চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস

86

করোনা প্রাদুর্ভাবের ফলে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্যে ‘ভয়াবহ ধস’ নেমেছে। ফলে সবধরনের পণ্যের দাম এখন নিম্নমুখি। ফলে স্বস্তি এসেছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের মাঝে।
করোনা সংক্রমণের কারণে সাধারণ ছুটি ঘোষণা ও অঘোষিত লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছিল। এদিকে ঘনিয়ে এসেছে কোরবানির ঈদ। অন্যান্য বছর এ সময়ে বেচাকেনা ছিল বেশি। কিন্তু এবার বেচাকেনা ৭০ শতাংশ কম বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
দাম কমাতে সাধারণ মানুষের মাঝে ফিরেছে স্বস্তির আশ্বাস। ভোক্তারা বলেন, এতদিন ব্যবসায়ীরা আমাদেরকে জিম্মি করে সবকিছু থেকে অতিরিক্ত দাম নিয়ে ব্যবসা করেছিল। তাই সৃষ্টিকর্তা এখন তাদেরকে দেখিয়ে দিচ্ছে, দাম বাড়ানোর মজা কতো।
সরেজমিন খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ে দেখা গেছে, পণ্য বেচাকেনার ক্ষেত্রে যে ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) বাণিজ্য ছিল, তা এখন নেই বললেই চলে। গত তিন মাসে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এবং উপসর্গ নিয়ে এ বাণিজ্য কেন্দ্রের অন্তত ৮-১০ জন ব্যবসায়ী মারা গেছেন। এ কারণে অনেকের মধ্যে রয়েছে হতাশা ও উদ্বেগ। ব্যবসায়ীদের মধ্যে যেমন করোনাভীতি কাজ করছে, তেমনি ক্রেতাদের মধ্যেও। তাই বলতে গেলে সীমিত আকারেই চলছে এ বাণিজ্য কেন্দ্রের ব্যবসা-বাণিজ্য। ভোগ্যপণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে ডিও বা স্লিপ বাণিজ্য না থাকায় পণ্যের দামে যে হঠাৎ উত্থান বা হঠাৎ পতন হতো তাও নেই।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বছর এ সময় প্রতিটি ব্যবসায়ী ১৫ লাখেরও বেশি টাকা আয় করতে পেরেছিলেন। কিন্তু এবারে তার উল্টো। গতানুগতিক যে বেচাবিক্রি হয়, তাও কমে গেছে।
জানা যায়, খাতুনগঞ্জ-চাক্তাই থেকেই তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান, পর্যটননগরী কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলায় খাদ্যপণ্য সরবরাহ হয়ে থাকে। চট্টগ্রামে সমুদ্রবন্দর থাকার কারণে পণ্যের মজুদ ও সংরক্ষণের জন্য খাতুনগঞ্জকেই ব্যবসায়ীরা আদর্শ স্থান হিসেবে বেছে নেন। বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের অন্যান্য অনেক জেলার খাদ্যপণ্যের যোগানও দেয়া হয় এখান থেকে। গত চার মাস আগেও প্রতিদিন কয়েকশ’ ট্রাক পণ্য নিয়ে আসা-যাওয়া করত। যদিও ৫-৭ বছর আগেও খাতুনগঞ্জ থেকেই ভোগ্যপণ্যের বিশাল অংশ সারা দেশে চট্টগ্রাম থেকেই সরবরাহ হতো।
এখন রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা ভোগ্যপণ্যের ব্যবসার বিস্তার ঘটিয়েছেন। তাই শুধু খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ের ওপর এখন আর নির্ভর থাকতে হচ্ছে না তাদের। এ কারণেও বেচাকেনা আগের চেয়ে কমেছে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধসের পাশাপাশি ট্রেডিং বন্ধ থাকায় ভোগ্যপণ্যের ডিও’র দামে যে আকস্মিক উত্থান-পতন ঘটত, তাও থেমে গেছে। বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চিনি, গম ও মসলাজাতীয় পণ্যের দামে উত্থান-পতন নেই। ডিও’র বিপরীতে ¯িøপ বেচাকেনা কমেছে অন্তত ৯০ শতাংশ। হঠাৎ অতি মুনাফা লাভের সুযোগ যেমন কমে গেছে, তেমনি হঠাৎ করে বিপুল অঙ্কের লোকসানের ভয়ও নেই। এখন আমদানিকারক ও বড় পাইকারি ট্রেডিং ব্যবসায়ীদের নির্ধারণ করা দামেই পণ্যের কেনাবেচা হচ্ছে।
ক্রেতা মো. কামাল উদ্দিন বলেন, খাতুনগঞ্জের একটা সিন্ডিকেট সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে প্রতি বছর রমরমা ব্যবসা করে থাকেন। যেটা এ বছর পারছেন না। গরম মসলাসহ ভোগ্য পণ্যের বাজারকে তারা সবসময় সাধারণের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখতেন, যেটা এক ধরনের জুলুমি ছিল। তাই সৃষ্টিকর্তা এবার তাদেরকে পরীক্ষার মাধ্যমে সংশোধন হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ব্যবসা-বাণিজ্যে চরম ধস নেমেছে। করোনাঝুঁকির কারণে ভয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসছেন না ব্যবসায়ীরা। দোকান খরচ, কর্মচারী ও ব্যাংক লোন থাকাতে আমাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে মসলাপাতির একটা চাহিদা থাকে, কিন্তু এখন আতঙ্কের ফলে তাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এরকম অবস্থা চলতে থাকলে সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হবে আমাদের।
তিনি বলেন, বাজারে পণ্যের চাহিদা না থাকায় ব্যাংকে এলসি খুলছে খুবই কম। সকলের গুদামে এখন খাদ্যপণ্য মজুত রয়েছে। সবকিছু স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত খাতুনগঞ্জে কর্মযজ্ঞ ফিরে আসবে না।