ভারী বর্ষণেও লামার পাহাড়ে ঝুঁকিতে বসবাসকারীরা সাড়া দিচ্ছে না

28

ভারী বর্ষণের মধ্যে পাহাড়ধস ও হতাহতের আশঙ্কা থাকায় ঝূুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে লামা উপজেলা প্রশাসন নিয়েছে নানা উদ্যোগ। কিন্তু কিছুতেই সরতে রাজি হচ্ছে না এসব লোকজন। উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের মাইকিং, আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া, পাহাড়ি এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার এবং দুয়ারে-দুয়ারে গিয়ে প্রশাসনের অনুনয়-বিনয়েও সরছে না তারা। পাহাড়ে বসবাসরতদের অনেক তাগাদা দেওয়ার পর সোমবার পৌরসভা এলাকার ২৬ পরিবারের লোকজন নিরাপদে আশ্রয় নিলেও মৃত্যুঝুঁকি জেনেও উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে এখনো প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পরিবারের মানুষ পাহাড়ের চূড়া, কোল ঘেষে ও পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। পাহাড় ধসের দুর্ঘটনা এড়াতে ইতিমধ্যে উপজেলার ৫৫টি বিদ্যালয়কে আশ্রয়ন কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০১ সালের আদশশুমারী অনুযায়ী উপজেলার ৬৭১.৮৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ১৬ হাজার ৬৩টি পরিবার রয়েছে। আগের তুলনায় বর্তমানে এর সংখ্যা বাড়বে বলে পরিসংখ্যান অফিস সূত্র জানিয়েছে। সে হিসেবে এ উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি ও বাঙালি মিলে প্রায় দু’লাখ মানুষের বাস। এদের মধ্যে ৮০শতাংশ মানুষ ভৌগোলিক অবস্থানগণ কারণে ৮শ-১৫শ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়া, পাদদেশ কিংবা পাহাড়ের কোলঘেঁষে বসবাস করে আসছে। যার বেশির ভাগই পুনর্বাসিু ।
তারা ১৯৭৯-৮০ সালের দিকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিজ জন্মস্থান ত্যাগ করে এসব উপজেলায় পুনর্বাসিু হয়ে পাহাড় কেটে বসবাস শুরু করে ঝুঁকি মাথায় নিয়ে। বেসরকারি হিসেব মতে, লামা পৌরসভা ও লামা সদর, গজালিয়া, রূপসীপাড়া, সরই, আজিজনগর, ফাঁসিয়াখালী, ফাইতং ইউনিয়নে সাড়ে ৪ হাজার পরিবারের প্রায় ২০ হাজার মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাস করছে। একটানা বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসে ওই ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোর জান মালের আশঙ্কায় স্থানীয় প্রশাসনকে রীতিমত ভাবিয়ে তুলেছে। সর্বশেষ গণ বছরের ৩ জুলাই উপজেলার সরই ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি কালাইয়া পাড়ায় পাহাড় ধসে এক পরিবারের শিশুসহ তিনজন মারা যায়। এর আগে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় উপজেলায় বসুঘরের ওপর পাহাড় ধসে পড়ে ৪৬ জন নিহত হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, লামা পৌরসভা এলাকার চেয়ারম্যান পাড়া, নারকাটাঝিরি, হাসপাতাল পাড়া, বরিশাল পাড়া, বড়নুনারবিল পাড়া, চাম্পাতলী, নয়াপাড়া, সাবেকবিলছড়ি, রাজবাড়ী, কলিঙ্গাবিল, কাটাপাহাড়, মধুঝিরি এবং লামা সদর ইউনিয়নের লাইনঝিরির আগা, পশ্চিম মধুঝিরি, ডলুঝিরি, হাসপাতাল পাড়ায় পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে কয়েকশ পরিবার। এসব পরিবারের ঘরগুলোর কিছু পাহাড়ের পাদদেশে, কিছু কোলজুড়ে আবার কিছু চূড়ায়। একইভাবে উপজেলার আজিজনগর, ফাইতং, রুপসীপাড়া, গজালিয়া ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকার পাহাড় কেটে অপরিকল্পিতবাবে ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করে আসছে পাঁচ হাজারেরও বেশি পরিবার। তাদের বেশিরভাগই হতদরিদ্র মানুষ। তার মধ্যে সাড়ে চার হাজার পরিবারই অতিঝুঁকিতে বসবাস করে আসছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাগাদাসহ নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হলে ২৬টি পরিবার নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে কিংবা আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিলেও বেশিরভাগ এখনো সরে যায়নি।
ঝুকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী জামাল, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার জন্য মাইকিং শুনেও কাজে লাগাতে পারছিনা। সরকার যদি আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিত তাহলে যেতে পারতাম। এ বিষয়ে ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বলেন, বার বার তাগিদ দেওয়ার পরও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীরা সরে যাচ্ছেনা। সরে না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি ঝুঁকিপূর্ণদের বরাত দিয়ে বলেন, এলাকার বেশির ভাগ মানুষ গরিব। তাই নতুন করে নিরাপদ স্থানে ঘর তৈরি করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।
লামা পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, পৌরসভা এলাকায় যারা পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন তাদেরকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য বার বার মাইকিং এর মাধ্যমে তাগাদা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রে খোলার পাশাপাশি আশ্রয়গ্রহিতাদের জন্য খাবার, পানি ও তাদের বাড়ি পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও কেউ যেতে চায় না।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, উপজেলায় ৫৫টি বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পৌরসভা এলাকার ২৬টি পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। বাকি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোও সরে না গেলে প্রশাসন কঠোরতা অবলম্বন করবেন বলেও জানান তিনি।