অবাধে চলছে ধূমপান

65

আইন ও বিধিমালা অনুসারে হাসপাতালে ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও চট্টগ্রাম কলেজ হাসপাতালে অবাধে চলছে ধূমপান। এমনকি হাসপাতালে জরুরি বিভাগ, কার্ডিওলজি ওয়ার্ড এবং বার্ন ইউনিটের সামনে ধূমপান চলে নিত্যদিন। এছাড়া হাসপাতাল এলাকায় বিভিন্ন পয়েন্টে তামাকজাত পণ্য বিক্রি হয় দেদারসে। হসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে নিষিদ্ধ এমন কর্মকান্ড চলছে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ এ হাসপাতালসহ পাবলিক প্লেসসমূহে সতর্কতামূলক নোটিশ প্রদর্শনের সুনিদির্ষ্ট বিধান রয়েছে। আর আইন ও বিধিমালা অনুসারে হাসপাতালে ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ চমেক হাসপাতালের অভ্যন্তরে অবাধে ধূমপান চলছে।
সরেজমিনে একাধিকবার চমেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অলিগলিতে, ওয়ার্ডের সামনে ও ভেতরে ধূমপান করতে দেখা গেছে অনেককে। আর হাসপাতাল এলাকার প্রধান ফটক, জরুরি বিভাগের
সামনে, গাড়ি পার্কিং এলাকাসহ বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে দোকানে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি চলছে নিত্যদিন। এমনকি বার্ন ইউনিটের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় ধূমপান করতেও দেখা গেছে অনেককে। এই তালিকায় চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে আছেন পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও রোগিদের সাথে আসা সাধারণ মানুষ; আছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশও।
নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রি সংক্রান্ত বিষয়ে সম্প্রতি একটি জরিপ পরিচালনা করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব থিয়েটার আর্টস (বিটা)। ২০১৮ এর সেপ্টেম্বরের ২৮ তারিখ থেকে অক্টোবরের ১ তারিখ এবং অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে অক্টোবরের ৯ তারিখ পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে জরিপটি চালায় তারা।
এই জরিপ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, চট্টগ্রাম নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে তামাকজাত বিক্রয়স্থল রয়েছে ১৬ হাজার ৫৯টি। এরমধ্যে রাস্তার পাশে বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে ৩ হাজার ৩৯৪টি, চা বিক্রয় কেন্দ্র ৪ হাজার ৩০৫, ক্ষুদ্র মুদি দোকান ৫ হাজার ৮৭৯টি, সুপার মার্কেট ৯২৪টি, তামাক দ্রব্য বিক্রয়কেন্দ্র ৬৬৭ টি, রেস্টুরেন্টে ১৯৬টি, ভাসমান বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে ৬৯৪ টি। এছাড়া নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে লাইন্সেসবিহীন বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে ১১ হাজার ৪৬২টি যা ৭১ শতাংশ। এই জরিপ থেকে আরো জানা যায়, ১০০ গজের মধ্যে তামাক পণ্য বিক্রি হয় এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৮৮৫টি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৫ হাজার ৫৩৬টি। ১০০ গজের মধ্যে তামাকজাত পণ্য বিক্রয় হয় এমন হাসপাতালের সংখ্যা ১৬২টি। তামাকজাত পণ্য বিক্রয় করছে ১৮ বছরের কম বয়সীর সংখ্যা ৬,৪৬জন যা ৪ শতাংশ, বিক্রয় স্থলে দৃশ্যমান বিজ্ঞাপন দেখা গেছে এমন বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ১২ হাজার ১৬৫টি যা ৭৬ শতাংশ।
এদিকে এঅঞঝ ২০১৭- এ দেখা যায়, বিভিন্ন পাবলিক প্লেসমসূহে মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে, যেমন- রেস্টুরেন্টে ৪৯.৭%, যানবাহনে ৪৪.০%, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ১২.৭%, সরকারি ভবন/অফিসে ২১.৬%, এমনকি স্কুলেও ৮.২%।
চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, জনগণকে সচেতন করা ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো ক্ষমতা নেই। এসব কর্মকান্ডের জন্য আমরা কাউকে জরিমানা করতে পারি না। তবুও হাসপাতালের দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া আছে তামাকজাত দ্রব্য যাতে হাসপাতালের অভ্যন্তরে বিক্রি না হয়। আর হাসপাতালের অভ্যন্তরে যাতে কেউ ধূমপান না করে সেই জন্য জনগণকে সচেতন করার জন্য আরো কিছু সাইনবোর্ড লাগানো হবে।