লোহাগাড়া উপজেলা সদরকে পৌরসভা ঘোষণা করা হোক

368

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা সদরকে পৌরসভা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহলসহ এলাকাবাসীরা। এ লক্ষে সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে লোহাগাড়া উপজেলা সদর ও দক্ষিণ সূখছড়ি নিয়ে পৌরসভা গঠনের লক্ষে গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকারের পক্ষে গণশুনানী করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদ্মাসন সিংহ। পৌরসভা গঠনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: সালাহ উদ্দিন হিরু, উপজেলা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্লাবের সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ ইলিয়াছ, লোহাগাড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম, লোহাগাড়া শহর পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মিয়া মোহাম্মদ শাহজাহান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সদস্য নুরুল আলম জিকু, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক রিদওয়ানুল হক সুজন ও লোহাগাড়া শহর দোকান-কমচারী পরিষদের সভাপতি মিজবাহ উদ্দিন রাজিব প্রমুখ। গণশুনানীতে উপস্থিত লোকজন উপজেলা সদর এলাকাকে পৌরসভা গঠনের পক্ষে জোরালোভাবে একমত পোষণ করেন এবং দ্রুত পৌরসভা ঘোষণার দাবি জানান। অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রামের সবদক্ষিণের উপজেলার নাম লোহাগাড়া। ভূ-প্রাকৃতিকভাবে অঞ্চলটি পাহাড়ি অঞ্চল ও পাহাড়তলীয় পললভূমিতে বিভক্ত। ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ূর অন্তগত অঞ্চলটিতে ৯টি ইউনিয়ন ও ৪৩টি গ্রাম রয়েছে। ১৯৮১ সালে সাতকানিয়া থেকে বিভক্ত হয়ে পরিণত হয় আলাদা থানায়। ১৯৮৫ সালে উন্নীত হয় উপজেলায়। এই উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাম লোহাগাড়া। সদর ইউনিয়নে রয়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যতম ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র বটতলী মোটর স্টেশন ও দরবেশ হাট। বাণিজ্য কেন্দ্র বটতলী মোটর স্টেশনে রয়েছে ২০টি অত্যাধুনিক মাকেটসহ শত শত দোকান এবং সরকারি-বেসরকারি ও বিশেষায়িত মিলে ২৫টির অধিক বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা। আর উপজেলা সদরের বুকের উপর দিয়ে চলে গেছে অথনৈতিক সড়ক চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। অন্যদিকে উপজেলা সদরের লোকজন দেশে-বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে সাথে জড়িত। বিদেশেও থাকেন বহু লোকজন। এখানকার ৪০ ভাগ লোক ব্যবসায়ী ও ৩০ ভাগ লোক প্রবাসী। মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এখানকার ব্যবসায়ীরা সুনামের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করায় বৈদেশিক মুদ্রা আসছে বিপুল পরিমাণে। পৌরসভা আইন ২০০৯ অনুযায়ী যদি কোন এলাকার তিন-চতুথাংশ লোক অকৃষি পেশায় নিয়োজিত থাকে, শতকরা ৩৩ভাগ ভূমি অকৃষি প্রকৃতির হয়, জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বগকিলোমিটারে ১৫শ জনের বেশি হয় এবং জনসংখ্যা ৫০ হাজারের কম না হয় তাহলে ঐ এলাকাকে শহর এলাকা ঘোষণা যায়। পৌরসভা গঠনের উক্ত আইনগুলো লোহাগাড়া উপজেলা সদর এলাকায় বিদ্যামান। ২০১১ সালের শুরুর দিকে পৌরসভা গঠনের লক্ষে উপজেলা সদর লোহাগাড়াকে শহর এলাকা ঘোষণা করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। কিন্তু সীমানা নিধারণ নিয়ে আইনী জটিলতার কারণে তখন পৌরসভা ঘোষণ হয়নি। এখন নতুনভাবে আবারো দাবি উঠেছে উপজেলা সদর লোহাগাড়াকে পৌরসভায় উন্নীত করার জন্য। এ ব্যাপারে লোহাগাড়া শহর পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মিয়া মোহাম্মদ শাহজাহান জানান,দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও সাতকানিয়াসহ অন্যান্য পৌরসভার চেয়ে বহুগুণে উন্নত লোহাগাড়া উপজেলা সদর এলাকা। পৌরসভা ঘোষণার সব উপাদান রয়েছে এখানে। সিটি এলাকার মত ব্যবসায়িক পরিবেশ রয়েছে লোহাগাড়া উপজেলা সদর এলাকার বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোতে। লোহাগাড়া উপজেলা সদর পৌরসভায় উন্নীত হলে এলাকাবাসী লাভবান হবে বলে তিনি জানান। লোহাগাড়া শহর পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: সালাউদ্দিন হিরু জানান, লোহাগাড়ার মাটি ও মানুষের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পক অতি নিবিড়। ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে এখানকার লোকজনের রয়েছে যশ ও খ্যাতি। এতে এলাকার আথিক সচ্ছলতা ও অথনৈতিক সমৃদ্ধির প্রমাণ মিলে। অথচ এতো কিছু থাকার পরও লোহাগাড়া সদরকে পৌরসভায় উন্নীত করা হয়নি। তিনি লোহাগাড়া উপজেলা সদর এলাকাকে দ্রুত পৌরসভা ঘোষণার দাবি জানান। লেখক : সহযোগী অধ্যাপক আলহাজ্ব মোস্তফিজুর রহমান কলেজ, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম