হঠাৎ দেশব্যাপী বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানে মনোযোগ দিতে হবে

11

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিরূপ প্রভাবে বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা চলছে। অনেক দেশে অর্থনীতি এতোটাই ভেঙে পড়ছে, খাদ্য, জ্বালানীর চরম সংকটের পাশাপাশি আর্থিক সংকটে পর্যুদস্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে কোটি কোটি মানুষকে। বাংলাদেশ নানাভাবে এতোদিন সংকট মোকাবেলা করে আসলেও সম্প্রতি গ্যাস উৎপাদন, সরবরাহ কমে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার সাময়িকভাবে আমদানি বন্ধ করে দেয়ায় দেশে গ্যাসের চরম সংকট চলছে। এরসাথে যুক্ত বিদ্যুতে চরম আঁচড় লেগেছে। এ সপ্তাহে হঠাৎ দেশব্যাপী বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকট সকলকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগর ও নগরের বাইরে এক ঘণ্টা বা আধা ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং হয়েছে। সবখানে বিদ্যুতের জন্য হাহাকার চলছে। একইসাথে গ্যাস সংকটের কারণে অনেক বাসাবাড়িতে চুলা জ্বলছেনা। শিল্প-কারখানার চাকাও বন্ধ রাখতে হচ্ছে, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের পোশাক শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বেশি। উৎপাদন ব্যাহত হলে সময়মতো বিদেশে পণ্য পাঠানো সম্ভব হবে না। ফলে রপ্তানি অর্ডার বাতিলের শঙ্কা দেখা দিতে পারে। এতে দেশের অর্থনীতির অগ্রযাত্রা থেমে যাবে। এককথায় গ্যাস আর বৈদ্যুতিক লোডশেডিংয়ের কারণে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হবে, জনজীবনে দুর্ভোগ বেড়ে যাবার আশঙ্কা করা হচ্ছে। একটানা লোডশেডিংয়ের কারণে গরমে বৃদ্ধ ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। বস্তুত দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন গ্যাস নির্ভর হওয়ায় বিদ্যুতের সংকটই দৃশ্যমান হচ্ছে বেশি। বিদ্যুতের অভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে স্থবিরতা বিরাজ করছে। বিদ্যুতের অভাবে সেচযন্ত্র বন্ধ থাকায় চলতি আউশ মৌসুমের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জানা গেছে, গত সোম ও মঙ্গলবার সারা দেশে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও এর বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার মেগাওয়াটের মতো। সরকারি হিসাবে লোডশেডিং সাড়ে ১২শ মেগাওয়াট বলা হলেও বাস্তবে এটি ছিল আরও বেশি। যেহেতু গ্যাসের স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে; সেহেতু গ্যাসের সরবরাহ কখন স্বাভাবিক হবে সেদিকে তাকিয়ে আছে সবাই।
সূত্র জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের উচ্চমূল্য সব দেশকেই সমস্যায় ফেলেছে। বিষয়টি বাংলাদেশকেও বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত থাকলেও জ্বালানি না থাকায় উৎপাদনে যেতে পারছে না। গ্যাস সংকটে চুলা জ্বলছে না রাজধানীর অনেক আবাসিক এলাকায়। জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় স্পট মার্কেট থেকে গ্যাস কেনা বন্ধ করেছে সরকার। গত জুনের শেষ সপ্তাহে স্পট মার্কেট থেকে যে এলএনজি কেনা হয় ইউনিটপ্রতি (এমএমবিটিইউ) ২৫ ডলারে, তা এখন বেড়ে হয়েছে প্রায় ৪০ ডলার। এ কারণে লোকসান কমাতে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের কারণে জ্বালানির বিশ্ববাজার এখনো অস্থির। এ অবস্থায় কাক্সিক্ষত পরিমাণ গ্যাস আমদানি করতে পারছে না সরকার।
দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়লেও এ মুহূর্তে গ্যাসের অভাবে এর পুরো সুফল পাচ্ছে না দেশবাসী। অতীতে দেখা গেছে, চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস-বিদ্যুৎ না পেয়ে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাধ্য হয়ে ব্যয়বহুল বিকল্প ব্যবস্থায় উৎপাদন প্রক্রিয়া চালু রাখতে গিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কারণ এতে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্যের বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে গেছে। আবারও যেন এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সেজন্য গ্যাসের নতুন উৎসের সন্ধানে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর অনাবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র থাকলেও অনুসন্ধান কাজে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। আমাদের সাগর এলাকায়ও গ্যাস অনুসন্ধানে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। বাপেক্সকে আরও শক্তিশালী করা হলে আশা করা যায় এ প্রতিষ্ঠান দেশবাসীকে গ্যাস খাতে বড় ধরনের সুখবর দিতে সক্ষম হবে। সরকার দেশকে পরিপূর্ণ স্বনির্ভর করতে যে প্রাণপন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে গ্যাস ও বিদ্যুতের প্রতি আরো বেশি মনোযোগ দেয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।