স্থায়ী মেরামতে ফিরছে রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা

68

পাহাড়ধস ট্র্যাজেডির ৩১ মাস পর অবশেষে স্থায়ী মেরামত ও পুননির্মাণ কাজ প্রকল্পে ২৪৯ কোটি টাকার বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এতে স্থায়ী মেরামতে ফিরছে রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। প্রকল্পটিতে পাহাড়ধসের কারণ ও রক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞ স্টাডি করতে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এখন প্রস্তুতি চলছে টেন্ডার প্রক্রিয়ার। তবে বর্ষার পরেই পুরোদমে কাজ শুরু হবে। নানান কারণে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তবনাটি ঝুলে থাকার পর চলতি জানুয়ারিতে এ অর্থ অনুমোদন দিয়েছে সরকার। মেরামত খাতে এটিই হচ্ছে পাহাড়ের সর্বোচ্চ ব্যয়-বরাদ্দ। এতে রাঙামাটির ছয়টি সড়কে ২১০ কিলোমিটার রাস্তায় ১৫১টি স্পটে পাইলিংসহ রিটেইনিং ওয়াল এবং স্লোপ প্রটেকশন নির্মাণ করা হবে। রাঙামাটি সড়ক সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ২০১৭ সালের ১৩ জুন পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পাহাড়ধসের ঘটনায় ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানী ঘটে। এর ঠিক এক বছরের মাথায় ২০১৮ সালের ১২ জুন জেলার নানিয়ারচরে ফের পাহাড়ধসে ১১ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। গত ১৩ জানুয়ারি পাহাড়ধসের ৩১ মাস পূর্ণ হয়েছে। অথচ আজও পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারেনি পাহাড়ি এই জনপদ। রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) দপ্তর জানিয়েছে, রাঙামাটি-চট্টগ্রামসহ জেলার ক্ষতিগ্রস্ত ৫টি সড়কের মধ্যে রাঙামাটি শহরে ৩৩, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে ৫৬, রাঙামাটি বান্দরবান সড়কে ২৬, বাঙ্গালহালিয়া-রাজস্থলী সড়কে ৫ ও বগাছড়ি-নানিয়ারচর-লংগদু সড়কে ৩টি স্থানসহ ১২৮টি স্থানে সড়ক ধসে গেছে। রাঙামাটি সদরসহ জেলার ৭ উপজেলা ও পার্শবর্তী দুই জেলা খাগড়াছড়ি ও বান্দবানের অন্তত ১০ লাখ মানুষ এসব সড়কের ওপর নির্ভরশীল। এসব স্থানে ‘স্থায়ী মেরামত ও পুননির্মাণ কাজ’ করতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি প্রস্তাবনা পাঠায়। ২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল পাঠানো ওই প্রস্তাবনায় ১৭০ কোটি টাকা চাওয়া হয়। পরে তা বাড়িয়ে ফের ২৩০ কোটি টাকা চাওয়া হয়। এ প্রস্তাবনায় ৪ হাজার ৭২৫ মিটার পাইলিংসহ রিটেইনিং ওয়াল এবং স্লোপ প্রটেকশন নির্মাণ ও কিছু সরঞ্জাম ক্রয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পটি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রণালয়ে আটকে যায়। মূলত রাঙামাটির হয়ে মন্ত্রণালয়ে তদবির করার মতো কোন নেতা না থাকায় প্রকল্পটি পাস হয়নি। তবে সর্বশেষ চলতি জানুয়ারিতে ২৪৯ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর আগে পাহাড়ধসের পরপরই এসব সড়কের ১১৩টি স্থানে ভাঙন ও গর্তের সাময়িক সংস্কার কাজ করা হয়। একটি বেইলি সেতু স্থাপন আর মাত্র ‘ছয়মাস স্থায়ী’ গাছের খুঁটি ও মাটির বস্তার বাঁধ দিয়ে তখন ব্যয় দেখানো হয় প্রায় ১৪ কোটি টাকা। গেল জুন ২০১৯ সরকার ফের ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলে একই কায়দায় ব্যয় দেখায় কর্তৃপক্ষ। অথচ এই টাকা খরচ করেও ঝুঁকিমুক্ত হয়নি সড়কগুলো। ২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সাপছড়ি শালবাগান এলাকায় মূল সড়কটি ধসে ১০০ মিটার গভীর খাদে পড়ে গেলে টানা ৩৩ দিন সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে রাঙামাটি। এতে দাম বেড়ে যায় নিত্যপন্যের। সংকট দেখা দেয় খাদ্য ও জ্বালানীর। মারাত্নক মন্দা দেখা দেয় পর্যটন ব্যবসায়ও। তবে ৬৯ দিন পরে ভারী যান চলাচল শুরু হলে স্বস্তি ফিরে জেলাজুড়ে। পাহাড়ধসে প্রধান সড়ক ছাড়াও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রাস্তা, স্থাপনা, ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়। গত ৩ ফেব্রূয়ারি রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাড়সকের বেশ কয়েকটি ভাঙন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখে গেছে বেহাল অবস্থা। গত বর্ষায় পানির প্রবাহে সড়কের ভাঙনে মাটির বস্তা ও গাছের খুঁটির পাইলিং দিয়ে বাঁধ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বস্তা আর খুঁটিকে সড়কের বিপরীত পাশ থেকে বেঁধে রাখা লোহার দড়ি ছিড়ে গেছে। দেবে গেছে মাটিও। শুকিয়ে যাওয়া গাছের খুঁটিতে পোকায় ধরেছে। ভারি বৃষ্টিপাত হলে যে কোন সময়ই ধসে যেতে পারে। কিন্তু এসব বাঁধের ভাঙনরোধে স্থায়ী কোন অবকাঠামো তৈরি করা হয়নি। রাঙামাটি বাস মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, পাহাড়ধসের পরে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের মেরামত কাজ করায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিরুদ্ধে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। কাজের মান ও ব্যয়-বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাই কাজ ভালো করার জন্য ভালো ঠিকাদার নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সবার সচেতনতা দরকার। রাঙামাটি সড়ক সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী উৎপল সামন্ত জানান, চলতি মাসে ২৪৯ কোটি টাকার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ছয়টি সড়কে ১৫১টি স্পটে পাইলিংসহ রিটেইনিং ওয়াল এবং স্লোপ প্রটেকশন নির্মাণ করা হবে। এতে পাহাড়ধসের কারণ ও রক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞ স্টাডি করতে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া কিছু সরঞ্জামও কেনা হবে। এখন প্রস্তুতি চলছে টেন্ডার প্রক্রিয়ার। তবে বর্ষার পরেই পুরোদমে কাজ শুরু হবে।