২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৬ বছর বিচারের রায় কার্যকরে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে

32

বহুল আলোচিত ভয়াবহ ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ১৬ বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল। দেশের মানুষ অশ্রুসজল নয়নে দিনটিকে গভীর শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসা স্মরণ করেছে। ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিন্যূতে তৎকালনি প্রধান বিরোদী দল আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে চালানো হয় সময়ের সবচেয়ে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা। ওই হামলা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পান তৎকালীন প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নিহত হন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী আইভী রহমানসহ দলের ২৪ নেতাকর্মী। আহত হন কয়েকশ’। মূলত তখনকার প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাই ছিলেন গ্রেনেড হামলা পরিকল্পনাকারীদের টার্গেট। পৃথিবীতে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে রাষ্ট্রীয় মদদে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার এমন কলংকজনক ঘটনার নজির নেই বলেই আমাদের ধারণা। ২১ আগস্টের ভয়াবহ এ ঘৃণ্য ঘটনা সৃষ্টিকারী ও সরাসরি জড়িতদের বিচার হওয়া উচিত ছিল অনেক আগেই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা হয়নি। বর্তমান সরকার অপরাদীদের বিচারে অনেক এগিয়ে গেলেও এখনও চূড়ান্ত নিস্পত্তি হয়নি।
বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, মূলত এ ঘৃন্য ঘটনার পেছনে অপশক্তির ক্ষমতার দর্প ও স্বার্থবাদী অপচিন্তা। সেই সময়ে ক্ষমতাসীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে এ সংক্রান্ত মামলা ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা হয়েছে নানাভাবে। ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হয়েছে অনেক তথ্যও। জজ মিয়া নামের এক নিরীহ ব্যক্তিকে আটক করে তার কাছ থেকে মিথ্যা জবানবন্দি আদায় করে ঘটনার প্রকৃত কুশীলবদের আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিš সময়ের পরিবর্তনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনরায় পেয়ে ভিকটিম আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর দ্বিতীয় দফার তদন্তে বেরিয়ে আসে যে, তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ইন্ধনে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি)সহ তিনটি জঙ্গি সংগঠন ওই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। ভয়াবহ সেই ঘটনার ১৪ বছর পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর এ মামলার রায় ঘোষিত হয়। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদÐ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদÐ এবং বাকি ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১।
প্রকৃতপক্ষে, ২১ আগস্টের ভয়াবহ সেই গ্রেনেড হামলার আড়ালে প্রকৃত সত্য কী, দেশবাসীর সামনে তা উদ্ঘাটিত হওয়া জরুরি ছিল। দেরিতে হলেও সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে এ হামলার পরিকল্পনাকারী কারা ছিল; কারা অংশ নিয়েছিল হামলায়। যদিও এটাই চূড়ান্ত রায় নয়; গত বছর ১৩ জানুয়ারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিল গ্রহণ করেন হাইকোর্ট।
জানা গেছে, তা শুনানির জন্য পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত, রায়সহ বই) তৈরি শেষে বিজিপ্রেস থেকে সুপ্রিমকোর্টে পাঠানো হয়েছে। বস্তুত আপিল বিভাগের রায়ের মধ্য দিয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত মামলা চূড়ান্ত পরিণতি পাবে। মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামি এখনও অধরা রয়েছেন। তাদের অনেকে দেশের বাইরে পলাতক রয়েছেন। আমরা মনে করি, গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত যেসব আসামির রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে- দায় তাদেরই। সুতরাং সংশ্লিষ্ট দলকে অপরাধিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। অন্যথায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গায়েল করার এ দরণের ঘৃণ্য অপচেষ্টা সহজে বন্ধ হবে না।
২১ আগস্টের হামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত একটি দল ও দলের প্রধান নেতাকে হত্যা করার উদ্দ্যেেেম্য করা হয়েছে বরে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। আওায়ামী লীগ তাই মনে করে। বলার অবকাশ নেই যে, রাজনীতি ভয়াবহভাবে দুর্বৃত্তায়নের হাতে গেলে এধরণের নিষ্টুর ঘটনা সৃষ্টি করা সম্ভব। এরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সুষ্ঠু বিচার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদেরও সজাগ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা ছাড়াও দলের ভেতর থেকে প্রতিহিংসার বীজ উপড়ে ফেলতে হবে। দেশ ও জাতির স্বার্থে রাজনীতিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে হবে। দূর করতে হবে পেশিশক্তির অপচিন্তা।