‘বঙ্গবন্ধুর কথা বলায় জিয়ার আয়নাঘরে নির্মম নির্যাতনের শিকার মুক্তিযোদ্ধারা’

2

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারীদের নির্মম নির্যাতন ও হত্যা নিয়ে তথ্যচিত্র ‘জিয়ার আয়নাঘর’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৭৫ সালে গ্রেফতার হওয়া মুক্তিযোদ্ধারা বলেছেন, ৭৫ এর নভেম্বরে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখলের পর চট্টগ্রাম থেকে মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুস, এনামুল হক দানু, মৌলভি সৈয়দ, শিশির দত্ত, আবদুল গনি, এডভোকেট শ্যামা প্রসাদ সেন, মাহমুদুল হক, সৈয়দ জাকারিয়াসহ ৩৭জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের কোন মামলায় গ্রেফতার না দেখিয়ে দুই থেকে তিনমাস চট্টগ্রাম ও ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের গোপন টর্চার সেলে বন্দি করে নির্মম নির্যাতন করা হয়। গ্রেফতার হওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নির্যাতন করতে পাকিস্তান ফেরৎ সেনা অফিসারদের লেলিয়ে দেয়া হয়। তারা অসহায় গ্রেফতারকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও যুবকদের প্রসাবের রাস্তায় এবং নাভিমূলে সুই ঢুকিয়ে ইলেকট্রিক শক দিতো। দুই পা উল্টো করে ঝুলিয়ে গরম পাানির ড্রামে মাথা চুবিয়ে শ্বাস বন্ধ করে নির্যাতন করা হতো। সেই সাথে ইলেকট্রিক তার ও লাঠি দিয়ে নির্যাতন করা হতো। যে কারণে মুক্তিযোদ্ধা বেইস কমান্ডার মৌলভি সৈয়দ প্র¯্রাবের রাস্তায় রক্তক্ষরণে মৃত্যুবরণ করেন। শরীরে চিরদিন নির্যাতনের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুস, মাহমুদুল হক, সৈয়দ আবদুল গনি, জাকারিয়া ও আবু জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ মহসীন অনেকেই। শুধু তাই নয় এই সব মুক্তিযোদ্ধাকে দেশদ্রোহি ও সন্ত্রাসী সাজিয়ে অস্ত্র দিয়ে ১৯৭৭ সালে দেশের দেশের সকল পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
গত ২ ডিসেম্বর বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে চট্টগ্রাম ইতিহাস গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান সাংবাদিক আলীউর রহমানের সভাপতিত্বে ও লেখিকা দিলরুবা খানমের সঞ্চালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি আলী আব্বাস। বক্তব্য দেন নাট্যব্যক্তিত্ব সাংবাদিক প্রদীপ দেওয়ানজী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে নির্যাতিত চট্টগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার মোহাম্মদ ইউনুস, মুক্তিযোদ্ধা আবু জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ মহসীন, সৈয়দ জাকারিয়া, সৈয়দ মাহমুদল হক প্রমুখ।
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ক্ষমতায় স্বাদ গ্রহণকারী অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতা রাস্তায় নামেননি। চট্টগ্রামে একদল যুব নেতা দীর্ঘদিন গেরিলা যুদ্ধ করে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কেউ অস্ত্র ও অর্থ সাহায্য না করায় তাদের অনেককে পালিয়ে ভারতে চলে যেতে হয়। জিয়া ক্ষমতা গ্রহণের পর সকল রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগ করে বঙ্গবন্ধুর কথা উচ্চারণকারীদের সমূলে ধ্বংস করার জন্য আয়নাঘর সৃষ্টি করে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ও যুবকদের নির্যাতন ও হত্যা করেছেন। যা ইতিহাসের কলংকিত অধ্যায়। আমিও নিজেও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে মিছিল করায় দীর্ঘদিন পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে দীর্ঘদিন বাগানবাড়িতে লুকিয়ে ছিলাম। আজকে সবাই আওয়ামী লীগ নেতা। কিন্তু সেদিন আওয়ামী লীগ পরিচয় দেয়ার মতো মানুষ পাওয়া যায়নি।
উদ্বোধক আলী আব্বাস বলেছেন, ৭৫ এর ঘটনাপ্রবাহ আমি প্রত্যক্ষভাবে দেখেছি। আমার প্রতিবেশি সৈয়দ আবু সিদ্দিকের পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছে জিয়ার সামরিক সরকার। একই পরিবারের পিতা দুই পুত্রকে গ্রেফতার করে দীর্ঘদিন নিরুদ্দেশ করে নির্যাতন করেছেন। সেদিনের সঠিক ইতিহাস আজকের প্রজন্মকে জানানো আমাদের কর্তব্য।
নাট্যব্যক্তিত্ব প্রদীপ দেওয়ানজি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা যুদ্ধ করেছেন, তারাই বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত সৈনিক। তাদের ইতিহাস আমরা ভুলে গেছি। যেটা সত্যিই দুঃখজনক। অনুষ্ঠানের শেষে বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদ ও জিয়ার আয়নাঘর শীর্ষক তথ্যচিত্রের প্রথম পর্ব প্রদর্শন করা হয়। বিজ্ঞপ্তি