মা দুর্গা’র ভক্তদের হৃদয় সিক্ত করে তোলে।
প্রিতম দে নামে একজন জানান, দুর্গাপ‚জার শেষ দিন হিসাবে দশমী শোকের ছায়া বহন করলেও শাস্ত্রে এই বিষয়টিকে সেভাবে দেখা হয়নি। এ প্রসঙ্গে শ্রীরাম কৃষ্ণদেবের একটি কাহিনী উল্লেখযোগ্য। রানী রাসমণীর জামাতা মথুরবাবু একসময় আবেগপ্রবণ হয়ে দশমীর দিনেও মা দুর্গাকে বিসর্জন দেবেন না বলে জেদ ধরে বসেন। তখন রামকৃষ্ণদেব তাঁকে বোঝান, বিজয়ার অর্থ দেবী মা ও সন্তানের বিচ্ছেদ নয়। মা কখনও তার সন্তানের থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারেন না। এতদিন মা দালানে বসে পূজো নিয়েছেন এরপর মা হৃদয়মন্দিরে বসে পূজো নেবেন। এরপরেই মথুর শান্ত হন এবং বিসর্জন হয় মা দুর্গার প্রতিমা।
মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি চন্দন তালুকদার বলেন, আজকে মায়ের প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে এ বছরের শারদীয় দুর্গাপূজা শেষ হয়েছে। মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে এ বছর সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে আয়োজন হয়েছে উৎসবের। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ বছর পূজা উদযাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগিতা আমাদের উৎসবকে সুন্দর ও সাফল্যমন্ডিত করেছে।
শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রতিমা বিসর্জনের উপসিস্থত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন। এ সময় তিনি বলেন, সনাতন ধর্মের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে অসুর নিধন করে সুর-সত্য-সুন্দর-মঙ্গলের বার্তা প্রদান করে কৈলাষে ফিরে যাচ্ছে। একে আমরা বিসর্জন বা নিরঞ্জন যাই বলিনা কেন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্তরে চির জাগরুক থাকবেন। করোনা মহামারি বিনাশে এবারে শারদীয় দুর্গোৎসব সংযম শৃঙ্খলায় শান্তি সম্প্রীতির জয়গান গাওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ধর্ম পরিচয়ে কোনো মানুষকে অবহেলা করা যাবে না। সংবিধানের ঘোষণাকে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে অর্জিত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক ধারায় ফিরিয়ে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে শৃঙ্খলার সাথে দুর্গা পূজা সম্পন্ন করায় মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।