সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এ ধারা আরো সমৃদ্ধ হোক

6


নগরীর ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলীখেলা আজ বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য বলীখেলা আয়োজক কমিটি সবধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। বলীখেলাকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে তিনদিনের বৈশাখী মেলা। প্রকৃতপক্ষে খাতা-কলমে মেলার মেয়াদ তিনদিন হলেও আগে পরে প্রায় সপ্তাহব্যাপী চলতে থাকে এ মেলা। দৈনিক পূর্বদেশসহ স্থানীয় জাতীয় সংবাদপত্রে আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সভাপতি স্থানীয় আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহর লাল হাজারীর উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, প্রতি বছরের মতো বাংলা বর্ষের ১২ বৈশাখ অর্থাৎ ২৫ এপ্রিল লালদীঘির মাঠে বলীখেলা হবে। বাঁশ ও বালি দিয়ে মাঠে বলীখেলার মঞ্চ (রিং) তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে বলীখেলার আগের দিন ২৪ এপ্রিল থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত লালদীঘির মাঠ ঘিরে বসছে বৈশাখী মেলা।
কমিটির সভাপতি গণমাধ্যমকে জানান, ‘গত মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বলীখেলায় অংশগ্রহণকারীদের নিবন্ধন শুরু হয়েছে। খেলায় যারা অংশ নেবেন, তাদের জন্য এবার আমরা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে বিশ্রামের ব্যবস্থা করেছি। সার্বিক আয়োজনে সহযোগিতা দিচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।’ প্রতি বছর এ সময়টাতে তাপপ্রবাহ থাকে। এবারও তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। এক্ষেত্রে বলীখেলা ও মেলায় আগত দর্শনার্থীদের সতর্ক ও সচেতন থাকার আহবান জানান জহর লাল হাজারী। আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এবারের বলী খেলায় চট্টগ্রামের মেয়র ও দুই মন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় তারা অংশগ্রহণ করতে পারছেন না, তবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, সিএমপি কমিশনারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খেলা ও মেলায় অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এর আগে গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিকালে আনুষ্ঠানিকভাবে আব্দুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বলীদের জার্সি এবং চ্যাম্পিয়ন ও রানার-আপ ট্রফি উন্মোচন করেন সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। এসময় মেয়র আগামী প্রজন্ম যেন বলীখেলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারে, সে জন্য কুস্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে বলে আশ্বাস্ত করেন।
বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, সময় ও দেশ যত বেশি সমৃদ্ধ হচ্ছে, তত বেশি আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। একটি জাতির পরিচয়ের দর্পন তাদের সংস্কৃতি। চট্টগ্রামের এ বলীখেলা আমাদের শত বছরের লালিরত সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্য আমাদের ধরে রাখতে হবে। বলীখেলাকে ঘিরে তিনদিনের মেলা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আসেন। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হয়। দেশের অভ্যন্তরীন অর্থনীতিতে এ মেলা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। নতুন প্রজন্ম যেন আমাদের এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখে সে জন্য আমাদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। এখানে বলা প্রয়োজন সিটি মেয়র বলীখেলার জার্সি উদ্বোধনকালে প্রস্তাব রেখে বলেছিলেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে বলীখেলায় অংশ নিচ্ছেন, কুস্তিগীর, রেফারি ও আয়োজক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি করা হোক। এবারের বলীখেলার পরেই এ বিষয়ে আয়োজকরা উদ্যোগ নেবেন। একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হবে। জায়গা আমরা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করে দেব। এ জন্য যা যা সহযোগিতা দরকার, সিটি করপোরেশন ও আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে করা হবে। আমরা মেয়রের এ ঘোষণাকে স্বাগত জানাই। বলীখেলা ও মেলার সাথে সংশ্লিষ্টদের এ বিষযটি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করার জন্য আমাদের আহবান থাকবে। এছাড়া যে আবদুল জব্বার চৌধুরী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুব সমাজের মধ্যে বিদ্রোগের আগুন প্রজ্জ্বলনের জন্য এমনটি কুস্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন, সেই সময় এটি ছিল সবচেয়ে বড় সাহসী ও সৃদৃঢ় মনোবলের বহিঃপ্রকাশ। চসিক একুশে ফেব্রæয়ারি ও স্বাধীনতা দিবসে গুণীজনদের যে সন্মাননা পদক দিয়ে থাকে, আমরা আশা করবে আবদুল জব্বার সওদাগরকে মরণোত্তর সন্মাননা দিয়ে চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী তাঁর অবদানকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার প্রয়াস পাবেন। আমরা ১১৫তম বলীখেলা ও বৈশাখী মেলার উত্তরোত্তর সফলতা, উন্নতি ও সমৃদ্ধ কামনা করি।
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি যুব স¤প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করতে চট্টগ্রামের বদরপতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর কুস্তির প্রবর্তন করেছিলেন, যা চট্টগ্রাম অঞ্চলে বলীখেলা নামে পরিচিত। ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা সনের ১২ বৈশাখ নিজ নামে লালদীঘির মাঠে এই বলীখেলার সূচনা করেন তিনি। সূচনার ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর লালদীঘির মাঠে ১২ বৈশাখ অনুষ্ঠিত হয় বলীখেলা। বলীখেলার একদিন আগে-পরে তিনদিন ধরে লালদীঘির পাড়সহ আশপাশের এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে বসে মেলা। এ মেলায় গৃহস্থালি পণ্য থেকে শুরু করে নানা পণ্যের পসরা বসে।