ফটিকছড়িতে দানের টাকায় হচ্ছে করোনা হাসপাতাল

100

করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। শহর থেকে দুরে থাকা মানুষের অসহায়ত্ব বাড়ছে। সংক্রমিতদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে এরই মধ্যে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে দানের টাকায় গড়ে উঠছে কোভিড-১৯ বিশেষায়িত হাসপাতাল। যা দেশে প্রথম এবং একমাত্র। ক্রমে এগিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালের কার্যক্রম। আশা করা যাচ্ছে আগামী ২৬ জুলাই এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। এ লক্ষে কাজ চলছে। উদ্যোক্তারা জানান, করোনাকাল শুরু হলে এলাকাবাসীর মনে তা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্ক বাড়ে। ফলশ্রূতিতে গত ৮ জুন স্থানীয় সাংসদ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এলাকাবাসীর দাবীর মুখে উপজেলা সদরের ২০ শয্যা হাসপাতালটিকে কোভিড-১৯ হাসপাতালে রূপান্তরে উদ্যোগ নেন। এর আগে সরকারের এই হাসপাতালটিতে আট বছর কোন জনবল ছিলনা। উদ্যোগের পরে হাসপাতাল পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সায়েদুল আরেফিনকে। তিনি স্থানীয়দের নিয়ে মতবিনিময় সভা করে অর্থ যোগানের বিষয়ে সবার সহায়তা চান। পরবর্তিতে শিশু থেকে বৃদ্ধ-আপামর জনগণ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আর্থিকভাবে সহায়তায় এগিয়ে আসেন। গত ২১ জুন স্থানীয়দের অর্থে অস্থায়ীভাবে হাসপাতালটি চালাতে স্বাস্থ্যবিভাগের অনুমোদন লাভ করে। গত ২৮ জুন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ এটি পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেন। এর পর থেকে অনেকে বিভিন্ন উপকরণ-যন্ত্রপাতি এবং কেউ আর্থিকভাবে সহায়তা করে বর্তমানে আপদকালীন ফান্ডে এক কোটি টাকা অর্থ যোগান দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ৭৫ লক্ষ টাকার মেডিকেল সরঞ্জামাদি অনুদান আসে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এটি চালু করতে প্রায় দেড় কোটি টাকা প্রয়োজন। এখানে থাকবে সেন্ট্রাল এসি। থাকবে অক্সিজেন সমৃদ্ধ অত্যাধুনিক কেবিন। থাকবে আইসোলেশন সেন্টার। সর্বত্র প্রচারের জন্য গঠন করা হয় ১৫০ সদস্য বিশিষ্ট একটি দল। যার নেতৃত্বে রয়েছেন প্রবাসী সাংবাদিক মীর মাহফুজ আনাম। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সংবাদপত্র ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাসপাতালের বিষয়ে এলাকাবাসীকে উদ্বুদ্ধ করে প্রচার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ফলে প্রতিদিনই দানের টাকা আসছে।’ স্থানীয় সাংসদ থেকে শুরু করে দানশীল ব্যক্তি, বিভিন্ন সংগঠন এবং সংস্থা হাসপাতালটি গড়তে তাদের দানের টাকা প্রদান অব্যাহত রেখেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা মুহাম্মদ জাকারিয়া সিকদার বলেন, ‘আমাদের দানে এটি গড়ে উঠছে। এটি আমাদের জন্য বিশেষ মাইলফলক। সাড়ে ছয় লাখ লোকের এ উপজেলার কোন রোগী যাতে বিনা চিকিৎসায় মারা না যায় সে জন্য সবাই একাট্টা হয়েছি। দেশের কোথাও এ ধরনের হাসপাতাল গড়ে তোলার নজির আছে বলে মনে হয়না।’ হাসপাতালটি গড়তে শিশুরাও তাদের ঈদের জমানো টাকা এবং টিউশনির টাকা দিয়ে দান করছেন। তাদের দেখা দেখিতে এলাকার শত শত শিক্ষার্থীও এগিয়ে আসেন। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসফিয়া জারিন বলে, ‘আমার গত ঈদে জমানো এক হাজার ৩২০ টাকা কোভিড-১৯ হাসপাতাল গড়তে সেখানে দান করেছি। আমি চাই কেউ যাতে করোনার এই দিনে বিনা চিকিৎসায় না মরে।’ হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। তারা এটির দেখভাল করবে। কমিটির প্রধান করা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা (ইউএইচও) নাবিল চৌধুরীকে।
তিনি বলেন, ‘দেশে দানের টাকায় ৩০ শয্যা বিশিষ্ট প্রথম এবং কোভিড-১৯ হাসপাতাল এটি একমাত্র। লোকজন এটি গড়ে তুলতে অর্থ দিয়ে সহায়তা করছেন। আশা করছি এটি একটি মডেল হবে।’ কমিটির সদস্য সচিব ডা. জয়নাল আবেদিন মুহুরী বলেন, ‘চিকিৎসা দিতে থাকবে ৬ জন ডাক্তার, ১৫ জন নার্স ও সহায়তায় থাকবেন ২০ জনের সেচ্চাসেবক দল। ইতিমধ্যে চিকিৎসক, নার্স-স্বেচ্ছসেবকদের জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালটির দেয়ালে চুনকাম শেষ হয়েছে। সেখানে ব্যবহারের কিছু যন্ত্রপাতি এনে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন কক্ষে সরঞ্জামাদি লাগানো হচ্ছে। ডেকোরেশনের কাজও প্রায় শেষের দিকে। ফটিকছড়ি পৌরসভার মেয়র মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘কোভিড হাসপাতালে এলাকার লোকজন সহায়তায় ঝাপিয়ে পড়েছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আমাদের স্বপ্ন সত্যি হবে ইনশাল্লাহ।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সায়েদুল আরেফিন বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন অত্যন্ত মানবিক। শুরু থেকে তারা যেভাবে এটি গড়ে তুলতে জাগরণ সৃষ্টি করেছে আমার মনে হয়না দেশের কোথাও এরকম আছে। ডাক্তার-কর্মচারীদের প্রতিমাসে ৩৫ লক্ষ টাকা আর্থিক যোগান দানের টাকায় দেয়া হবে।’ সাংসদ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ‘কোন মানুষ যাতে করোনায় বিনা চিকিৎসায় মারা না যায় সেজন্য এই উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা করোনাকালে মানবিক ফটিকছড়ি গড়তে বদ্ধপরিকর।’