সম্প্রীতি ও সাম্যের জয়গান ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে

11

‘রমজানেরই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ…’

দীর্ঘ এক মাস আত্মশুদ্ধি অর্জনে সিয়াম সাধনার পর আজ না হয় কাল পশ্চিম আকাশে শাওয়ালের একফালি চাঁদ দেখা দিলেই ঈদের উৎসব শুরু হবে। কাল বুধবার। অন্যথায় ঈদ উদযাপিত হবে বৃহস্পতিবার। ঈদ মানে আনন্দ। দীর্ঘ সিয়াম ভাঙ্গার পর পরম তৃপ্তিতে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করে সকল মানুষের সাথে উৎসব উদযাপন করাটাই ঈদ। ঈদে আমাদের কামনা থাকে, ঈদে সবার জীবন হয়ে উঠুক আনন্দময় ও নিরাপদ। অন্যান্য উৎসব থেকে এ ঈদের পার্থক্য হল- সবাই এর অংশীদার। সবার মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মধ্যে রয়েছে অপার আনন্দ। ঈদের দিন ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই ঈদগাহে গিয়ে এক কাতারে শামিল হয়ে মহান আল্লাহর কাছে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় শেষে ক্ষমা প্রার্থনা করে। ঈদের আগের এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলমান আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার ব্রতে লিপ্ত ছিল। এসময় উপবাস যাতনা সম্ভ্রমের মাধ্যমে অপরের দুঃখ-কষ্ট বুঝতে সচেষ্ট হয়। রোজার প্রধান লক্ষ্য ত্যাগ ও সংযম। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ত্যাগের অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারলে তা হবে সবার জন্য কল্যাণকর। দুর্ভাগ্যজনক যে, রমজান সংযমের মাস হওয়া সত্তে¡ও একশ্রেণীর ব্যবসায়ী বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়ে অধিক মুনাফা করেছে। অবশ্যই প্রশাসনের অধিক সতর্কতার ফলে এবার প্রথমদিকে পণ্যমূল্যে আগুন ছড়ালেও পরবর্তীতে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে ঈদের বাজারের পোশাক-পরিচ্ছেদ ও অন্যান্য সামগ্রীর দোকানে প্রচন্ড ভীড় ছিল। তপ্ত গরমে মানুষের হাঁসফাঁস বেড়ে গেলেও ঈদ বাজারের গরমাক্ত ভাব কমেনি। উৎসবপ্রিয় বাঙালি যেভাবেই হোক উৎসবে মাতবে তাতে গরম, শীত আর বৃষ্টি বিবেচ্য বিষয নয়; এখানে আবেগ ও অনুভূতি একাকার। ঈদে ঘরমুখো মানুষ স্বজনদের কাছে ফিরে যাওয়ার প্রচন্ড তাগিদ লক্ষ্য করা যায়। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজরদারির কারণে সড়কপথে ভোগান্তি অন্যান্যবারের চেয়ে কম। তবে শহরে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথগুলোতে সার্বক্ষণিক যানজটের কারণে কিছুনা বিড়ম্বনা সইতে হচ্ছে যাত্রীদের। এবার রমজান মাসে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক ছিল। উল্লেখ করার মত ছিলনা মলম পার্টির তৎপরতা, ছিনতাই ও প্রতারণার ঘটনা। আমাদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে অনেক সমস্যা আছে, আছে অনেক সংকট। তা সত্তে¡ও বিভিন্ন জাতীয় উৎসবে শ্রেণী-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ শরিক হয়। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী প্রিয়জনকে নতুন পোশাক ও উপহার সামগ্রী কিনে দেয়। যারা সারাবছর জীর্ণ পোশাকে থাকে, তারাও ঈদের দিনে সন্তানদের গায়ে নতুন পোশাক পরাতে চায়। ঈদের আনন্দ কেবল একা ভোগ করলে হবে না, গরিব-দুঃখী মানুষকে তাতে শামিল করতে হবে। এটিও ইসলামের শিক্ষা। এ কারণেই ধনীদের উপর জাকাত ফরজ করা হয়েছে। কবি নজরুলের উল্লেখিত চরণেও তার ইঙ্গীত রয়েছে। ঈদের নামাজ আদায়ের আগেই ফিতরা দেয়ার নিয়ম। ফিতরার উদ্দেশ্য, দারিদ্র্যের কারণে যাতে কেউ আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়, তার নিশ্চয়তা বিধান করা। সচ্ছলরা সঠিক নিয়মে জাকাত-ফেতরা দান করলে দরিদ্ররাও ঈদের খুশির ভাগ পেতে পারে। রমজান সংযমের মাস হলেও অনেকে খাওয়া-দাওয়া ও কেনাকাটার পেছনে অঢেল অর্থ ব্যয় করেন। দরিদ্র স্বজন বা প্রতিবেশীর প্রতি অনেকে কোনো দায়িত্ব পালন করেন না। ব্যক্তিগত ভোগ-বিলাসে ব্যস্ত থাকেন। এটি ইসলামের বিধানের পরিপন্থী। ঈদ উদ্যাপনের সময় আমাদের এ কথাটিও মনে রাখতে হবে। তাছাড়া এবার যেহেতু উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ উদযাপন হচ্ছে সেহেতু আর্থিকভাবে পর্যুদস্ত ও অসহায় মানুষগুলোর মধ্যে সঠিকবাবে জাকাত, ফিতরা ও সদকা আদায় করে সমাজের অসহায়, গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষগুলোকে ঈদ উদযাপনের সুযোগ করে দিতে হবে-এটিই ইসলামের মহান শিক্ষা। পবিত্র ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। ঈদের আগে পরে সাপ্তাহিক বন্ধসহ সরকারি বন্ধ রয়েছে পাঁচ দিন। প্রচন্ড দাবদাহে জ্বলছে দেশ। এ সময় আমাদের সতর্কতার সাথে চলা ফেরাকরা সর্বোপরি ঘরে থেকে পরিবারের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করার স্থির সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি। ভুলে গেলে চলবেনা ইসলাম ঈদের আনন্দের সাথে শৃঙ্খলাযুক্ত জীবনের তাগিদ দিয়েছে। আমরা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কঠিন এক পরিস্থিতির মধ্যে দিনাতিপাত করছি। তবু এবার ঈদে সাধারণ মানুষের উৎসাহের কমতি নেই। আমরা আশা করি, সম্প্রীতি, সদ্ভাব ও সৌহার্দ্যরে মাধ্যমে ঈদুল ফিতরের আনন্দ সবাই ভাগাভাগি করে নেব।
দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ী, পত্রিকার কুশীলবসহ দেশবাসীর প্রতি পূর্বদেশ পরিবারের পক্ষ থেকে ঈদ মোবারক।