প্রতিদিনের অভিযানেও মানানো যাচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব

148

করোনা ভাইরাস এর মহামারি প্রতিরোধে সরকারি নিদের্শনা অনুযায়ী হাটহাজারীতে চলছে লকডাউনের অষ্টম দিন। তাই, কাজ নেই বলে ঘরে বসেও থাকছেন না গ্রামীণ জনপদের মানুষগুলো। চা-দোকানে, দোকানপাটের সামনে দলবেঁধে আড্ডায় মেতে আছেন তারা। আড্ডার আলোচ্য বিষয়ও করোনাভাইরাস। অনেকেই একসঙ্গে বসে দেখছেন টেলিভিশন। যেখানে ঘণ্টায় ঘণ্টায় প্রচার করা হচ্ছে করোনার সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরুত্ব বজায় নিশ্চিত করার জন্য। অথচ শুনছেনই না গ্রামের কৃষক-শ্রমিক ও সাধারণ মানুষেরা। জানা গেছে, হাটহাজারী পৌরসভার আব্বাছিয়ার পুল, মাটিয়া মসজিদ, মেডিকেল গেইট, মিরের হাট, মুন্সির মসজিদ, আলীপুর, রঙ্গিপাড়া, মেখল রোড়, উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের নূর আলী মিয়ার হাট, নাজির হাট বাজার, আবদুল জাব্বার হাট, ধলই ইউনিয়নের কাটিরহাট বাজার, এনায়েতপুর বাজার, শান্তির হাট, মন্দাকিনী বাজার, উদালিয়া, বশিরহাট, মির্জাপুর ইউনিয়নের সরকার হাট, চারিয়া নয়াহাট বাজার, বাকর আলী চৌধুরী হাট, জুইগ্যা হাট, বুড়ি পুকুর পাড়, মুহুরী হাট বাজার, নাঙ্গলমোড়া ইউনিয়নের নাঙ্গলমোড়া বাজার, ইব্রাহিম মার্কেট, বাইতুল ফালাহ, চাইল্লা তলি, নাখখালি স্কুল, মাদ্রাসা গেইট, গুমানমর্দ্দন ইউনিয়নের জিলানী হাট, কানাইয়া হাট, ছিপাতলী ইউনিয়নের বোয়ালিয়া মুখ বাজার, ঈদগাঁ স্কুল, আলী মোহাম্মদ ঘাটা, লাল মোহাম্মদ ব্রিজ, ছিপাতলী মাদ্রাসার সামনে, কাজীর খিল মেখল ইউনিয়নের ইছাপুর বাজার, হুজুরের বাড়ি, ফকির হাট বাজার, গড়দুয়ারা ইউনিয়নের লোহারপুল বাজার, কামদর আলী চৌধুরী হাট, শহীদুল্লাহ একাডেমীর সামনে, ইসলামী হাট, ফতেপুর চবি ১নং ও ২নং গেইট, নন্দীর হাট, ইসলামিয়া হাট, আলাওল দিঘির পাড়, মদন হাট, চবি ১নং রেল ক্রসিং, চিকনদÐী ইউনিয়নের চৌধুরী হাট, নন্দীর হাট, ফতেয়াবাদ, বড়দীঘির পাড়, যুগির হাট, আমান বাজার, লালিয়ার হাট বাজার, নজুমিয়া হাট, উত্তর মাদার্শ ইউনিয়নের রামদাশ মুন্সীর হাট, বদিউল আলম হাট, ছৈয়দ আহমদ হাট, মাহলুমা বাজার, মো. সাবের পুল, দক্ষিণ মার্দাশা ইউনিয়নের সমিতির হাট, মদুনাঘাট, মাদারীপুল, শিকারপুর ইউিনিয়নের নজুমিয়া হাট, বুড়িশ্চর ইউনিয়নের বুড়িশ্চর বাজার, আবদুল খালেক হাট, রাজার হাটগুলোতে এলাকার মানুষ কারণ ছাড়াই ঘরের বাইরে বের হয়ে জটলা পাকিয়ে বসে থাকে। শুধু তাই নয়, প্রশাসনের প্রতিদিনের সকাল-সন্ধ্যার অভিযানেও গ্রামীণ জনপদের এসব মানুষগুলোকে কোনভাবে সচেতন করা যাচ্ছে না। এরা হাট-বাজারে গাদাগাদি করে কেনাকাটায় ব্যস্ত রয়েছে। এসব হাট বা বাজারে মানুষগুলোর বেশিরভাগ মাস্কও ব্যবহার করছেন না। রিকশা বা সিএনজি অটোরিক্সায় করে একাধিক মানুষ চলাচল করছেন। কাটিরহাট বাজার এলাকার একটি দোকানে আড্ডারত মো. সোলায়মান নামে পঞ্চাশোর্ধ এক ব্যক্তি বলেন, ঘরে আর কতক্ষণ বসে থাকবো। গ্রামের মোড়ের দোকানে বসে দেশের একটু খবরা-খবর নিচ্ছি। শুধু তাই নয়, হাটে-বাজারে বা গ্রামের কারো সাথে কোন ইস্যুতে ঝগড়া-বিবাদ হলেই গ্রামের অসচেতন কিশোর-তরুণেরা দলবেঁধে সেখানে ছুটছেন। খালি মাঠে প্রশাসনের লোকদের ফাঁকি দিয়ে খেলছে ফুটবল-ক্রিকেটসহ নানা ধরণের খেলাধুলা। সেক্ষেত্রে কোনো দূরুত্ব বজায় রাখা বা মাস্ক ব্যবহারও করছেন না তারা। জানতে চাইলে হাটহাজারী প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক কেশব কুমার বড়ুয়া বলেন, পল্লী অঞ্চলের মানুষ এখনো এতটা সচেতন হয়নি। তাদের বোঝালেও বুঝতে চায় না। প্রশাসনের লোকজন সার্বক্ষণিক গ্রামীণ জনপদের মানুষগুলোকে বোঝাচ্ছে। করোনা থেকে বাঁচার জন্য সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। তারপরও মানুষ শুনছে না। গ্রামের মানুষ এসব কিছু গুরুত্ব দিচ্ছে না। হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাসুদ আলম বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সাথে আমরা ব্যাপকভাবে গ্রাম পর্যায়ে প্রচারণা চালাচ্ছি। কিছু গ্রামীণ জনপদের মানুষগুলো সেটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে আবার অনেকেই কিছু মনেই করছে না। এসব মানুষগুলোকে ঘরে ফেরাতে ও হোম কোয়ারেন্টাইন মানতে এবং প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হতে প্রতিদিন বলে যাচ্ছি। তবুও গ্রামীণ জনপদের মানুষগুলো নানা অজুহাত তৈরি করে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসছে। তবে আমরা আশাহত হচ্ছি না। যতক্ষণ ঘরে ফিরছে না ততক্ষণ আমরা মাঠে আছি এবং আমাদের প্রচারণা অব্যাহত থাকবে এসব মানুষগুলোকে ঘরে ফেরাতে। এ ব্যাপারে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত মানুষকে সচেতন করার জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। উপজেলার হাটবাজারগুলো খোলাস্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির হাট চললেও দূরুত্ব বজায় রেখে ও মাস্ক পড়ে কেনা বেচা করার জন্য বলা হয়েছে। এসব বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য তৃণমূল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, এতকিছুর পরও মানুষ তা মানছে না। লকডাউন কার্যকর করতে উপজেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিদিনের মত গত সোমবার (২৭এপ্রিল) সকালে আমি নিজেই বাজার মণিটরিং করতে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ইছাপুর বাজার এবং হাটহাজারী পৌরসভার বিভিন্ন পাইকারি দোকানে দ্রব্যমূল্যের তালিকা না রাখায় এবং অতিরিক্ত দামে আদাসহ পণ্য বিক্রির দায়ে ৬ দোকানিকে ১১হাজার টাকা এবং বিকালে উপজেলার চৌধুরীহাট, নন্দীরহাট, ফতেয়াবাদ, পৌরসভা এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরীফ উল্যাহ সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় ৫ ব্যক্তিকে ৭ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ সময় অভিযানের সহযোগিতা করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।