‘বাংলার আপেল’ খ্যাতি লাভ চন্দনাইশের পেয়ারার

69

চন্দনাইশের পেয়ারার সুখ্যাতি দেশ ছেড়ে বিশ্ব ছড়িয়েছে। এ পেয়ারাকে বাংলার আপেল নামে খ্যাতি দিয়েছে সাধারণ মানুষ। এখানে উৎপাদিত পেয়ারা এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। চন্দনাইশের কাঞ্চননগর, হাশিমপুরের পেয়ারা দেশের সীমানা পেরিয়ে এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। বাংলার আপেল নামে খ্যাত চন্দনাইশের কাঞ্চন পেয়ারা স্বাদে গুণে ভরপুর। দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশের পাহাড়ে পাহাড়ে প্রতি বছর ব্যাপক পেয়ারার ফলন হয়। উৎপাদন পরবর্তী চলে বিক্রির মহোৎসব। উপজেলার জমির মালিক ও ভূমিহীন অনেক কৃষাণ-কৃষাণির মুখে মৌসুমে দেখা যায় হাসির আভা। আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে আসে এ সকল এলাকার পেয়ারা চাষীদের মাঝে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কাঞ্চননগর, লর্ট এলাহাবাদ, হাশিমপুর, জঙ্গল হাশিমপুর, জামিরজুরী, ধোপাছড়ি, পার্শ্ববতী পটিয়ার খরনা এলাকার পেয়ারা বাগানের গাছে গাছে প্রতি বছর জুন-জুলাই মাসে প্রচুর ফলন হয়। তাছাড়া বছরে বার মাসই কোন না কোন গাছে পেয়ারা উৎপাদন হয়ে থাকে। সে সাথে এ পাহাড়ি এলাকায় ব্যাপক লেবুর ফলনও হয়। প্রতিটি গাছে ঝুলে থাকা তোকাই তোকাই পেয়ারা পাহাড়কে ভিন্নরূপে সাজিয়ে রাখে। সবুজ পাতার ঢালগুলো যেন রঙিন পেয়ারার ভারে হেলে পড়ে। এসব এলাকার অসংখ্য মানুষ পেয়ারা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন প্রতি মৌসুমে। সে সাথে এলাকার বেকার যুব সমাজ পেয়ারা চাষে জড়িয়ে নিজেরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে অনেকে। এভাবে চলে প্রতি বছর তিন মাস। পেয়ারা চাষ সৌভাগ্যের যাদু লাগিয়ে দিয়ে যায় চন্দনাইশের প্রায় ২০ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকায়। কিছু বিপণন ও প্রক্রিয়াজাত করণের সমস্যার কারণে তথা কোল্ড ষ্টোরেজ না থাকায় উৎপাদিত পেয়ারার ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয় প্রতি বছর কৃষকেরা। এ ব্যাপারে তারা সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। চন্দনাইশের মত এত সুস্বাদু পেয়ারা বাংলাদেশের আর কোথাও উৎপাদন হয় না। কাঞ্চন পেয়ারা খুবই সুস্বাদু। বিশেষজ্ঞদের মতে এখানে একটি ফুড ফুডস ফিজারবেন প্ল্যান কমপ্লেক্স করা গেলে মাল্টিজুস এবং জেলি বিক্রির শিল্প কারখানা করা সম্ভব হবে। এতে করে ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা উপকৃত হবে। উপজেলার কাঞ্চননগর, হাশিমপুর, ছৈয়দাবাদ, লর্ট এলাহাবাদ, পূর্ব এলাহাবাদ, দোহাজারী, রায়জোয়ারা, লালুটিয়া, ধোপাছড়ির ৩০ কিলোমিটার এলাকায় ২০ হাজারেরও বেশি বাগানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পেয়ারা চাষ হয়। এছাড়া গেরস্থির বাড়ী ভিটা, চন্দনাইশের শঙ্খনদী, পটিয়ার শ্রীমাই, খরনা খালের দুই তীর ঘেঁষে ব্যাপক পেয়ারা উৎপাদন হয়। শ্রমিকেরা রাত ৩ টায় পেয়ারা সংগ্রহের জন্য পাহাড়ী বাগানে রওনা দেয়। দেড় থেকে ২ ঘন্টাকাল পেয়ারা সংগ্রহের পর কাঁদে পেয়ারার ভাড় নিয়ে প্রায় দেড় ঘন্টাকাল পায়ে হেঁটে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের এসে পেয়ারা বিক্রি করে। এ জন্য প্রতিজন শ্রমিক পারিশ্রমিক পায় ৫শ থেকে ৬শ টাকা। বর্তমানে প্রতি ভাড় পেয়ারার দাম ১২শ থেকে প্রকার বেধে ১৬শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। গুণগত মানে চন্দনাইশে ১৩ রকমের পেয়ারা উৎপাদিত হয়। তৎমধ্যে দুই ধরনের পেয়ারা খুবই পরিচিত এবং সুস্বাদু।
চন্দনাইশের কাজী পেয়ারা ও কাঞ্চন পেয়ারার সুনাম দেশব্যাপী। কাঞ্চন পেয়ারা সর্বোচ্চ ১ কেজি ও সর্বনি¤œ ২৫ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রকৃতিগত কারণে পেয়ারার স্বাদ সুমিষ্ট, ঘ্রাণ মহনীয়, দেখতে খুব সুন্দর। অনেকেই এ পেয়ারাগুলোকে দেশীয় আপেল বলে থাকে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী চন্দনাইশ উপজেলায় ১ হাজার, পটিয়ায় ১ হাজার ৪শ একর পাহাড়ি এলাকা ও সমতল ভূমিতে পেয়ারা চাষ হয়ে থাকে। বেসরকারিভাবে তা ৩ হাজার একরেরও বেশি। চন্দনাইশ ও পটিয়ায় ২০ হাজারের অধিক বাগান রয়েছে বলে চাষীরা জানান। এসব এলাকায় উৎপাদিত পেয়ারা বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট কোন জায়গা না থাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে রওশনহাট, বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল গেইট, বাদামতল, বাগিচাহাট, খানহাট রেলওয়ে ষ্টেশন, খরনা রাস্তার মাথা সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতি বছর আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে উৎপাদিত পেয়ারা। মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে পেয়ারার ফলনে বিভিন্ন সময়ে বিপর্যয় ঘটে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। সে কারণে বছরে ভেদে পেয়ারার দামও বেড়ে যায়। প্রতি মৌসুমে দৈনিক কয়েক হাজার ভার পেয়ারা চন্দনাইশের পাহাড়ি এলাকা থেকে এনে বিক্রয় করে থাকে কৃষকেরা। প্রতিদিন ফলমূলের সাথে পেয়ারা খাওয়ার অভ্যাসের পরামর্শ বিশেষজ্ঞ মহলের। চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, চন্দনাইশের কাঞ্চন পেয়ারার সুখ্যাতি সারা বিশ্বে। এ পেয়ারা এলাকার চাহিদা মিটিয়ে পুরো চট্টগ্রামের মানুষ পাচ্ছে। সরকারি ভাবে পেয়ারা সংরক্ষণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পদক্ষেপ গ্রহণ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রানী সরকার বলেছেন, এ এলাকার পেয়ারা খুবই সু-স্বাধু এবং পুষ্টিকর। তাই এ এলাকার পেয়ারার চাহিদা প্রচুর। চন্দনাইশের বিশাল পাহাড়ী এলাকা জুড়ে প্রতি বছর এ মৌসুমে প্রচুর পেয়ারা উৎপাদিত হয়। পেয়ারার জন্য প্রসেসিং সেন্টার থাকলে আমাদের পাহাড়ী এলাকায় চাষাবাদ আরও বৃদ্ধি পেত। সে সাথে পুরো পাহাড়ী এলাকা ফল বাগান হিসেবে ব্যবহার করা যেত।