সাংস্কৃতিক চেতনা ও নীতিমালা প্রসঙ্গে

130

কালচার শব্দের মূল হলো সংস্কৃতি। আমরা যারা এ সমাজে সংস্কৃতি বলতে যা বুঝাতে চাই তা হলো মানুষের মনন ও চরিত্রের উৎকর্ষতার ফসল। এই সমাজে সৃজনশীলতার চেতনায় সাহিত্য ও সংস্কৃতি, সংগীত,চিত্রকলা, নৃত্য, নাট্যভিনয় সহ সব কিছুর মূলে মানুষের মনন চর্চার বিকাশ। এই মনন চর্চার সাথে যদি মানুষের মনের সংযোগ না ঘটে তা হলে সংস্কৃতি চেতনার মূলটাই খটুজে গাওয়া যায় না। প্রাচীনকালে সংস্কৃতির তিনটি গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তা হলো- মনের স্বাধীনতা বা সজীবতা, বিশ্ব মানবতা, ও শালীনতাবোধ। এই তিনটি গুণের মধ্যে দিয়ে একজন মানুষ সুনাগরিক হয়ে উঠতে পাওে একটি সমাজে। । সংস্কৃতির এই তিনটি গুণের মধ্যে দিয়ে একটি বিষয় অনুধাবন করা যায় যে, মানুষের সমাজে জীনযাত্রার মার্জিত রুপ হলো সংস্কৃতিক চেতনা। মানুষের মাঝে সংস্কৃতি চেতনাই হলো সচল শক্তির স্বাধীনতা। যা মনের স্বাধীনতাকে বোঝায়, মানুষের মধ্যে মনের স্বাধীনতা না থাকলে তাতে মানুষ সৃষ্টিশীল হতে পারে না। যেখানে মনের স্বাধীনতা বিরাজমান সেখানে একজন মানুষ সংস্কৃতি চেতনায় নিজের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ব মানবতার মুক্তির পথে পথ খুঁজে নিতে পারে সামনের পথে। এই পথ ধরেই বিংশ শতাব্দীর রেনেসাাঁর যুগ পেরিয়ে মানাষের মধ্যে নব জাগরণ সৃষ্টি হয়ে নতুন মুল্যবোধে মানুষ নিজের সৃষ্টিশীলতাকে ধারণ করে । মানুষের নিজস্বতায় উন্নত সৃজনশীল মনোভাব ও চেতনায় আজকের ঐতিহ্য ও মনন চিন্তায় গতিময়তা ছিলো বলেইতো আজকে আমরা নিজস্ব সহজাত কালচার বা সংস্কৃতি থেকে ধীরে ধীরে চিন্তা ভাবনায় ও সুষ্টিশীলতা ও নৈতিকতাবোধে পরিবর্তন আনার প্রয়াস পেয়েরিা। সকল মানুষের সকল মনীষীদের কর্মময় জীবনের সৃংস্কৃতিক পরিচয়ই সাংস্কৃতিক পরিধি হিসেবে চিহ্নিত হয়। একজন মানুষের কৃতি মানে তার কাজের ফল যা তাকে যুগ যুগ ধরে পরিচয়ে এগিয়ে নিযে যায়। মানুষের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের মধ্যে দিয়ে, নিজের মনন ও চেতনার বিকাশের মধ্যে দিয়ে মানুষ একজন সুন্দর মনের মানুষ হয়ে উঠতে পারে। যদিও সাংস্কৃতির মৌল উপাদান – যেমন ধর্ম, ভঅষা, ভৌগলিক অষন্ডতা, প্রভৃতি একটি রাষ্ট্র গঠনের প্রধাণ কারণ গুলোর অন্যতম। রাষ্ট্রই সংস্কৃতির বিকাশ সাধন করে একটি স্বরুপে তার বিকাশমান ও নিয়ন্ত্রণ করে নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে পারে। তাইতো একটি দেশের সংস্কৃতির অভিন্ন দ্যোতনায় মানুষের পরস্পরের চাহিদা, অন্তঃসংযোগ ও সংস্কৃতির রুপ চলমান হয়ে সংগঠিত হয়ে মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে। কবে একটা দেশের সাংস্কৃতির মৌল, মত ও চাহিদা অনুযায়ী সংস্কৃতির পুর্নগঠনে সকলকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। যেমন- মূলগতভাবে দেদশের নিজস্বতা নির্ভও হতে হবে, অসাম্প্রদায়িখ মানবতাবাদী দৃষ্টিভংঙ্গি ও সহজাত স্বকীয়তা, আর্ন্তজাতিক সংস্কৃতির সহযোগিতা সহ নিজস্বতায় সমৃদ্ধি অর্জন বিকশিত হতে পারলে তবেই সংস্কৃতির নিজস্বতাবোধ জাগ্রত হয়ে মানুষের কাছে পৌঁছাবে। সংস্কৃতির বিকশিত হয় শিল্পবোধের চর্চায়। এই শিল্পবোধের ব্যাপকতা ও উজ্জ্¦লতার স্বরুপের মধ্য দিয়ে সংস্কৃতির অভিন্ন ঐক্যবদ্ধ বিকাশ ও স্বার্বজনীন সৃজনশীল অগ্রসরতায় সংস্কৃতির শ্রীবৃদ্ধি সম্ভব হতে পারে।
অন্যদিকে, ১৯৮২ সালে মেক্সিকো সিটিতে অনুষ্ঠেয় ইউনেস্কোর অর্ন্তজাতিক কনভেনশনে বলা হয়েছে- সংস্কৃতি হচ্ছে একটি জাতীর আত্বিক বস্তুগত, বুদ্ধিগত, ও আবেগগত চিন্তা ও কর্মধারার প্রকাশ। একমাত্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের দ্বারাই বকেটি দেশ জাতিগত স্বাধীনতা, ও স্বতন্ত্র্য রক্ষা করতে পারে। ইউনেস্কোর সে কনভেনশনে ঐতিহ্য হিসেবে গণ্য করা হয়েছে শিল্পীর শিল্পকর্ম,সাহিত্যিকের সাহিত্য সাধনা, স্থপতির নির্মাণকর্ম, সংগীত শিল্পীর সাধনা, নৃত্যশিল্পীর নৃত্য ব্যাজ্ঞনা, বিজ্ঞানীর আবিস্কার ও অনুসন্ধ্যান কর্ম, জনগণের ধর্মবোধ, সে সব মুল্যবোধের স্বীকৃতি যা জীবনকে অর্থ দান করে।
সে লক্ষে জাতিসংঘ ২১ মে কেবিশ্ব সংস্কৃতি দিবস হিসাবে ঘোষণা দিয়ে বিশ্বের সব দেশে সংস্কৃতির অনুসন্ধ্যান ও তার সংরক্ষণের উপড় জোড় দিয়েছেন। ইউনেস্কোর সে ঘোষণার পর প্রায় চার দশকের অধিক সময় অতিবাহিত হতে চললো আমাদের দেশে আজ পর্যন্ত কোন পূর্ণাঙ্গ কোন সংস্কৃতি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়নি। আমাদের দেশে যে ঐতিহ্য সংস্কৃতির যে ভান্ডার ও উপাদান বিদ্যমান তা দেশের আপাময় জনগণের জীবনযাত্রার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এ দেশের হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ইতিহাস, ও দেশের নিজস্ব পরিচয়কে বিকাশমান রাখা ও সংরক্ষণে সাংস্কৃতিক একটি নীতিমালা জরুরী হয়ে পড়েছে। প্রিজারভেশন অ্যাক্ট, ১৯৪৭ সালের অ্যাসিকুইটি অ্যাক্ট, গুলোকে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে তার যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করতে পারলেই তবেই দেশে বর্তমানে পুরোন স্থাপনা, মোগল ও সুলতান আমলের দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, ঐতিহ্য,ইতিহাস ধংসের যে মহা উৎসব শুরু হয়েছে তাকে রক্ষায় নীতিমালার প্রণয়ন করে আইনের আওতায় এনে তা রোধ করা সম্ভব।
এই নীতিমালা দেশ-বিদেশে আমাদের সাংস্কৃতিক আদান প্রদানে সহায়ক ভ‚মিকা পালন করবে। এর বিকাশে মানুষের মাঝ থেকে সকল অন্যায়, অত্যাচার- বোধহীন অনৈতিক কর্মকান্ড থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে এই নীতিমালাকে সকলের মাঝে গ্রহনযোগ্য করে তুলতে হবে। তবেই অসাম্প্রদায়িক মানবতাবোধের চেতনায় জাগ্রত হয়ে মানুষ এ দেশের সংস্কৃতিকে ভালোবেসে এগিয়ে যাবে অনেকটা পথ। নতুন মুল্যবোধ চেতনায়, নতুন সম্ভাবনায়। তাই সাংস্কৃতিক নীতিমালা প্রণয়নে এগিয়ে এসে সংস্কৃতিক,ও সামাজিক ক্ষেত্রের সকল সংকট কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতায় এগিয়ে আসুন।