শিকলবাহায় নৌকার প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহারের গুঞ্জন দলের নেতাকর্মীদের পাশে না থাকার অভিযোগ

179

কর্ণফুলী প্রতিনিধি
কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী আবদুল করিম ফোরকানের মনোনয়ন প্রত্যাহারের গুঞ্জন উঠেছে। প্রতি রাতে তার ব্যানার, পোস্টার চুরি, প্রচার-প্রচারণায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কাছে না পাওয়া এবং ভোটের মাঠে গ্রুপিংয়ের শিকার হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে নৌকার প্রার্থী আবদুল করিম ফোরকানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। কিন্তু দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী নৌকার পক্ষে কাজ করছেন না। তারা বিদ্রোহী প্রার্থীর সাথে সরবে ও গোপনে কাজ করছেন। কিন্তু দলের পক্ষ থেকে তাদের বিষয়ে কোনো ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নির্বাচনে স্থানীয় অভিভাবক সাইফুজ্জমান চৌধুরীও দলের প্রেষ্টিজ ইস্যু নিয়ে চিন্তিত। বিদ্রোহী প্রার্থী এলাকার ভোটার প্রতি ৫ হাজার টাকা বাজেটের ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনের মাঠে নিশ্চিত জয়ের চ্যালেঞ্জ করেছেন। এ চ্যালেঞ্জ কার বিরুদ্ধে সে প্রশ্ন রেখে এ পরিস্থিতিতে আমি মাঠে থাকবো কি থাকবো না কিংবা আমার সিদ্ধান্ত কি সেটি সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে জানিয়ে দেবো।
উল্লেখ্য, ৩০ নভেম্বর কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর সমর্থনে আয়োজিত বর্ধিত সভায় উপস্থিত হননি কোনো নেতা-কর্মী। সভায় ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি। সভায় প্রধান অতিথি হায়দার আলী রনি যোগ দেন। তবে সভার বেহাল অবস্থা দেখে উপস্থিত যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কয়েক নেতা-কর্মীর উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রেখে দ্রæত মঞ্চ ত্যাগ করেন তিনি। এজে চৌধুরী স্কুলের মিলনায়তনে ওই সভার আয়োজন করা হয়।
জানা গেছে, শিকলবাহা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ২০১৬ সালে দলীয়প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন এবং চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সে কারণে ওই বছর তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হলেও পরবর্তীতে উপজেলা আওয়ামী লীগে তার পদোন্নতি দেয়া হয়। চলতি নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহ করে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তার সাথেই কাজ করছেন দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী। অনেকটা একাই প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন নৌকার প্রার্থী আবদুল করিম ফোরকান।
মাস্টারহাটসহ কোনো কোনো স্থানে তাকে পুলিশের সহায়তা নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হচ্ছে। গত শুক্রবার বিকালেও মাস্টারহাট এলাকায় তিনি পুলিশের পাহারায় প্রচারণা চালিয়েছেন। রাতে তার অধিকাংশ পোস্টার ও ব্যানার চুরি হয়ে গেছে। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগে গ্রæপিংয়ের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
কর্ণফুলী থানার ওসি দুলাল মাহমুদ জানান, নৌকার ব্যানার ও পোস্টার চুরির খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালানো হয়েছে। তবে কাউকে গ্রেপ্তার বা সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দিদারুল ইসলাম দিদার শিকলবাহায় রাজনৈতিক দূরাবস্থার বিষয়ে বলেন, শিকলবাহায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া আর কোনো পদ পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি। এ কারণে কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। নৌকার প্রার্থীর অসহায়ত্বের দায় কার- সে বিষয়ে তিনি বলেন, ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের সকলকে আবারও ডাকা হবে। আমি মাঠে আছি ও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে যাব।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী রনি বলেন, চরলক্ষ্যায় বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে যারা কাজ করছেন তাদের সাথে বসেছি। শিকলবাহায় যারা বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন তাদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তাদের সাথে এ বিষয়ে কথা হবে। যাদের ফেরানো যাবে না তাদের প্রয়োজনে বহিস্কার করা হবে।
পুলিশ পাহারায় নৌকার প্রার্থীর প্রচার-প্রচারণার বিষয়টি সঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশ নিয়মিত টহলে গিয়েছিলেন। দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় পার হয়ে গেছে। নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানোর সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরণের কোনো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই।
এ বিষয়ে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক চৌধুরী বলেন, শিকলবাহায় দলের নেতা-কর্মীদের নৌকার বাইরে কাজ না করার জন্য কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।