কর্ণফুলী নদীর পলিথিনে অকার্যকর হবে বন্দর

75

সীতাকুন্ড শিল্পাঞ্চল ও মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে চাহিদা অনুযায়ী বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে কয়েক হাজার কোটি টাকার সমন্বিত প্রকল্প গ্রহণ করা হবে জানিয়েছেন স্থ’ানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
গতকাল শুক্রবার সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) আয়োজনে সীতাকুন্ড শিল্পাঞ্চল ও মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা জানান তিনি।
এ সময় তিনি বলেন, কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিংয়ে সবচেয়ে বড় বাধা পলিথিন। এ কারণে ড্রেজার দিয়ে খননকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে চট্টগ্রাম বন্দর অকার্যকর হয়ে যাবে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে নিয়েছি। চট্টগ্রাম বন্দর ছিল বলে আমাদের গ্রোথ ভালো এসেছে। দেশে আরও নতুন করে বন্দর হচ্ছে। আমাদের এখন টাকা আছে। সঠিক প্রকল্প নিলে টাকার অভাব হবে না।
মন্ত্রী বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশন পর্যন্ত অনেক প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত। কোন কাজ বাকি থাকবে না। গতকাল ১০৭টি ফাইল সই করেছি।
তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিকভাবে পাকিস্তান আমল থেকে চট্টগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ। যেকোন অঞ্চলের উন্নয়নই সারাদেশে জিডিপিতে ভূমিকা রাখে। জাতীয় অর্থনীতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের ভূমিকা অপরিসীম। তাই বৃহত্তর চট্টগ্রামের উন্নয়নে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং আরও প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ন্যূনতম ৫০ বছরের চাহিদার নিরিখে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে উল্লেখ করে এক্ষেত্রে দলমত নির্বিশেষে দায়বদ্ধভাবে চট্টগ্রামবাসীকে স্ব-স্ব অবস্থান থেকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
মন্ত্রী উন্নত দেশ হওয়ার জন্য মাথাপিছু আয় ১২,৫০০ ডলারে উন্নীত করা, ঢাকা-চট্টগ্রাম বুলেট ট্রেন ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণের মাধ্যমে যাতায়াতের সময় এক থেকে দেড় ঘণ্টায় নামিয়ে আনা, ব্লু -ইকনোমির সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং সর্বক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদানের উপর জোর দেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ২৪টি সেবা সংস্থা রয়েছে। তবে যথাযথ ক্ষমতায়নের অভাবে এবং কেন্দ্রিকরণের কারণে এসব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি পরিকল্পনা গ্রহণের পূর্বেই সমন্বয়করণ এবং আঞ্চলিক দপ্তরসমূহকে যথাযথভাবে ক্ষমতায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, সীতাকুন্ড শিল্পাঞ্চলে প্রধানত ইস্পাত, সিমেন্ট, এলপিজি ও গার্মেন্টসসহ প্রায় ৪০০ শিল্পে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ, লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ রাজস্ব জাতীয় কোষাগারে জমা হয়। কিন্তু ঐ এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আয়রন থাকা এবং পানির স্তর অনেক গভীরে নেমে যাওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় এসব শিল্প কারখানা অস্তিত্ব সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে এবং নতুন করে শিল্প স্থাপন সম্ভব হচ্ছে না।
এ সমস্যা সমাধানে চিটাগাং চেম্বার ২০১৭ সালের ফেব্রæয়ারি থেকে সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নিয়মিতভাবে দাবি জানিয়ে আসছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারির পত্রের প্রেক্ষিতে এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত মন্ত্রী ও সচিবকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি মিরসরাই শিল্পাঞ্চল পর্যন্ত প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে প্রকল্প গ্রহণ করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের দাবি জানান। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়ন, মহানগরের জলাবদ্ধতা নিরসন, কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং, চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক ৮ লেনে উন্নীতকরণ এবং এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু স্থাপন এবং কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণে দ্রুত ও কার্যকর অগ্রগতির দাবি করেন চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।
মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ১৫ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ১৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
তিনি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করে পানি পুনরায় শোধনের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে জানান।
সভায় অন্য বক্তারা পাহাড় ও রেললাইনের মধ্যবর্তী স্থানে পাহাড় থেকে নেমে আসা বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে রিজার্ভার তৈরি করা, মাতামুহুরী নদী থেকে পানি উত্তোলন এবং সমুদ্রের পানি লবণ মুক্তকরণ, চীনের আদলে মিরসরাই অঞ্চলে পরিকল্পিত শিল্প ও আবাসিক নগর গড়ে তোলা, চট্টগ্রাম থেকে কৃষি অধিদপ্তরের অধীন আইপি চালু করাসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের উন্নয়নে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে মন্ত্রীর সহায়তা কামনা করেন।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটির (বেজা) সদস্য মো. হারুনুর রশিদ, ওয়াসার এমডি ইঞ্জিনিয়ার একেএম. ফজলুল্লাহ, চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. নুরুল আলম নিজামী, চেম্বার পরিচালক একেএম আক্তার হোসেন, মো. রকিবুর রহমান (টুটুল) ও মো. শাহরিয়ার জাহান, নবনির্বাচিত পরিচালক এসএম আবু তৈয়ব, মো. এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, ইউরো পেট্রো প্রোডাক্ট লি.’র চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, জিপিএইচ ইস্পাত’র অতিরিক্ত এমডি আলমাস শিমুল ও বিএসআরএম’র ডিএমডি তপন সেন গুপ্ত বক্তব্য রাখেন।
এ সময় অন্যদের মধ্যে চেম্বারের সহ-সভাপতি সৈয়দ জামাল আহমেদ, পরিচালক মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন), মো. জহুরুল আলম, ছৈয়দ ছগীর আহমদ, সরওয়ার হাসান জামিল, মুজিবুর রহমান, মো. আবদুল মান্নান সোহেল, বেনজির চৌধুরী নিশান ও নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন, চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. ইঞ্জি. এসএম নজরুল ইসলাম, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. জহিরুল ইসলাম ও যুগ্ম সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম, জিপিএইচ ইস্পাত’র এমডি জাহাঙ্গীর আলমসহ বিভিন্ন সেক্টরের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।