সোশ্যাল মিডিয়ায় যতকথা

21

জীবনের চলার পথে দিকদর্শন
আবছার মাহফুজ

একদিন সক্রেটিসের কাছে তার এক পরিচিত লোক এসে বলল, আপনি কি জানেন আপনার অমুক বন্ধু সম্পর্কে আমি কি শুনেছি? সক্রেটিস তেমন আগ্রহী না হয়ে বললেন, এক মিনিট থামেন। আমাকে কিছু বলার আগে আপনাকে ছোট্ট একটা পরীক্ষা পার হতে হবে; এই পরীক্ষার নাম ‘ট্রিপল ফিল্টার টেস্ট’। লোকটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল, ট্রিপল ফিল্টার। এইটা আবার কি জিনিস? সক্রেটিস বললেন, আমার বন্ধু সম্পর্কে আমাকে কিছু বলার আগে আপনি যা বলবেন তা ফিল্টার করে নেওয়া ভালো। তিন ধাপে ফিল্টার হবে বলে আমি এটাকে ‘ট্রিপল ফিল্টার টেস্ট’ বলি। প্রথম ফিল্টার হলো ‘সত্যবাদিতা(Truthfulness.) আপনি কি নিশ্চিত যে আপনি যা বলবেন তা সত্য? লোকটা বলল, না, আমি শুধু শুনেছি জাস্ট এতটুকুই। পুরোপুরি সত্য কিনা, তা নিশ্চিত নই। সক্রেটিস বললেন, ঠিক আছে। তাহলে আপনি জানেন না এটা সত্য কিনা? এবার দ্বিতীয় ফিল্টার। এই ফিল্টারের নাম হল ‘ভালোত্ব (Goodness.)
আমার বন্ধু সম্পর্কে আপনি যা বলবেন তা কি ভালো কোনো বিষয়? লোকটা একটু আমতা আমতা করে বলল, না, ভালো নয়, খারাপ কিছু। সক্রেটিস বললেন, তার মানে আপনি আমার বন্ধু সম্পর্কে এমন একটা খারাপ কথা বলতে এসেছেন যা আদৌ সত্য কিনা সে ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত নন। আচ্ছা, আপনি হয়ত এখনো পরীক্ষায় পাস করতে পারেন। কারণ তিন নাম্বার ফিল্টার বাকি আছে। এটা হল ‘উপকারিতা (Usefulness.) আমার বন্ধু সম্পর্কে আপনি যা বলবেন তা কি আমার বা আপনার কোনো উপকারে লাগবে? লোকটি বলল, না, সেরকম না। এতে আমার বা আপনার কারোই উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সক্রেটিস তখন শান্তভাবে বললেন বেশ, আপনি যা বলতে চান তা- সত্য না, ভালো কিছুও না, আবার আমার বা আপনার কোনো উপকারেও আসবে না। তাহলে কেনইবা আমরা এসব অহেতুক কাজে সময় নষ্ট করব? We shall try to use our time truthfulness, goodness and usefulness.চলুন, সময়টাকে একটা ভালো কাজে ব্যয় করি। লোকটা তাই আর কিছু না বলে চলে গেল।

চা শ্রমিকদের প্রতি অবিচার; সমাধান জরুরি
মশিউর রহমান আবির

সম্প্রতি চা-শ্রমিকেরা তাদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে। দিয়েছে কর্মবিরতি। তাদের জোর দাবি তাদের মজুরি যেন ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু মালিকপক্ষ সেটা মানতে নারাজ। এখন একটি প্রশ্ন যদি সেই মুনাফালোভী মালিক ছাড়া দেশের প্রতিটি সাধারণ জনগণের কাছে করা হয় যে, একজন শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা তা কতটুকু যৌক্তিক। সবাই কোনোরকম চিন্তা না করেই উত্তর দিবে, বর্তমান সময়ের জন্য এতো খুব নগণ্য। আসলেই নগণ্য। বর্তমান সময়ের সাথে তুলনা করলে একজন শ্রমিকের দৈনিক মজুরি হিসেবে এই ৩০০ টাকা খুবই নগণ্য। চা শ্রমিকরা সেই নগণ্য অঙ্কটাই চেয়েছে। যেখানে তাদেরকে এখন দেওয়া হচ্ছে মাত্র ১২০ টাকা মজুরি। দ্রব্যমূল্যের দিকে তাকালে বুঝা যাবে একটি একেবারে ছোট পরিবার কোনো রকম চলতে গেলেও মাসে অন্তত দশ থেকে পনেরো হাজার টাকা খরচ আছে। তাও জুটবে কটা ভাত আর ডাল।
বেশিতে একটু সবজি। মাছ, মাংসের আশা করা তো আকাশকুসুম কল্পনা। যেখানে বর্তমান মজুরি হিসাব করলে মাসের প্রত্যেকটা দিন কাজ করলে হাতে আসে মাত্র ৩৬০০ টাকা। এক পরিবারের ২ জন কাজ করলে উভয়ের টাকা যোগ করে হয় ৭২০০ টাকা। তাও সেই সর্বনিম্ন খরচের ধারেকাছেও যেতে পারে না আয়ের অঙ্ক। এমতাবস্থায় এটা দিনের আলোর মতো পরিস্কার যে তাদের মজুরি বাড়াতেই হবে। তা না হলে দুর্বিষহ দিন কাটাতে হবে সেই অসহায় শ্রমিকদের। এটা একপ্রকার তাদের প্রতি নির্যাতন। শ্রমিকের প্রতি এভাবে নির্যাতন করার অধিকার কারো নেই। এবং এই নির্যাতন জনসাধারণ কোনোভাবেই মেনে নিবে না। তাই মালিকপক্ষের প্রতি আহবান থাকবে যাদের কারণে, যাদের শ্রমে আপনাদের পেট ভালো আছে দয়া করে তাদের পেটে লাথি দিবেন না। তাদের দাবি মেনে নিয়ে তাদেরকে ভালো রাখুন, আপনারাও ভালো থাকুন, দেশকেও ভালো রাখুন। অর্থনীতির চাকাগুলো সচল রেখেছে যারা, সেই চাকায় কেন বলো পিষ্ট হবে তারা?