বাজারে মানসম্পন্ন খাদ্য নিশ্চিত করা জরুরি

12

দেশের বাজার ভেজাল ও নিম্নমানের খাদ্যে ভরে গেছে। অসাধু একশ্রেণির লোক ভেজাল খাদ্য তৈরির কারখানা, ভেজাল ওষুধ তৈরির কারখানা এবং মাছ ও শাক সবজিতে ফরমালিন ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক রঙ মিশিয়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্যের সংকট তৈরি করছে। দেশে সরকার আছে প্রশাসন আছে, সিএসটিআই আছে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আছে। কিন্তু দেশের সর্বস্তরের মানুষ তার সুফল ভোগ করতে পারছে না। নিম্নমানের খাদ্যদ্রব্য, ভেজাল মিশ্রত খাদ্যদ্রব্য এবং ভেজাল ওষুধ খেয়ে দেশের জনস্বাস্থ্য বড় আকারের ঝুঁকিতে রয়েছে। সুস্থ সবল স্বাস্থ্য নিশ্চিতে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কারণে দেশের অধিকাংশ মানুষ পুষ্টিহীনতা এবং ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা জরুরি। সম্প্রতি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে বিশ্ব মান দিবসের অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স এবং টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের কর্মকর্তারা যা বলেছেন তা সর্বৈব সত্য। কিন্তু বাজারের খাদ্যদ্রব্যের গুণগত মান ও মূল্য স্বাভাবিক রাখার জন্য যারা কাজ করেছেন তাদের অবহেলার কথা কেউ বলেনি।
দেশে বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের আকাশচুম্বি মূল্য এবং ভেজালের দৌরাত্ম্যে দেশের মানুষ অসহায়। দেশে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করছে রাতারাতি বড় লোক হবার উদ্দেশ্যে। অসাধু ব্যবসায়ী সমাজ পুরো দেশকে জিম্মি করে রেখেছে। দেশে উৎপাদিত এবং আমদানিকৃত কোন রকম খাদ্যদ্রব্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় থাকছেনা। এ বিষয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন কার্যকর ব্যবস্থা দেশের বাজার ব্যবস্থায় গড়ে ওঠেনি। দেশে অসংখ্য ভেজাল কারখানা গড়ে ওঠেছে। ওষুধ তৈরির ভেজাল কারখানাও অসংখ্য। কারখানার ভেজাল দ্রব্য ও ওষধে বাজার ছেয়ে গেছে। তাছাড়া জনস্বাস্থ্যের ক্ষতিকর বহুপণ্য বিভিন্ন ব্যবসায়ী বাজার জাত করে ভোক্তাদের স্বাস্থের ক্ষতি সাধন করে যাচ্ছে। দেশের শিশুদের মনভোলানো বিভিন্ন মানহীন প্যাকেটজাত খাবার এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নানা প্রকারের পানীয় দ্রব্য বাজার ভরে গেছে। অথচ এসব খাদ্যদ্রব্য শিশুস্বাস্থ্য কিংবা জনস্বাস্থ্যের জন্য লাভজনক নয়, অথচ এ সকল খাদ্য বাজারজাত করণে বিএসটিআই নিরব। মাঝে মধ্যে লোকদেখানো অভিযান পরিচালিত হয় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে। কিন্তু মানসম্পন্ন খাদ্য এবং স্বাস্থ্যকর তাজামাছ ও সবজি ক্রয় করে মানুষ খাবার খেতে না পারলে জনস্বাস্থ্য স্বাভাবিক কি ভাবে থাকবে এ ব্যাপারে কোন কর্তৃপক্ষের কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ে না।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাঝেমধ্যে বাজার মনিটরিং করতে দেখা যায়। আবার মাঝে মধ্যে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন এবং বিএসটিআই কর্তৃপক্ষের লোকেরা বাজার মনিটরিং করে থাকে। এই মনিটরিং নিয়মিত নয়। যার কারণে দেশে দ্রব্যমূল্য যেমন দেশে স্থিতিশীল হচ্ছে না তেমনি বাজারের ভেজাল ও নিম্নমানের খাদ্যদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। যার ফলে জনস্বাস্থ্য যেমন ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছে তেমনি নানা প্রকার দূরারোগ্য ব্যাধিতে দেশের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। আবার রোগাক্রান্ত হবার পর ভেজাল ওষুধ খেয়ে আরো মারাত্মক অবস্থায় পতিত হচ্ছে দেশের জনস্বাস্থ্য। এমতাবস্থায় জনস্বাস্থ্য ঠিক রাখার স্বার্থে মানসম্পন্ন খাদ্যের বাজার নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য। খাদ্যে ভেজাল মেশানোর বিষয়ে ও নিয়োজিত বাজার তদারকি সংশ্লিষ্টদের জন্য জরুরি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সমূহ লোকবল, আন্তরিকতা, সততা ও নিষ্ঠার অভাবে ভোগছে। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং বিএসটিআই সংশ্লিষ্টদের সততা, নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতা নিশ্চিত করা গেলেই সরকারের পক্ষে দেশের খাদ্যের বাজারে খাদ্যের মান ও দাম দু’টাই স্বাভাবিক করা সম্ভব। উল্লেখ্য কর্তৃপক্ষ দু’টিকে লোকবলে সমৃদ্ধ করা সরকারের জন্য জরুরি এবং পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ী সমাজকে শায়েস্তা করাও জরুরি।
ব্যবসা একটি উত্তম পেশা। এপেশার মাধ্যমে মানবসেবা অধিক পরিমাণে নিশ্চিত হয়। মানব কল্যাণে ব্যবসার মানসিকতায় ব্যবসায়ী সমাজকে সৃষ্টি করা সম্ভব না হলে কোন অবস্থাতে দেশের বাজারের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। দেশের সর্বস্তরের মানুষের ভোগান্তির খাদ্য বাজার এবং তার মান নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আন্তরিক ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ইচ্ছা করলেই সরকারের পক্ষে বাজারের নিম্নমানের খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং ভেজাল নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে মনে করে দেশের অসহায় মানুষ।