সড়ক পরিবহন বিধিমালা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

54

দেশে সড়ক দুর্ঘটনা একটি নৈমিত্তিক বিষয়। সড়ক মহাসড়কে দুর্ঘটনায় অসংখ্য নর-নারী ও শিশুর অকাল মৃত্যু হচ্ছে। এ নিয়ে দেশে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ ¯েøাগানে আন্দোলনও হয়েছিল। আন্দোলনের পর ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন আইন পাস হয়। একই বছরের ৮ অক্টোবর আইনটি প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়। ২০১৯ সালে ১ নভেম্বর থেকে আইন কার্যকরের ঘোষণা দেয় সরকার। কিন্তু আইন পাসের পর চার বছরেও বিধিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় দেশে সড়ক আইন শতভাগ প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি। বছরে হাজারের অধিক মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হতে দেখা যাচ্ছে। যা কোন কোন বছর দু’তিন হাজারে উন্নীত হতেও দেখা গেছে।
দেশের সড়ক মহাসড়ক যেন একটি বড়ো মৃত্যুফাঁদ। এমতাবস্থায় ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন বিধিমালা আইন গেজেট আকারে প্রকাশিত হলো সড়ক পরিবহন আইনের বিধিমালা চূড়ান্ত রূপ পাওয়ায় আমরা সরকার ও সংশ্লিষ্টদের সাধুবাদ জানাই।
দেশে বিভিন্ন প্রকারের যানবাহন সড়ক ও মহাসড়কে চলে। বাস, মিনিবাস, লেগুনা ইত্যাদি যানবাহনের ড্রাইভার, কন্ট্রাকটর, সুপারভাইজার, হেলপার নিয়োগে বিধিমালা থাকলেও বর্তমান বিধিমালায় বেটারিরিক্সা, অটোরিক্সা এবং ছোটখাট অন্যান্য যানবাহনের ড্রাইভারদের বিষয়ে কোন বিধিমালা সড়ক পরিবহন আইনে উল্লেখ নেই। ছোট যানবাহনের সংখ্যা সড়কে বেশি। এদের অদক্ষতার কারণে অনেক সড়ক দুর্ঘটনার সৃষ্টি হতে দেখা যায়। দেশের সড়কে যে সকল যানবাহন তথা গণপরিবহন চলাচল করে ছোটবড় নির্বিশেষে সকল যানবাহনের হিসাব সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে থাকা প্রয়োজন। অসংখ্য যানবাহন ও তার চালকদের আইনের বাইরে রেখে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। রিক্সা, অটো রিক্সা, বেটারি চালিত অটো রিক্সার অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারি পরিচালনার কারণে দেশের অসংখ্য সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। যান্ত্রিক যেকোন গাড়ি চালকের আইনি বাধ্যবাদকতা জরুরি। কোন প্রশিক্ষণ ছাড়াই সড়ক আইন অবগত না হয়ে, ট্রাফিক আইন না জেনে রিক্সা, অটোরিক্সা, বেটারি চালিত অটোরিক্সা চালিয়ে অসংখ্য ছোট ছোট যান বাহন সড়ক মহাসড়কের জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। এদের কারণে বাস, মিনিবাস, লেগুনাসহ বিভিন্ন যানবাহন দুর্ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছে। তাই নিরাপদ সড়ক আইনের বিধিমালায় দেশের সকল যানবাহনের বিষয়ে ব্যাখ্যা সংযোজন হওয়া জরুরি।
দেখেশুনে বলা যায় আমাদের দেশে আইন আছে তার যথাযথ বাস্তবায়ন নেই। দেশে সড়ক পরিবহন আইন এবং তার বিধিমালা প্রণীত হয়েছে তা আমাদের জন্য তথা দেশের মানুষের জন্য সুখের কথা। কিন্তু দ্রæত সময়ের মধ্যে আইন বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগ ছাড়া জনগণ এই আইনের সুফল পাবে না। মাঠে ময়দানের তথা সড়কে গাড়ি চালকদের মধ্যে এবং গাড়ির হেলপার, ড্রাইভার, সুপারভাইজার, কন্ডাকটরসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে প্রথমে সচেতন করা জরুরি। এরপর নির্র্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সড়ক পরিবহন আইনের বিধিমালার আওতায় তাদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। বাস, মিনিবাস, লেগুনার ড্রাইভার, সুপারভাইজার, কন্ডাকটর আইন মেনে গাড়িতে উঠছে কি না তা যাচাই করার কার্যকর ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষত বয়সসীমা মেনে যানবাহনের কর্মচারি হয়েছে কি না তা বিশেষ ভাবে যাচাই করতে হবে। আর যে সকল যানবাহন শ্রমিক বিশ বছরের কম তাদের রিক্সা, অটোরিক্সা, বেটারিচালিত রিক্সাসহ সকল যানবাহনের চালক কিংবা শ্রমিক হওয়া থেকে বিরত রাখার কার্যকর ব্যবস্থা জরুরি।
সড়ক আইন, ট্রাফিক আইন মেনে প্রশিক্ষিত চালক দ্বারা যানবাহন পরিচালিত হলে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে। সরকার আইন প্রণয়ন করেছে। সরকারের আইন বাস্তবায়নী কর্তৃপক্ষকে এই আইন কার্যকর করতে আন্তারিকভাবে কাজ করতে হবে। এখানে দুর্নীতির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আইন বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের দুর্নীতিমুক্ত করা গেলে অবশ্যই সড়ক আইন ও আইনের বিধিমালার সুফল দেশের জনগণ পাবে এমন ধারণা সমগ্র দেশবাসীর। এদেশের সড়ক হোক নিরাপদ ও আনন্দদায়ক-এটাই আমাদের কাম্য।