পাহাড়ে সবুজ মাল্টায় স্বপ্ন বুনছেন বসুদেব চাকমা

22

পাহাড়ের উপজাতি নাম বসুদেব চাকমা। বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। বসবাস করেন রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের ঝগড়াবিল এলাকায়। জীবনের অনেক কাঠ-গড় পুড়িয়েছেন সংসারের চাকা ঘুরাতে। পেটের দায় মেটানোর জন্য নৌকাযোগে মানুষ পারাপারা, নদীতে মাছ ধরা এবং সর্বশেষ মাছ বিক্রি করে জীবন পার করেছেন প্রায় ৩৫টি বছর। কিন্তু সংসারের ভাগ্যর কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি। আয়-রোজগার ভাল না থাকায় ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাতে পারেনি। তার সন্তানরাও সকলে সংসারের ঘানি টানতে কাজে যুক্ত আছেন। বসুদেবের চোখে নানান স্বপ্ন। ছেলে-মেয়েদের জন্য কিছু একটা করতে হবে। মেয়ের বিয়ে, ছোট ছেলেকে ভাল স্কুলে লেখাপড়া করানো চিন্তার ভাঁজ কপালে উঠেছে।
এ নিয়ে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে নিয়েও একাধিকবার আলোচনা করেছেন কিভাবে সংসারের জন্য ভাল আয়ের পথ খুঁজে পাওয়া যায়। হঠাৎ তার প্রিয়তমা স্ত্রী কথায় কথায় বসুদেবকে বলে বসলেন আমরা যে জায়গায় থাকি সেখানে তো মাল্টা চাষ করা যায়। তাহলে আয়ের আরেকটি পথ বের হবে। বসুদেব স্ত্রীর কথা মতোন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে যোগাযোগ করলো। আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও তার উপর সহায় হলো। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাসুদেব বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণের সহায়তা তার তিন একর পাহাড়ি জমিতে সাড়ে পাঁচশো সবুজ মাল্টা গাছ লাগিয়েছেন। বর্তমানে একশোটি গাছে ফল এসেছে।
আশ্বিন মাসের মধ্যে তার গাছের ফল বাজারে বিক্রি করার উপযোগী হবে। তিনি শুধু মাল্টা গাছ লাগিয়ে বসে থাকেননি। তার এ জমিতে তিনি পাহাড়ি হলুদ, আদা, উন্নত বারী জাতের ধান (জুমের ধান), কচু, পাহাড়ি মরিচ, ঘষিয়া, কলাগাছ, পাহাড়ি আলুসহ নানাপদের চাষ শুরু করেছেন। এছাড়াও তার বাগানে রয়েছে আ¤্রপালি, রাঙ্গু জাতের প্রায় তিনশটি আম গাছ। চলতি বছরে তিনি পঞ্চাশ হাজার টাকার আম বিক্রি করেছেন। এবার সেই ভাগ্যর চাকা ঘুরানো ব্যক্তি বাসুদেব চাকমা বলেন, জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। কিছুতের সংসারের উন্নতি করতে পারছি না। পরিবার নিয়ে অভাব-অনটন নিয়ে দিন পার করেছি। আমার স্ত্রীর পরামর্শে খালি জমিতে মাল্টার চাষ করি। বসুদেব আরোও বলেন, তিন বছর আগে গড়ে তোলা আমার বাগান আজ কয়েক লাখ টাকার সম্পদে পরিণত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তার ভাগ্যর চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছেন বলে বারবার বলে যাচ্ছেন। বসুদেব জানান, এ বছর ত্রিশ-চল্লিশ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করতো পারবো। এর আগে পঞ্চাশ হাজার টাকার আমও বিক্রি করেছেন। তিনি আরও জানান, আমার বাগানে বর্তমানে পাহাড়ি হলুদ, ধান, আদা, কলা, পাহাড়ি আলু, মরিচ, কচু, ঘষিয়ার চাষ করা হয়েছে। এইসব ফসল থেকে বছর শেষে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার আয় হতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন। বাসুদেব বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ শুধু চারা দিয়ে সহযোগিতা করেনি। কীটনাশক, কম্পোজ সার, কৃষি যন্ত্রপাতি এবং নগদ অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাঙামাটি অঞ্চলের উপ-পরিচালক পবন কুমার চাকমা বলেন, বাংলাদেশ কৃষি অঞ্চল। বর্তমানে এদেশের আশিরভাগ মানুষ এখনো প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাই সরকার কৃষির উন্নয়নে আন্তরিকতার কমতি রাখছে না। পবন কুমার চাকমা আরোও বলেন, কোন জায়গা খালি থাকবে না। যার জায়গা খালি আছে কৃষি বিভাগ জায়গার মালিক খুঁঁজে তাদের চাষাবাদের জন্য পরামর্শ প্রদান করছে। বীজ, চারা, কীটনাশক এবং নগদ অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ত­রের উপ-পরিচালক পবন কুমার চাকমা জানান, বাসুদেব তিন বছর আগে আমাদের অফিসে এসেছিলো। পরামর্শ চেয়েছে চাষাবাদ করবে। এরপর আমাদের কৃষির লোকজন তাকে সহযোগিতা করেছে। বর্তমানে তার সুখের দিন দেখে আমারও ভাল লাগছে।