জীবনযাত্রার সচেতনতা জরুরি

8

বৈশাখ মাস, দেশে চলছে তীব্র তাপদাহ। ষড়ঋতুর এদেশে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ দু’মাস গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্মে গরমপড়া স্বাভাবিক কিন্তু তা যখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে তখন জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। শীতকালে লেপ বা গরম কাপড় কিংবা কম্বল দিয়ে শীতের তীব্রতা হতে রক্ষা পাওয়া যায়। ধনি লোকের জন্য শীত ঋতু বড়ই উপভোগ্য ঋতু। গ্রীষ্মের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হলে বৈদ্যুতিক পাখা কিংবা এসির বাতাসেও স্বাভাবিক থাকা দায়। দেশে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নতি হলেও গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ প্রবাহ স্বাভাবিক থাকছেনা। লোডশেডিংএ জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। জ্যৈষ্ঠের খরার আভাস দিচ্ছে প্রকৃতি। গরমের কারণে মাঠে ময়দানে শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। পত্রিকার খবর থেকে জানা যায় সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টার ৩জন মারা গেছে। বেড়েছে হিট স্ট্রোকের শঙ্কা দেশের ৫১ জেলায় ছড়িয়েছে তাপদাহ, মাঠে খেটে খাওয়া মানুষ দুর্ভোগে ত্রাহীত্রাহী অবস্থায় আছে। অফিস-আদালতে লোডশেডিং বাড়ায় স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। চারদিকে মানুষের মুখে একটি শব্দ গরম, গরম আর গরম। পাবনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় অতিতীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তার সাথে রাজশাহী, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়ার উপর দিয়েও তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে। এসব জেলায় তাপমাত্রা ৪০ডিগ্রি সেলিসিয়াস ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় সরকার সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। প্রকৃতির বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঠেকানোর সাধ্য মানুষের নেই। তবু সতর্কতা অবলম্বন করে জীবন চলার পথে জনজীবনকে এগিয়ে নিতে হবে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হবে। কৃষি ও শিল্প উৎপাদন স্বাভাবিক রাখার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
তীব্র গরম ও তাপদাহে দেশে নানা প্রকার রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে। ডায়রিয়া বেড়ে যাচ্ছে, হাসপাতালে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এসকল অবস্থা হতে মুক্তি পেতে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। অকারণে রোদের গরমে ঘুরাঘুরি করা হতে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে ছাতা ব্যবহার করা উচিৎ। নয় তো মাথাকে তীব্র সূর্যের তাপ হতে রক্ষায় ক্যাপ বা টুপি ব্যবহার করা যায়। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। গরমে পানি বাহিত রোগ ডায়রিয়া ইত্যাদি বেড়ে যায়। পানি ফুটিয়ে ঠাÐা করে খাওয়া যায়। পানির সাথে লেবুর রস মিশ্রণ করে খেলে গরমের প্রভাব কিছুটা কমে। প্রয়োজনে ওরস্যালাইনের পানি তথা ওরস্যালাইন খাওয়া উত্তম। শ্রমজীবী মানুষের শরীর হতে যে পরিমাণ ঘাম বের হয় তা পোষিয়ে নিতে ওরস্যালাইন কার্যকর। সাদা সূতির কাপড় গরমে আরাম দায়ক।
তীব্র গরম ও তাপদাহে প্রকৃতির জগতে নানা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। চৈত্র-বৈশাখে দেশের যে সব বৃক্ষে নানা রকম ফল ধরেছে তা গরমে অকালে ঝরে পড়ছে। আম ও লিচুর গোটা ঝরে যাচ্ছে গরমে। বহু ফলন্ত গাছ পানির অভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলগুলো যে হারে ঝরে যাচ্ছে তাতে আগামী মধুমাস তথা জ্যৈষ্ঠ মাসে পর্যাপ্ত পরিমাণে দেশিয় ফল পাওয়া যাবে না। ক্ষেত ও ফলের বাগানে কৃষকদের পর্যাপ্ত পানি সেচের ব্যবস্থা করা জরুরি। গাছের গোড়ায় এবং আগায় পর্যাপ্ত পানি ছিটালে এই গরমে ফল ও ফসলের গাছগুলো অনেকখানি রক্ষা পাবে।
পাহাড়ি অঞ্চলে শীত ও গরমের প্রতিক্রিয়া বেশি থাকে। গ্রীষ্মে পাহাড়ে আগুন ব্যবহারে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। গ্রীষ্মকালে অগ্নিকাÐ হতে রক্ষা পেতে সিলিন্ডার গ্যাস, ব্যবহার বৈদ্যুতিক সার্কিট ব্যবহার এবং আগুন জ্বালানোর বিষয়ে অধিকতর সতর্ক থাকা প্রয়োজন। চুলার আগুন নিভিয়ে নিতে হবে রান্নার পর। গ্যাস সিলিন্ডারে কোন ক্রটি আছে কি না তা যাচাই করতে হবে গ্যাস ব্যবহারে। বৈদ্যুতিক সার্কিট স্বাভাবিক আছে কি না তা প্রত্যেক বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীকে নজরে রাখতে হবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভাষ্য অনুসারে সারা মাসব্যাপী গ্রীষ্মের দাপট থাকবে। এ গ্রীষ্মকালে দেশের সর্বস্তরের নাগরিককে সচেতনতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। গরমের কারণে গৃহপালিত পশুপাখির মধ্যেও নানা রোগবালাই ধরা পড়ছে। সেক্ষেত্রে পশু ডাক্তারের কিংবা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের পরামর্শ নেওয়া যায়। প্রকৃতির বিরূপ পরিবেশের এই তাপদাহে দেশের সবকিছু স্বাভাবিক থাকা এটাই আমাদের কাম্য, সচেতনতাই দিতে পারে গ্রীষ্মকালীন তাপদাহের দুর্যোগ হতে দেশের মানুষ ও প্রকৃতিকে মুক্তি দিতে।