মানবতার কল্যাণ ও শান্তি কামনায় প্রার্থনা হোক

8

ফারসিতে বলা হয় ‘শবে কদর’। আরবিতে ‘লাইলাতুল কদর’। যার অর্থ মহিমান্বিত রাত। এই রাতের মর্যাদা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। পবিত্র কুরআনে ‘কদর’ নামে স্বতন্ত্র একটি সুরা নাজিল হয়েছে। পাঁচ আয়াতবিশিষ্ট এই সুরায় লাইলাতুল কদরের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। ফলে ইসলামি শরিয়তে এর বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। মহান রব্বুল আলামিন বলেন, ‘আমি এই কুরআন কদরের রাতে নাজিল করেছি। কদরের রাত সম্পর্কে আপনি কী জানেন? কদরের রাত হাজার মাস থেকে উত্তম মাস। এই রাতে জিবরাইল আমিনসহ সব ফেরেশতা পৃথিবীতে আগমণ করে, তারা আল্লাহর নির্দেশে (ইবাদাত-বন্দেগীতে মত্ত )বান্দাদের জন্য আল্লাহর রহমত ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করেন, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (সুরা কদর)।
প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) রসুল (স.) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান সহকারে এবং প্রতিদানের আশায় লাইলাতুল কদরে নামাজ পড়বে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারি : ১৯০১)। হাদিসে ‘ইমানসহকারে’ কথাটির অর্থ হচ্ছে, এই রাতের মর্যাদা ও বিশেষ আমল শরিয়তসম্মত হওয়ার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা। আর ‘প্রতিদানের আশায়’ কথাটির অর্থ হচ্ছে, নিয়তকে আল্লাহ তা’আলার জন্য একনিষ্ঠ করা। লাইলাতুল কদর অতি মূল্যবান রাত হওয়ায় মহান রব্বুল আলামিন এর সুনির্দিষ্ট তারিখ গোপন রেখেছেন। তবে হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসুল (স.) বলেছেন, ‘রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো। (বুখারি : ২০১৭)। এর মধ্যে ২৭তম রাতে হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ইমাম আবু হানিফা (র.) কুরআনের সুরা কদর গবেষণা করে ২৭ তারিখ লাইলাতুল কদর হওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। তবে রমজানের শেষ দশকের ফজিলতই সবচেয়ে বেশি। প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (স.) শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। (মুসলিম : ১১৭১)।
এই রাতে মহাগ্রন্থ কুরআন নাজিল হয়, মানব জাতির এই বিরাট নিয়ামতের কারণেই এই রাতের এত মর্যাদা ও ফজিলত। এই কুরআনকে ধারণ করলেই মানুষ সম্মানিত হবে, একটি দেশ ও জাতি মর্যাদাবান হবে; গোটা জাতির ভাগ্য বদলে যাবে। কাজেই এই রাতে বেশি বেশি কুরআন পড়তে হবে। কুরআনের শিক্ষাকে ব্যক্তি ও সমাজজীবনে প্রতিষ্ঠার শপথ গ্রহণ করতে হবে। বাছাইকৃত কিছু আয়াত এই রাতে মুখস্তও করা যেতে পারে। যাদের কুরআনের ওপর প্রয়োজনীয় জ্ঞান রয়েছে, তারা এই রাতে একটি দরসও প্রস্তুত করতে পারেন। কুরআনের এই গভীর অধ্যয়ন আমাদের সৌভগ্যের দ্বার খুলে দেবে। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রসুল (স.)কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, হে আল্লাহর রসুল (স.)! যদি আমি শবে কদর পেয়ে যাই, তবে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব? রসুল (স.) বলেন, এই দোয়া পড়বে ‘আল্লহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুম তুহিব্বুল আফওয়া ফা-আফু আন্নি।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে তুমি ভালোবাসো, তাই তুমি আমাকে ক্ষমা করো।
মহান আল্লাহ বান্দাদের পাপ মুক্তির জন্য, বেহেস্তবাসী করানোর জন্য কত রকম সুযোগ করে দিয়েছেন, তার কোন সংখ্যা নেই। তবে দুটো সুযোগ স্পষ্টভাবে ঘোষণা হয়েছে, একটি হচ্ছে আল্লাহর প্রিয় হাবীব মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আইহি ওয়াসাল্লমার উপর সর্বদা দরুদ মরীফ পাঠ করা। আর দ্বিতীয়টি পবিত্র মর্যাদাবান ও মহিমান্বিত রজনী শবে কদর রাতে বেশি বেশি ইবাদত, কুরআন তিলাওয়াত, আল্লাহর যিকির ও দরুদ পাঠ করা। এ রজনী ক্ষমা চাওয়া এবং ক্ষমা করার রাত। এরাত ভাগ্যতাড়িত বান্দার ভাগ্যফেরার রাত। এরাতে ইবাদতে আল্লাহ খুশী হন, মাওলার খুশীতে বান্দার ইচ্ছার পূর্ণতা লাভ হয়। এ রাতের ফজিলতের আরেকটি দিক নিজের প্রয়াত মা-বাবাসহ মরব্বিদের কবর যিয়ারত করা। আল্লাহর প্রিয় বান্দা মহার অলি-বুযূর্গদের মাজার বা কবর যিযালত করাও উত্তম। তবে এ কাজটি করতে গিয়ে মূল ইবাদত যেন নষ্ট না হয়, পথেঘাটে আড্ডা-গল্পে যেন রাত চলে না যায়, সেইদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখা চাই, এরকম একটি রাতের প্রত্যাশা থেবে হজরত ইসা আলাইহিস সালাম আমাদের নবী করিম (স.) উম্মত হওয়ার প্রার্থনা করেছিলেন মহান প্রভুর কাছে। আল্লাহ তা কবুল করেছেন। তাঁকে দ্বিতীয়বার পৃথিবীতে প্রেণ করবেন। দুর্ভাগ্য আমরা অনেকে এ মহান রজনীকে খুঁজে পাবনা। এ রজনীর বড় তাৎপর্য হচ্ছে, সকলে নিজের জন্য নয় শুধু, বিশ্ব মানবতার জন্য দোয়া করবে। নির্যতিত ফিরিস্তিনি মুসরমানদের মুক্তির লড়াইয়ে যেন বিজয় অর্জিত হয়, তার জন্য বিশেষ প্রার্থনা হোক আজকের রজনীতে। একটি সুখি, সমৃদ্ধশীল ও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে যেন দাঁড়াতে পারে সেই সক্ষমতার জন্য প্রার্থনা হোক আজ।