বিশ্বকাপ ফুটবল বিশ্বে সমঝোতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হওয়া জরুরি

28

দেশের জাতীয় খেলা যাই হোক না কেন আমাদের দেশসহ সমগ্র বিশ্বে ফুটবল একটি জনপ্রিয় খেলা। বর্তমানে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ ফুটবল খেলার উত্তেজনার জ্বরে আক্রান্ত। ক্রীড়ামোদি মানুষের দৃষ্টি টেলিভিশনের পর্দায় আটকা। লাখ লাখ টাকা খরচ করে সমগ্র বিশ্বের বহু মানুষ ছুটেছে মরুময় দেশ কাতারের দিকে। ইতোমধ্যে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২০ নভেম্বর উদ্বোধন হলো কাতার বিশ্বকাপ ২০২২। সমগ্র বিশ্ব হতে সর্বমোট বত্রিশাটি দেশ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। প্রায় সকল মহাদেশের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে ফিফা বিশ্বকাপে। ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২ বিশ্বকাপের ২২তম আসর। ইতোপূর্বে একুশটি বিশ্বকাপ আসর ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়ায় বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজন হলেও মধ্যপ্রাচ্যে এই প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপের আসর। কাতারের পূর্বে বিশ্বের কোন মুসলিম দেশ ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করতে পারেনি। ফিফার সিদ্ধান্তে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো কাতার বিশ্বকাপ। আজ হতে প্রায় বার বছর পূর্বে ফিফা কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর পশ্চিমাবিশ্ব এবং তাদের প্রচার মাধ্যম বিষয়টাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেনি। পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি আয়োজক কাতারের নানা বিরূপ সমালোচনা। শুধু সমালোচনা নয়, পশ্চিমা মিড়িয়া খুবই সন্দিহান ছিল কাতারের মতো একটা মুসলিম দেশ বিশ্বকাপ ফুটবলের মতো বড় আয়োজন করতে পারবে কি না। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার আর্থিকভাবে ধনি হলেও সংস্কৃতিগত ভাবে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ফুটবল আসরকে ফলপ্রসূ করতে পারবে কিনা এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ পোষণ করেছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ক্রীড়াবিদ ও মিড়িয়া। মরুর বুকে, আরবিভাষী মুসলমানের পক্ষে এমন উৎসব মুখর খেলার আসরের আয়োজন সম্ভব নয় এমন ধারণা পোষণ করেছে ঈর্ষাকাতক দেশ ও ব্যক্তিরা। তারা সন্দেহ পোষণের পাশাপাশি কাতারের উদ্যোগের বিরুদ্ধে নানা প্রপাগান্ডা ও ষড়যন্ত্র করতে দেখা গেছে। কাতার বিশ্বকাপের উদ্বোধন আসরে যোগদান হতে কেউ কেউ তাদের নামও প্রত্যাহার করতে দেখা গেছে। কাতারের বড় অপরাধ দেশটি মুসলিম দেশ। ইসলামী অনুশাসনের সাথে সাংঘর্ষিক কিছু বিষয়ে কাতার মাথানত না করায় বহু বিপত্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে তাদের। নারীদের অর্ধনগ্ন পোষাক ইসলাম সমর্থন করে না। মদ্যপান ইসলাম ধর্মে সম্পূর্ণ নিষেধ। ইসলামের সংস্কৃতিক ভিত্তি ধর্মীয় অনুশাসনকে লংঘন করে চলে না। তাছাড়া মানবাধিকার লংঘনের অজুতাও দেখিয়েছে পশ্চিমা প্রচার মাধ্যম।
ইতিহাস বলছে, পশ্চিমাদের কথা আর কাজে মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন। মহান মে দিবস সৃষ্টি হয়েছে পশ্চিমাদের মাধ্যমে। বিশ্বে প্রথম মানবতা বিধ্বংসী মরণাস্ত্র ব্যবহার করে মানবতার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্দার করেছে পশ্চিমারা। বিভিন্ন দেশের সাথে আগ্রাসী নীতি অবলম্বন করে মানবতার বারোটা বাজিয়ে দেখিয়েছে তারা। বিশ্বে সমকামিতার মতো নির্লজ্জ আইন পাশ করে দেখিয়েছে পশ্চিমারাই। তাদের সম্পর্কে ফিফা সভাপতির বক্তব্য শাশ্বত সত্যের প্রকাশ।
পশ্চিমা মিডিয়ার সর্বশেষ অপপ্রচার হলো কাতার টাকার বিনিময়ে উদ্বোধনী ইকোয়েডর কাতার ম্যাচটি তাদের পক্ষে নেয়ার ব্যবস্থা করেছে। এমন একটি অভিযোগ বিশ্বময় ছড়ানোর পর আমরা দেখলাম কাতারকে ইকোয়েডরের কাছে ২-০ গোলে হারতে। সামনে চলমান বিশ্বকাপের বিরুদ্ধে পশ্চিমা মিডিয়ার আর কি কি ষড়যন্ত্র অপেক্ষা করছে তা সময় বলে দেবে। সব ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে কাতার ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২কে সার্থকভাবে শেষ করবে এমন প্রত্যাশা বিশ্ববাসীর।
ক্রীড়া আনন্দের বিষয়। বিশ্বকাপ ফুটবল বিভিন্ন দেশের জন্য অতীব মর্যাদার। এ শিরোপার মূল্য অপরিসীমা। আবার খেলোয়াড়রা তাদের সুন্দর নান্দনিক ক্রীড়া প্রদর্শন করে অর্থ বিত্তের মালিক হতে পারে। কিন্তু বিশ্বেরর কোটি কোটি দর্শকের কাছে এ ফুটবল আসর নিছক আনন্দের। দর্শকরা মূল্যবান সময় নষ্ট করে টিভির পর্দায় মনোসংযোগ করে, পকেটের অর্থ ব্যয় করে স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে যায়, প্রিয় দলের পরাজয়ে কান্না করে, আবার বিজয়ে উল্লাসিত হয়। খেলা হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে কিন্তু আমাদের দেশও বিভিন্ন দলের জার্সি এবং পতাকায় চেয়ে গেছে। দর্শকরা বাড়াবাড়ি, ঝগড়া, মারামারিও করে বিভিন্ন ফুটবল দলের পক্ষ নিয়ে। বিশ্বের আনন্দ আনন্দই থাক, এদেশে-এটাই আমাদের কামনা। বিশ^কাপ ফুটবলে যেভাবে সতীর্থ খেলোয়াড়রা বল নিয়ে চমৎকার ক্রীড়া নৈপূন্য দেখায় সেভাবে বিশ্বের সকল জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে ভাতৃত্ববোধ ও সমঝোতায় উদ্বুদ্ধ হোক বিশ্ববাসী। বিশ্বহতে সব ধরনের যুদ্ধংদেহী মনোভাব দূরিভূত হোক এটাই হোক ফুটবল বিশ্বকাপের পরম শিক্ষা।