স্বনির্ভর হোক সিটি কর্পোরেশন

13

দেশের সিটি কর্পোরেশনগুলো স্বায়িত্বশাসিত হলেও লাগাম কিন্তু মন্ত্রণালয়ের হাতে। আর উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদনসহ অর্থের বড় একটি অংশ সরকারি কোষাগার থেকে দেয়া হয়। এ অবস্থায় সিটি কর্পোরেশনগুলো স্বশাসিত হলেও নিজস্ব স্বকিয়তা রক্ষা করে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না, এতে নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণও দূরুহ হয়ে পড়ে। এ অবস্থার অবসান চান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। রবিবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ভবনে মেয়র কার্যালয়ে চসিক ও সিসিক মেয়রদ্বয় ও তাদের প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় সভায় এ অভিব্যক্তি প্রকাশ করা হয়। তাদের ভাষায় ‘কাগজে-কলমে স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হলেও সবকিছুর জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয় সিটি কর্পোরেশনগুলোকে। এতে কাজের গতি ও বাস্তবায়নের গতি ধীর হয়ে যাচ্ছে। এমনকি আয়বর্ধক প্রকল্প হাতে নিলেও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন জটিলতায় আলোর মুখ দেখে না।’ তাই মন্ত্রণালয়ের প্রতি নির্ভরতা কমিয়ে সিটি করর্পোরেশনগুলোর গতি বাড়ানোর উপর জোর দেন দুই নগর অভিভাবক। এ বিষয়ে দেশের বাকি সিটি করর্পোরেশনের মেয়রদের সাথে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিমত জানানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। চসিক ও সিসিক মেয়রের এ উদ্যোগ সময়োপযোগী এবং যথার্থ বলে আমরা মনে করি। আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে এ জাতীয় সংলাপ ও উদ্যোগের কথা বলেছিলেন প্রয়াত মেয়র চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং ঢাকার মেয়র প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফ। তারা দুজনই ওই সময় ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন সিটি করর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়রদেও সাথে আলোচনা, মতবিনিময়, সংলাপ ও সেমিনার সিম্পোজিয়াম করেছিলেন। সরকারকে বুঝানোর চেষ্টা করেছিলেন নাগরিক সেবা বৃদ্ধি ও নগরীর উন্নয়ন ত্বরান্বিত ও নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবে সিটি কর্পোরেশনগুলোকে ‘সিটি গভর্নমেন্ট’-এ রূপ দিতে হবে। দেশের স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজ তাদের এ উদ্যোগকে স্বাগত হানিয়েছিলেন। আশা করা হয়েছিল সিটি গভর্নমেন্ট হলে এক ছাতার নিচে নগরীর সকল সেবা সংস্থা চলে আসবে। সমন্বিত প্রচেষ্টায় নগরীর উন্নয়নসহ নাগরিক সেবা বৃদ্ধি পাবে। সিটি কর্পোরেশনগুলোও স্বনির্ভরতা অর্জন করে স্বাধীনভাবে তাদের কর্মপন্থা নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করতে পারবে। কিন্তু সেই সিট গভর্নমেন্ট আর হয়ে উঠেনি। বর্তমান মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরী ও আরিফুর হক চৌধুরী বিষয়টি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করলেও বাস্তবতা হচ্ছে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হলে, নাগরিক সমস্যার সমাধান করে একটি আধুনিক ও স্মার্ট সিটি গঠন করতে হলে সিটি গভর্নমেন্টের কোন বিকল্প নেই।
আমরা লক্ষ করে আসছি, ব্রিটিশ আমলে গঠিত মিউনিসিপ্যাল অ্যাক্ট অ্যাক্ট এর বিধি অনুযায়ী এখনও সিটি কর্পোরেশনগুলো নাগরিক সেবা দিয়ে আসছে। তারা শুধু নগর পরিচ্ছন্নতা, আলোকায়ন, মশক নিধন ও সীমিত সড়ক উন্নয়নের কাজ করতে পারবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা নাগরিক জীবনের অতি প্রয়োজনীয় কোন সেবা তারা দিতে পারবেনা। এ সীমাবদ্ধতাকে একমাত্র অতিক্রম করতে পেরেছিল চট্টগ্রাম পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান মরহুম নুর আহমদ (নুর আহমদ চেয়ারম্যান)। তিনি পৌরসভার কমক্ষেত্রে সংযোজন করেছিলেন শিক্ষাকে। পরবর্তীতে মহিউদ্দিন চৌধুরী সেই শিক্ষাকে বিস্তৃত করেছেন। প্রাথমিক থেকে শুরু করে ডিগ্রি কলেজ পর্যন্ত করেছিলেন। যা সারা বিশ্বের জন্য দৃষ্টান্ত হয়েছিল। পাশাপাশি তিনি স্বাস্থ্যসেবাকে কর্পোরেশনের কর্মসূচিতে যুক্ত করে নগরবাসীর মনে স্থায়ী নিবাস গড়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের জনবল কাঠামোতে শিক্ষা বিভাগের কোন প্রতিষ্ঠান নেই। এরপরও এ শিক্ষা বিভাগ চসিকের ভাবমুর্তিও প্রধান হাতিয়ার। চসিক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অন্যতম স্তর। সিসিক মেয়র চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিদর্শন ও মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে চসিকের বিনিয়োগ এবং এ দুটি বিভাগের বিষয়ে জেনে উৎফুল্ল হয়েছেন। দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনা করে সিসিকে এর প্রতিফলনের কথা বলেছেন। এটি আমাদের জন্য গর্বের, আনন্দের। আমরা আশা করি, বর্তমান মেয়র যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা সফল হবে। বিশেষ করে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে হলে স্বনির্ভরতার বিকল্প নেই। সকল সেবা সংস্থাকে এক ছাতার নিচে আনতে পারলে এ উদ্যোগ শতভাগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তবে এজন্য সরকারকে আন্তরিক হতে হবে।